• জাতীয়

    ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা,জাতীয় সংলাপে ৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ

      প্রতিনিধি ২৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৯:৩৩:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

    আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক চড়াই-উৎড়াই হলেও এবারের সমস্যা অতিতের যেকোন সমস্যার চেয়ে জটিল ও বহুমাত্রিক। দেশ আড়্গরিক অর্থেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ভু-রাজনীতির জটিলতায় দেশ পরাশক্তির বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।।

    আজ মঙ্গলবার সকালে দেশের বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সাথে জাতীয় সংলাপে লিখিত বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।

    দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরম্নল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

    সংলাপে পীর সাহেব চরমোনাই দেশে চলমান ১১টি সংকটের কথা তুলে ধরেণ। যা নিম্নরূপ :

    ১. রাষ্ট্রব্যবস্থার অবনতি : আমরা সবাই জানি, সরকার হয় দলীয় এবং পরিবর্তনশীল। আর রাষ্ট্র হয় সকলের এবং তা অপরিবর্তনশীল। সরকার আসে-যায় কিন্তু রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যায়। রাষ্ট্র একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শক্তিকেন্দ্র নিয়ে গড়ে ওঠে। সরকার সেসব প্রতিষ্ঠান ও শক্তিকেন্দ্র ব্যবহার করে কাজ করে।

    ২.সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনাশ : আধুনিক রাষ্ট্রে সেপারেশন অফ পাওয়ার খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ ও সর্বজনবিদিত একটি মৌলিক নীতি। সেপারেশন অফ পাওয়ার নিশ্চিত করা হয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বর্তমান সরকার পরিকল্পনা করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করেছে।
    নির্বাচন কমিশনের মতো মৌলিক প্রতিষ্ঠানে বারবার দলান্ধ ব্যক্তি বসানো হয়েছে। বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ বানানো হয়েছে।

    ৩.রাজনৈতিক সংস্কৃতি : গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে পরস্পর বিনাশী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সরকারী দল বিরোধী শক্তিকে ধ্বংশ করতে চায়। সেটা যেমন অপরাজনীতির মাধ্যমে তেমনি শারীরিকভাবেও। প্রতিবাদী সমাবেশে গুলি করা, মানুষ গুম করা তো বহুল চর্চিত সংস্কৃতি। লাখো মানুষের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে সাউন্ড গ্রেনেড নিড়্গপে করা, নির্বিচারে গুলি করার নজীর জাতি দেখেছে। সাম্প্রতিক দিনে দুপুরে একই ধরণের নির্মমতা দেখেছে দেশবাসী। দলগুলোর ভেতরের অবস্থা নিয়ে নতুন করে কথা বলতে চাই না।

    ৪.নির্বাচনী ব্যবস্থার মৃত্যু: বিগত নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করা হয়েছে। একতরফা নির্বাচন, রাতে ভোট দেয়া, ভোট ডাকাতি, প্রার্থীদের ওপরে হামলা, মনোয়নপত্র দাখিলে বাধা, প্রার্থীর বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভুয়া মামলায় রায় দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, কমিশন থেকে নিবন্ধন না দেয়াসহ হেন কোন অপকর্ম নাই যা এই সরকার ও তার কমিশন করে নাই। নির্বাচনের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, কোন কোন নির্বাচনে ৫% ভোটারও ভোট দিতে যায় নাই। ২০১৪ ও ২০১৮ এর অভিজ্ঞতা সবারই জানা। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতেও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসে এই সরকারের অপচেষ্টা খুবই স্পষ্ট।

    ৫.সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন : আমরা বারংবার বলছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো, দেশের শাসন ড়্গমতায় কারা থাকবে, কোন পদ্ধতিতে দেশ পরিচালিত হবে তা নির্ধারণের এখতিয়ার জনগণের। এই ড়্গমতা দেশের বাইরে কারো কাছে যাওয়ার মানেই হলো, সার্বভৌমত্ব হারানো। বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের সকল শক্তির ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক মাঠ এতোটাই সংকুচিত করেছে যে, ড়্গমতার পালাবদলে দেশীয় কোন শক্তি আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

    ৬.অর্থব্যবস্থা: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সাথে অর্থনীতির অবস্থাও ভয়াবহ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। কোনমতে আগামী তিনমাসের আমদানী ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। বাংলাদেশের মতো একটি আমদানী নির্ভর দেশের জন্য এটা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তা বলা বাহুল্য। দেশে যেভাবে আইন করে দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে তার নজীর বিরল। রিজার্ভের টাকা দেয়া হলো রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে; যার বড় অংশ এখন খেলাফি ঋণে পরিনত হয়েছে।

    ৭.একদেশদর্শী প্রচারমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণি : প্রচার মাধ্যমকে রাষ্ট্রের ¯ত্মম্ভ বিবেচনা করা হয়। আর বুদ্ধিজীবী শ্রেণী রাষ্ট্রের ও সমাজের বিবেক হিসেবে স্বীকৃত। সরকারকে যথাযথ বুদ্ধি দেয়া, সরকারের কাজের সমালোচনা করা, নাগরিকের অধিকার খর্ব হলে ভুমিকা রাখা প্রচার মাধ্যম ও বুদ্ধিজীবিদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা এই দায়িত্ব পালন করলে জাতি পথ হারায় না। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বা¯ত্মবতা কী,তা সবাই জানে। একশ্রেণীর প্রচার মাধ্যম পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারের অন্যায়ের পড়্গে প্রচারনা চালানোর জন্যে। বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের ভূমিকাও জনগণকে চরমভাবে হতাশ করছে।

    ৮.পোষাক খাত: বাংলাদেশের রপ্তানীমূখী অর্থনীতি পোষাক খাত নির্ভর। কিন্তু পোষাক খাতে শ্রমিক শোষন, অভ্যšত্মরিণ রাজনীতির কারণে পোষাকের বাজারে অনিশ্চয়তা আমাদেরকে মারাত¥কভাবে ভাবিয়ে তোলে। আবারো একটি একতরফা নির্বাচন হলে ইউরোপ, আমেরিকার মতো পোষাক রপ্তানীর প্রধান বাজার আমাদের হারাতে হবে। যা আমাদেরকে বিপর্যয় ও অস্থিরতার চরমে পৌঁছে দিবে।

    ৯.সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংকটের সূত্রপাত: ২০১১ সালের ১০ মে তারিখে প্রদত্ত (৪-৩) উচ্চ আদালতেরবিভক্ত সংড়্গপ্তি আদেশ নিয়েই সংকটের সূত্রপাত- ‘আদালত সংড়্গপ্তি আদেশে বলেছিলেন, সংসদ চাইলে দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে) হতে পারে।’ ‘সংসদ চাইলে আরও দু টার্ম এরূপ সরকারের অধীনে হতে পারে বলে সংড়্গপ্তি রায়’ দেন আপিল বিভাগ।
    সংড়্গপ্তি আদেশটি প্রদানের অব্যবহিত পরে সরকারের পড়্গ থেকে দাবি করে বলা হয়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি আদালত বাতিল করেছেন।

    সরকারের এমন দাবির ভিত্তিতে আদালতের আদেশ পালন করতেই, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাদ দিয়ে নবম জাতীয় সংসদ ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। প্রসঙ্গত, প্রায় ১৬ মাস পর ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে প্রকাশিত আপিল বিভাগের বি¯ত্মারিত রায় এ ড়্গেেত্র অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, ১০ মে ২০১১ তারিখের সংড়্গপ্তি আদেশের ভিত্তিতেই, বি¯ত্মারিত রায়ের জন্য অপেড়্গা না করেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়।

    ১০. একতরফা নির্বাচন নির্বীঘ্ন করার লক্ষে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করার জন্য বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র

    ক. বাংলাদেশের বিরোধী দল নির্বাচনের আগে চরম দমন-পীড়নের মুখোমুখি।

    খ. শত শত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, গায়েবী মামলা ও বিরোধীদলের মৃত ব্যক্তির নামে কারাদন্ড প্রদান। যা বিচার বিভাগের দেউলিয়াত্ব ও সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রকাশ করে।

    গ. জেলখানার ধারণ ড়্গমতার ৩ গুন আসামী কারাগারে বন্দী, যা সম্পূর্ন মানবতা বিরোধী, অমানবিক ও স্বাস্থ্য ঝুকিপূর্ণ।

    ১১. সরকারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম:

    ক. দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি যা মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। দুস্থ মানুষের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

    সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষে আমরা সংলাপে ৩ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয় :

    ১.বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত একতরফা তফসিল বাতিল করে গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করতে হবে।

    ২.বর্তমান বিতর্কিত পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

    ৩. কার্যকরী সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্যপিআর (চজ)বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন’ই অধিকতর উত্তম পদ্ধতি; যা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে তা প্রবর্তন করতে হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ