• শিক্ষা

    সাত কলেজে রেজাল্ট বিপর্যয়ের কারণে ছেলেমেয়েদের মানসিক অস্থিতিশীলতা।

      প্রতিনিধি ২৩ মার্চ ২০২২ , ১১:২০:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

    যার 3.30 পাওয়ার কথা সে দেখা যায় দুই সাবজেক্টে ফেল করেছে! যে এই জীবনে যে কোথাও ফেল করে নাই, সে দেখা যায় জীবনের প্রথম সাত কলেজে এসে ফেল করেছে! যার প্রথম বর্ষে 3.20 ছিল সে দ্বিতীয় বর্ষে এসে 2.70 পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা আশ্চর্য হয়! আমি কি এতই খারাপ ছাত্র? সে নিজেকে ছোট ভাবা শুরু করে!

    রেজাল্ট বিপর্যয়ের কারণে মেয়েদের বেশি সন্মানহানি হচ্ছে। মেয়েরা অনার্সে অনেকে বিবাহিত থাকে। তাদের হাজবেন্ড, শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের রেজাল্ট এর কথা জিজ্ঞেস করলে তারা সদুত্তর দিতে পারেনা! ফেল করেছে এটা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে কেমনে বলে!দেবর ননদের কাছে মুখ দেখাতে সমস্যা হয়।নিজের বাড়ির কথা আলাদা, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির ব্যাপারটা সন্মানের সাথে জড়িত। তারা এক বিশাল সমস্যায় পড়ছে।

    ছেলেরা যখন জীবনে প্রথম ফেল করে তারা অবাক হয়। তারা ভাবে আমি কি এতই খারাপ ছাত্র ছিলাম কখনও? রেজাল্টের টেনশনে ছেলেমেয়েদের ছয় সাতটা বছর চলে যায়। ক্যাম্পাস লাইফে তাদের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জীবন বিকশিত হওয়ার কথা।সেখানে উল্টো তারা সবসময় দুশ্চিন্তা করে, বেশি বেশি সিগারেট খায়, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে।

    ক্যাম্পাস লাইফে তারা গান বাজনা করবে, প্রেমিকার সাথে ঘুরবে, নাটক করবে, শিল্প সাহিত্য চর্চা করবে, গল্প করবে, বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং নিবে, তা না করে তাদের কলেজ থেকে ঢাবিতে, ঢাবি থেকে রাস্তায়, রাস্তা থেকে বাসায়, আবার পরের দিন রাস্তায় গিয়ে বাস আটকাতে হয়! তারা কি এগুলো করার জন্য অনার্সে ভর্তি হয়েছিল?

    প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীর ক্যাম্পাস জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। অনার্সে এসে সবার বয়স এমন হয় যে সেই সময় অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। এই বয়সে মন-মানসিকতা এতটাই চাঙ্গা থাকে যে, যত অসম্ভব লক্ষ্যই হোক মানুষ অল্প যোগ্যতা দিয়েও তা অর্জন করতে পারে। কিন্তু সাত কলেজের ছেলে মেয়েদের দুর্ভাগ্য এদের ৬০% সময় চলে যায় দুশ্চিন্তা এবং আন্দোলনে। এই আন্দোলন করার অনেক খারাপ দিক আছে। যে মানুষ সব সময় মিটিং মিছিলে, সভায় হুংকার দেয় তার ব্যক্তি জীবন সুখের হয় না। সে ভায়োলেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা 90 ভাগ।

    মানুষের মন মানসিকতা তার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। পুরো জীবনটাতেই অশান্তির স্বীকার হতে হয়। আন্দোলনের একটিও ভালো দিক নেই। সব সমস্যার সমাধান বসে, আলাপ আলোচনা করে বের করা উচিৎ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামে।ঢাবি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই তাদেরকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একটা ছেলে বা মেয়ে যদি দুই তিন মাস একটা জিনিস নিয়ে লাগাতার দুশ্চিন্তা করে,
    তার মানসিক বৈকল্য দেখা দিবেই।

    সে অল্পতেই রেগে যাবে, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করবে, ধৈর্য কমে যাবে, স্বাস্থ্য নষ্ট হবে এবং তার তার আশেপাশের মানুষ তার দ্বারা অত্যাচারিত হবে। কিছু মানুষের সমস্যা থেকে পুরো সমাজে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়ে। এক জায়গার অশান্তি দশ জায়গায় ছড়িয়ে পরে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের উচিত খুব দ্রুত সমস্যাগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা করা। দ্রুত সমাধান দিতে না পারলে তারা সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ছেড়ে দিক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত কলেজ হ্যান্ডেল করার অভিজ্ঞতা আছে।

    পড়াশোনার মানোন্নয়ন লাগবেনা। ছেলে মেয়েদের জীবনে শান্তি দরকার। একাডেমীক সার্টিফিকেট দিয়ে কি হবে? যদি জীবনের মুল্যবান সময় দুশ্চিন্তা করেই কেটে যায়! ২০ থেকে ৩০ বছর সময়টা মানুষের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান সময়। এই সময়টা সাত কলেজের ছেলেমেয়েদের কাটছে অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্ট, হতাশায়। মানবজীবনে পড়াশোনার চাইতে সুখের প্রয়োজন অনেক বেশি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ