• রাজশাহী বিভাগ

    কৃষি বিভাগের নজরদারি নাই! তানোরে চোরাইপথে আসা সারে বাজার সয়লাব

      প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২১ , ৩:৪৫:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি :

    রাজশাহীর তানোরে কৃষি বিভাগেরপ্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পটাশ ও টিএসপি সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকার নির্ধারিত দাম থেকে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশক্ষেত্রে সারের অতিরিক্ত দাম নিলেও রশিদ দেযা হচ্ছে না, কখানো বা দিলেও সেখানে সরকার নির্ধারিত দাম লেখা হচ্ছে। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে সার দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এই সুযোগে তানোরের পার্শবর্তী মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট, ধুরইল ও মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এবং চৌবাড়িয়াহাট থেকে চোরা পথে প্রতিদিন ট্রলি করে টিএসপি ও পটাশ সার স্রোতের মতো তানোরের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এসব সারের কোনো ক্রয় রশিদ দেয়া হচ্ছে না। ফলে এসব সার আসল, নকল না নিম্নমাণের ভেজাল সেটা বোঝার ক্ষমতা নাই। আবার এসব সার কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু করার নাই সাধারণ কৃষকের।এতে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সরকারের অনুমোদিত বিসিআইসি ডিলারগণ পটাশ ও টিএসপি সার দিতে পারছে না, সেখানে তারা চোরা পথে এসব সার দিচ্ছে কিভাবে। এছাড়াও খোলা বাজারে ৭৫০ টাকা ব্যাগের পটাশ সার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ১১০০ টাকা ব্যাগের টিএসপি ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করছে, তারা কোথায় পাচ্ছে এসব সার।অন্যদিকে সার বিপণন নীতিমালা অনুয়ায়ী এক এলাকার সার অন্য এলাকায় বিক্রির কোনো সুযোগ নাই। এদিকে গত ১৩ নভেম্বর শনিবার তানোর সদরের সার ব্যবসায়ী সৈয়ব আলী, প্রণাব সাহা ও তালন্দ বাজারের সুমন বাবুর দোকানে কৃষক-চাষিদের মধ্যে হট্টগোল, ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে তানোরে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের সমান। তবে, এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুন জমিতে আলু চাষাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম ও ৩২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শীতকালীন নানা শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এর পরিমান জানাতে পারেনি কৃষি অফিস। কিন্তু কিছু কৃষক জমিও প্রস্তুত করেছেন। আবার অনেকে চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, আলু রোপনের শুরুতে পটাশ ও টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে রবি শষ্যের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা।উপজেলায় বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে ৯ জন এবং বিএডিসির ডিলার ২৩ জন। তারপরও পটাশ ও টিএসপি সারের জন্য আলু চাষিদের হাহাকার চলছে। কৃষক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে প্রতি বস্তা টিএসপি (৫০ কেজি) এক হাজার ১০০ টাকা (প্রতি কেজি ২২ টাকা), এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) (৫০ কেজি) ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি) বিক্রয় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ প্রতি বস্তা টিএসপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়। এমওপি প্রতি বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫০ টাকা দরে।কৃষক ও চাষিদের অভিযোগ, প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপিসহ বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলার-ব্যবসায়ীরা কোনো রশিদ (ভাউচার) দিচ্ছেন না। এক্ষেত্রে কোন কৃষক রশিদ নিতে আগ্রহ দেখলে তাতে সরকারি মূল্য লিখে দেয়া হচ্ছে। আর এতে কেউ নিতে রাজি না হলে তার সার নিয়ে টাকা ফেরৎ দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে কোন ভুক্তভোগি মোবাইলে অথবা সরাসরি অভিযোগ দিলেও তাতে ভ্রুপক্ষেপ নেই কৃষি অফিস ও উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির নীতি নির্ধারকদের বলে অভিযোগ কৃষকদের। তানোর পৌর এলাকার গাইনপাড়া মহল্লার আলুচাষি আব্দুস সালাম বলেন, তিনি নিজের ১০ বিঘা জমিতে আলু রোপণের জন্য চাষাবাদ করেছেন। সারের জন্য তানোর সদরের স্থানীয় সার ব্যবসায়ী প্রণাব সাহা ও সৈয়বের দোকানে সপ্তা ধরে ঘুরেও পাচ্ছেন না কোন ধরণের সার। ফলে তাঁর জমিতে আজও আলু রোপণ করতে পারেননি তিনি। একই কথা জানান জিওল মহল্লার আলুচাষি ওমর হাজী। তিনি বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৮০ বিঘা জমিতে আলু চাষের জন্য অন্যের জমি বর্গা নিয়েছেন। প্রায় জমিতে চাষাবাদ চলছে। কিন্তু কাঙ্খিত সারের অভাবে আলু রোপণে দেরি হচ্ছে। তানোর সদরের বিসিআইসি সার ডিলার মোহাম্মাদ আলী বাবুর তালন্দ বাজারে অবস্থিত দোকানে ও বাড়িতে একাধিকবার গেছেন। সেখানে তাঁর গুদাম ঘরে সার দেখছেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে তাকে সার না দিয়ে সপ্তা ধরে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান ওমর হাজী। এনিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও এখনো কোন সার পাওয়া যায়নি। তবে, এব্যাপারে সার ডিলার মোহাম্মাদ আলী বাবু ও প্রণাব সাহা বলেন, টিএসপি ও পটাশ সারের বরাদ্দ কম। আমরা না পেলে কৃষকদের কাছে বিক্রি করব কীভাবে? তবে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ ব্যাপারে এড়িয়ে গেছেন এই দুই সার ডিলার।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এবার টিএসপি ও পটাশ (এমওপি) সারের বরাদ্দ কমিয়ে ডিএপি সারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে, কৃষকরা না বুঝে টিএসপি সারের প্রতি ঝুঁকেছেন। আমরা কৃষকদের টিএসপির বদলে ডিএপি ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ