• বরিশাল বিভাগ

    মির্জাগঞ্জে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় সংবাদ সম্মেলন

      প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ৪:৪৫:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু,হেলাল আহম্মেদ রিপন-পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ

    পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার সুদী আল আমিনের বিরুদ্ধে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১২ টার সময় পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের মিলনায়তন এ সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীসহ তাদের পরিবার। এসময় মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব, ভুক্তভোগী গ্রাহক নাসির সিকদার ও বাদল সিকদারসহ বিভিন্ন পরিবারের নারী সদস্যরাসহ পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

    ঘটনার বরাত দিয়ে তারা বলেন, গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার নামে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প নেয় সমিতির সভাপতি আল আমিন। পরে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করা হলেও, তা ফেরত না দিয়ে, সেই ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দিয়ে কয়েকটি পরিবারকে বাড়িঘড় ও এলাকা ছাড়া করেছেন ভিক্টিম আলআমিন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ গোটা এলাকাবাসী।এদিকে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, নিয়ম বর্হিভূত ঋণ বিতরণ ও আদায়ে উচ্চ সুদ গ্রহণ ও সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করাসহ মিথ্যা মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার।

    সমিতির সভাপতি আল-আমীন সমবায় নীতিনালা মেনে সমিতি পরিচালনা করছে। ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নীতিমালা বর্হিভূত ঋণ বিতরণ করেন। যার নিবন্ধন নম্বর-৯০/পিডি। এব্যপারে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব
    বলেন, আল আমিন ইউপি সদস্য। সে কাউকে সম্মান করে না। হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।এছাড়াও এক প্রতিবন্ধী তার সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মারা গেছে। তারপরও সে তা মাফ করেনি। উল্টো তার ছেলেকে চাপ দিয়ে জায়গা জমি ও বউয়ের সোনার গহনা বিক্রি করে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েও ক্ষমা পায়নি। আরও এল লক্ষ টাকা দাবী করেছে প্রতিবন্ধীর বউয়ের কাছে।

    এদিকে অন্যএক ভূক্তভোগি বাদল সিকদার জানান, আমি মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের একজন পূরোনো সদস্য। আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সমিতির কাছ থেকে ছয় লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি। এই লোন নিতে সমিতির সভাপতি আল আমিন আমার কাছ থেকে স্বাক্ষরিত তিনটি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও তিনটি স্ট্যাপ গচ্ছতি রাখে এবং বলে লোন পরিশোধ হলে চেক এবং স্ট্যাপ ফেরত দিবে। আমি ছয় লক্ষ টাকার প্রতি মাসে বার হাজার টাকা করে সুদসহ জমা দিয়ে এবং ১৪ মাসে লোনের টাকা পরিশোধ করে দেই। লোন পরিশোধ হওয়ার পরে সমিতির কাছে গচ্ছিত রাখা আমার ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প দেব দেব বলে ফেরত দেয়নি সভাপতি ।

    পরে আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কেও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আল আমিন তার ভায়রা ভাই বেল্লালকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার কওে সাড়ে বিশ লক্ষ টাকার মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অরেন্ট ইস্যু করছে। এখন আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আরেক ভূক্তভোগি নাসির জানান, সে সমিতির একজন সদস্য। সমিতির কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা লোন গ্রহণ করেন তিনি এবং গ্রান্টার হিসেবে তার স্বাক্ষরকরা তিনিটি ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাপ ও আমার ছেলে কাওসারের স্বাক্ষরিত জনতা ব্যাকের তিন পাতা চেক দেই সমিতির সভাপতি আল আমিনের কাছে। লোন পারিশোধের কার্যক্রম চলমান অবস্থায় আমার ছেলের সাথে আল আমিনের দ্বন্দ হওয়ায়,

    আল আমিন তার শাশুড়ীকে দিয়ে সমিতিতে তার ঐ গচ্ছিত স্ট্যাপ দিয়ে জমি বিক্রয়ের টাকা নেওয়ার কথা বলে একটি মামলা দায়ের করান। আমার ছেলের স্বাক্ষরিত কাওসারের জনতা ব্যাকের চেক ডিজ অনার করে আমার ছেলের নামে মামলা করার পায়তারা চালাচ্ছে। এ বিষয় শ্যামল চন্দ্র বলেন, আমিও লোন নিয়ে স্ট্যাপ দিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মামলা করে অরেন্ট করিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে এই আলামিন। সমিতি থেকে লোন গ্রহিতা মামুন জানান, আমি মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেডেরকাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি। আমিও সমিতির কাছে তিনটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছি। কিন্তু এখন আমার ভয় করছে আমার নামে আবার মামলা দিয়ে দেয় কিনা।

    সমিতির সভাপতি আল আমিন ইউপি সদস্যর মুঠোফোন( ০১৭১২-২৩৫৫৯৩) ফোন করলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আল আমিন জানায়, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভূয়া। আমার সমিতিতে চাকরি করতো, সমিতির টাকা তসরুপ করে ধরা পরার পরে চেক দিয়েছেন। সে চেক ডিজঅর্নার হয়ে মামলা হয়েছে। সেজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে এহন আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করছে,আমার কাছে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমান আছে, কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি ব্যস্ত আপনার সাথে সাক্ষাৎ কথা বলবো।
    মির্জাগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম এর কাছে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানান, এই সমতির সভাপতি আল আমিনের বিরুদ্ধে চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে জালিয়াতি করার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

    এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা সমবায় কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার চন্দ এর সাথে কথা বললে, তিনি জানায় প্রতিটি সমিতিরই নিয়ম কানুন আছে। সমিতির সদস্যদের জমা টাকার আশি পারসেন্ট পরিমান টাকা লোন গ্রহণ করতে পারবে। কোন সমিতি যদি অনিয়ম করে তাহলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড যদি কোন অনিয়ম করে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ইতিমধ্যে রয়েছে ১৫৯টি সমবায় সমিতি। ২ নং মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ানে রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি সমিতি এ সকল সমিতি গ্রামের দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের ঠকিয়ে কিছু কিছু লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবে এমনটাই আশা করছেন অত্র ইউনিয়নের ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ