• খুলনা বিভাগ

    লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দির পরিদর্শন করেন-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা

      প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২২ , ৪:৪০:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে সেখানে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা সেখানে উপস্থিত।

    পরে তারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিন্তে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন। পাশাপাশি তারা সাহাপাড়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

    এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, এটা গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে সব সম্প্রদায় ও সব মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করবে, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে গড়ে তুলবে। আমরা সেই কাজেই নিয়োজিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেই পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আছি। সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, আজ চোরের মতো মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে একটি সংখ্যালঘু পাড়াকে এভাবে ভাঙচুর করে যারা পালিয়ে গেছে, এরা পরাজিত ছিল এবং পরাজিত থাকবে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করবে, এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার।

    ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, আপানার জানেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশটাকে স্বাধীন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের সংবিধান রচয়িতা করেন, সেই সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে এ দেশটা অসাম্প্রদায়িক দেশ, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আপনারা এটাও জানেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না। সে সময় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে অপশক্তিরা।

    তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য দেশের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমারা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

    অসীম কুমার উকিল বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই এলাকা। ইতোপূর্বে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি এখানে। কিন্তু কদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব ঘটানো হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না, স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এই মাটি হলো আমাদের গর্বের, অহংকারের। যে মাটিতে মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো পৃথিবী-সমাদৃত একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে। এই হামলা মাশরাফির ওপর হামলা, দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের ওপর হামলা।

    এ সময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ভীতি দূর করার জন্যই সিনিয়র নেতারা এখানে এসেছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এলাকাবাসীকে আমি অনুরোধ করব, আপনার স্বাভাবিকভাবে বসবাস করেন। এই নড়াইল শহর আপনাদের, লোহাগড়া দিঘলিয়া আপনাদের। আমি একটি জিনিসই সব সময় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি, আপনাদের ভয়ের কিছু নাই। ১০ মিনিটের একটা দুর্বৃত্তায়নের কারণে ভয়ের কিছু নাই। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি এবং শেষ পর্যন্ত পাশে থাকব। প্রশাসনের কাছে দাবি, সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক, তবে নির্দোষ কাউকে নয়।

    জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা, ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২০ বান্ডিল ঢেউটিন পাঠিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রাশাসন থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়িঘর ও মন্দিরের মেরামতকাজ চলছে। আশা করি এই ক্ষত শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আসবে।

    এ সময় আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিক গোবিন্দ সাহার মা বলেন, আমাগে বাড়ির আগুন নেভানোর জন্য প্রতিবেশী মুসলমান পরিবার সবার আগে আইছে। আমাগের পাশে থাইকে মুসলমানরা সব সময় সাহস দেচ্ছে। আমাগে এখন আর কোনো ভয় নাই কারণ সগলে আমাদের পাশে আছে। আমাগে এমপি মাশরাফি ফোন কইরে সেদিন আমাগে সাথে কথা কইছে, দেখতি আইছে, টাকা দেছে, ঘর ঠিক করে দেচ্ছে। সে কইছে, আমাগে সব দেবে। চেয়ারম্যন-মেম্বার সব সময় আমাগে খোঁজ নেয়।

    হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে এসেছেন। সরকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নেতারা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সবাই পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন তাদের মনোবলকে চাঙা করার জন্য। প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করছে। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আমারও অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করব, যা তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ