• বরিশাল বিভাগ

    ৭০ বছর বয়সেও তিলের খাজা বিক্রি করে সংসার চালান বরিশালের রাজ্জাক

      প্রতিনিধি ১৩ অক্টোবর ২০২৩ , ১২:৫৬:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    তাহমিদ ফেরদাউস-পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি:

    তিলের খাজা কি যে মজা! তিলের খাজা কারো কারো জীবনে শুধু মজাই নয় জীবন বাঁচাতে একমাত্র ভরসা এখন তিলের খাজা। পরিবারের চার সদস্যের ভার এখনো ৭০ বছর বয়সী আব্দুর রাজ্জাকের উপর। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের শাপলাখালি গ্রামের মৃত হাছন কারিগরের পুত্র আব্দুর রাজ্জাক তিলের খাজা ও ভুট্টার বানানো পপকর্ণ বিক্রি করেই সংসার চালান। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপথে কখনো বা হাটবাজারে ঘন্টা বাজিয়ে তিলের খাজার বাক্স মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তিলের খাজা বিক্রি করতে।

    জীবনের শেষ প্রান্তে বয়স ভর করেছে শরীরে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রকম রোগ। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত কষ্ট হলেও বাদ দিতে পারেন না এভাবে ঘুরে ঘুরে খাজা বিক্রি। বয়স ৭০ বছর হলেও পাননি এখনো ভয়স্কভাতার কোনো কার্ড। পিতা মৃত্যুর পর ১৫ বছর বয়স থেকেই সংসারের হাল ধরেন তিনি। তার বাবাও ছিলেন দরিদ্র কৃষক। মাথার উপরের ছাতাটা যখন চলে গেল কিশোর বয়সে নতুন কিছু চিন্তা করার অবকাশ ছিল না। লেখাপড়া তো দূরের কথা দুমুঠো ভাতের জন্যই প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে।

    এখন সারাদিন এসব খাবার বিক্রি করে তার ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হলে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর এই আয় দিয়েই চলে তার সংসার। তার সংসারের রয়েছে স্ত্রী ও ২ মেয়ে। দুই ছেলে ঢাকাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের সংসার চালায় বৃদ্ধ পিতার খবর রাখে না সন্তানেরা। এভাবে কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া করালেও কোনকালেই যেন সুখ জোটেনি রাজ্জাকের কপালে। নিজের কোন কৃষি জমি নেই। গৃহহীন রাজ্জাক স্ত্রী মমতাজ বিবি ও সন্তান নিয়ে এখন বসবাস করছেন একটি ঝুপড়ির ঘরে। এখন বর্ষা মৌসুমের চরম দুর্ভোগে কাটছে তার দিনরাত। একটু বৃষ্টি হলেই ঝুপড়ি ঘরে মাথার উপরের চালা থেকে ঝর ঝর করে পরে বৃষ্টির পানি।

    বৃদ্ধ রাজ্জাক বলেন, আমি তিলের খাজা ক্রায় করে বিক্রি করি ও আমার স্ত্রী মিলে ভুট্টা ভেজে পপ্পন তৈরি করে থাকি। অভাবের সংসার একদিন তিলের খাজা বিক্রি করতে না পারলে সেই দিন না খেয়েই থাকতে হয়। সারাদিন হেঁটে হেঁটে খাজা বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হয়। এখন আর সংসার চলে না। ঘর আর তৈরি করব কিভাবে। শুনেছি মা শেখ হাসিনা নাকি গরিবদের ঘর দেয়। বাবা আপনারা যদি পারেন মোর জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা কইরা দিয়েন। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুবারে ঘুরেছি কেউ কখনো সরকারি সহায়তা দেয়নি। এখন পর্যন্ত একটা চাউলের কার্ডও পাই নাই।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, খোঁজখবর নিয়ে সরকারিভাবে যতটুকু সহায়তা করা যায় সে ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করবো।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ