• আবহাওয়া

    বরাদ্দ কমল জলবায়ু মোকাবিলায়

      প্রতিনিধি ৭ নভেম্বর ২০২১ , ৪:১০:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ

    করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে জলবায়ু মোকাবিলা বাজেটের ওপর। চলতি বাজেটের ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জলবায়ু মোকাবিলায়। এ বরাদ্দ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ২৫টি মন্ত্রণালয়কে। এটি গত দুই অর্থবছরে জলবায়ু খাতে বরাদ্দের তুলনায় কম। মূলত করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। ফলে এ খাতে বরাদ্দের হার কমানো হয়েছে। এ বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জলবায়ু ঝুঁকি সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

    জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জলবায়ু খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা-সেটির যথাযথ মনিটরিং করা দরকরা। এর আগের অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটিও পুরোপুরি ব্যয় হয়েছে কিনা-তা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে শতকরা হারে বরাদ্দ কমলেও বাজেটের আকার বাড়ছে। সে তুলনায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেশি হবে।

    জলবায়ু মোকাবিলা সংক্রান্ত বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজনের লক্ষ্যে অর্থায়ন কার্যকরের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এর ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়নকে সরকারি ব্যয়ের মধ্যে যুক্ত করতে ৬টি মন্ত্রণালয় নিয়ে পৃথক জলবায়ু বাজেট করা হয়। জলবায়ু সুরক্ষা ও উন্নয়ন নামে এটি প্রকাশ পায়। পরবর্তীকালে সরকার ও আন্তর্জাতিক মণ্ডলে এর সাড়া পাওয়া যায়। ফলে ২০টি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে ‘টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু অর্থায়ন’ নামে পৃথক বাজেট প্রকাশ করা হয়।

    আর ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করা হয়। সেখানে মোট বরাদ্দ হচ্ছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি জলবায়ু মোকাবিলা সম্পৃক্ত ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। একইভাবে দেখা গেছে, এ বরাদ্দের হার গত অর্থবছরে (২০২০-২১) ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদনে ইন্টার গভর্মেন্টাল প্ল্যান ও ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তথ্য তুলে ধরে বলা হয়।

    জলবায়ু মোকাবিলার প্রভাবে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বন্যাকবলিত হয়। এতে অবকাঠামো, বাসস্থান, কৃষি ও জীবিকার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের ১৭ শতাংশ ভূমি এবং ৩০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি শহর অঞ্চলে অতিবৃষ্টিপাতের প্রকট হবে। ফলে নিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। যা ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়ার ফলে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের ঘরবাড়ি ও জায়গাজমি ছেড়ে দিয়ে শহরের বস্তিতে বসবাস শুরু করবেন।

    এতে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি এবং অতিঘন বসতি হয়ে উঠবে।এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় বর্তমানে প্রতিবছর একশ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বছরে ব্যয় করা হচ্ছে। আর এ বিনিয়োগের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমছে। তবে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৫১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।অর্থ মন্ত্রণালয় যে ২৫টি মন্ত্রণালয়ে জলবায়ুকেন্দ্রিক বরাদ্দ দিয়েছে এর মধ্যে ওইসব মন্ত্রণালয়ে পরিচালনা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।

    এর মধ্যে সরাসরি জলবায়ু সম্পৃক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ১০ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। একইভাবে এসব মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন বাজেটের আকার হচ্ছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, যার মধ্যে জলবায়ু সম্পৃক্ত ব্যয়ের অঙ্ক হচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।এ বছর জলবায়ুসংক্রান্ত ৬টি অঞ্চলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রথম অগ্রাধিকারে আছে। এতে জলবায়ু মোকাবিলায় বরাদ্দের ৩৯ শতাংশ দেওয়া হয়েছে।

    অর্থাৎ ৯ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এ খাতে। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে অবকাঠামো। সেখানে মোট বরাদ্দের ২৬ শতাংশ বা ৬ হাজার ৫১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে প্রশমন ও লো-কার্বন ডেভেলপমেন্ট। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৩৭৮ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১৭ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে রয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করা। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫৫৬ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৬ শতাংশ। আর গবেষণা ও নলেজ ম্যানেজমেন্ট খাতে বরাদ্দ আছে ৪ শতাংশ অর্থাৎ ৯১১ কোটি টাকা।সূত্রঃযুগান্তর।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ