• কৃষি

    তানোরে কৃষকের জমি নিয়ে অপারেটরদের রাম রাজত্ব

      প্রতিনিধি ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ১০:২৩:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো: মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি

    জমি কৃষকের হলেও রাম রাজত্ব করছেন গভীর নলকূপ অপারেটরেরা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। এরাম রাজত্ব চলে আলু মৌসুমে। সিংহভাগ কৃষকের জমি লীজ দেন অপারেটরেরা। অধিক টাকায় লীজ দিলেও যত সামান্য টাকা কৃষকদের দেয়া হয়। এমন ঘটনা ঘটে রয়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা জুড়েই। বছরের পর বছর ধরে বিএমডিএ ও অপারেটরেরা কৃষকের জমি লীজ নিয়ে রাম রাজত্ব করে আসলেও কোন প্রতিকার নেই।

    উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে আলু রোপনের কাজ। বহিরাগত আলু চাষীরা প্রজেক্ট করে থাকেন উপজেলায়। তারা কৃষকের কাছ থেকে জমি লীজ না নিয়ে সরাসরি গভীর নলকূপ অপারেটর দের কাছ থেকে লীজ নিয়ে থাকেন। এমনকি কোন প্রান্তিক কৃষক দু চার বিঘা আলু চাষ করতে চাইলেও পারেন না। আবার জমির মালিক হয়েও জানেনা কাকে লীজ দেয়া হয়েছে, কত টাকায় লীজ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গভীর নলকূপে এমন ভয়াবহ চিত্র। ফলে এসব নিয়ে বিএমডিএ ও প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করলেই অপারেটরদের রাম রাজত্ব ধরা পড়বে বলে মনে করেন কৃষকরা।

    জানা গেছে, কয়েক জেলার মধ্যে এউপজেলায় আলু চাষ হয় সব চাইতে বেশি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি চাষীরা প্রজেক্ট করে থাকেন। এমৌসুমে জমির লীজ বেড়ে প্রকার ভেদে এক বিঘা ২০ হাজার, ১৮ হাজার ও ১৫/১৬ হাজার টাকায় লীজ হয়েছে। উপজেলায় সেচ যন্ত্র বা গভীর নলকূপ রয়েছে বিএমডিএর আওতায় ৫৩৬ টি ও ব্যক্তি মালিকানা ১৬ টি, মোট ৫৫২ টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমি। অগভীর বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্র রয়েছে ৪১১ টি।

    সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় আলুর চাষ হয় নিম্মে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর থেকে উর্ধ্বে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। সিংহভাগ জমিতে বহিরাগতরা প্রজেক্ট হিসেবে চাষ করে থাকেন। এক একটি গভীর নলকূপের আওতায় ২০০ বিঘা থেকে ৩০০ বিঘার প্রজেক্ট করে থাকেন।কৃষকরা জানান, গভীর নলকূপ হয়েছে কৃষকের জন্য। সেই গভীর নলকূপ নিয়ে রাজনীতির শেষ থাকেনা। অপারেটর হতে নিম্মে ৫০ হাজার টাকা থেকে উর্ধ্বে ৭০/৮০ হাজার টাকা এমনকি স্কীম বড় হলে ১ লাখ টাকা দিয়েও অপারেটর হয়েছে । অপারেটর হওয়ার পর তাদের দাপটের শেষ থাকেনা।

    যেই গভীর নলকূপ চাষাবাদের জন্য সেই নলকূপ নিয়ে রাহাজানীর শেষ নেই। তবে যে সব গভীর নলকূপ সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয় সে সবে কিছুটা হলেও সেচ হার কম নেয়। কিন্তু আলুর প্রজেক্ট করতে জমি লীজ দেয় অপারেটর। তারা প্রজেক্ট করা ব্যক্তির সাথে কৃষকের নামে লীজ নামা তৈরি করলেও কৃষকরা কিছুই জানেনা।চলতি মৌসুমে আলুর জমি লীজ হয়েছে নিম্মে ১৬ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ২০/২২ হাজার টাকা করে। অথচ কৃষক রা এসব নিয়ে কোন কথা বললেই সে আর চাষাবাদ করতে পারবে না।

    উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকের সাথে কথা বলা হলে নাম প্রকাশ না করে অনেকে বলেন, একটি গভীর নলকূপে ২০০ বিঘা কিংবা ১০০ বিঘা জমিতে আলুর প্রজেক্ট করা হলে এবং প্রতি বিঘায় যদি ১৮ হাজার টাকা করে লীজ হয়, আর কৃষককে যদি ১২ হাজার টাকা দেয়া হয়। তাহলে প্রতি বিঘায় ৬ হাজার টাকা করে অপারেটরের পকেটে ঢুকছে। তাহলে ১০০ বিঘার বিপরীতে ৬ লাখ টাকা অপারেটরের পকেটে যাচ্ছে।অবশ্য যে গভীর নলকূপে ২০০ বিঘা কিংবা তার বেশি জমি থাকে ওই সবে বেশি পরিমাণ প্রজেক্ট হয়। প্রতি আলু মৌসুমে ১০০ বিঘার বিপরীতে যদি ৬ লাখ টাকা আসে তাহলে কেন লাখ টাকা খরচ করে অপারেটর হবে না। দীর্ঘ দিন ধরে বিএমডিএর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সবাই সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত করার নির্দেশনা দিলেও উপজেলা বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী একেবারেই নিরব।বিএমডিএর বেশকিছু কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, এতদিন সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম থাকলে প্রায় গভীর নলকূপ গুলো সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হত। তিনি সমিতি করার জন্য কঠোর ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পর থেকে সবকিছু থমকে গেছে। গভীর নলকূপ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের। বরং কোন কৃষক তার সাথে কথা বলতে এলেও খারাপ আচরণ করে থাকেন। যেখানে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ সমিতির মাধ্যমে সেচ পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিলেও বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান কর্নপাত করেন না। তিনি নিজের খেয়াল খুশিমত সবকিছু করে থাকেন।
    এসব নিয়ে সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের সাথে কথা বলা হলে তিনি অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে বলেন, জমি লীজ কিভাবে হবে এসব আমার দেখার বিষয় না।তারপরও কোন কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
    মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন
    ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ