• ধর্ম

    সাদকাতুল ফিতর বাড়াবাড়ি কাম্য নয়-মুফতী আঃ কাদের কারিমী

      প্রতিনিধি ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ৬:০৯:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    আলোকিত ইসলাম ডেস্ক:

    এক,সাদাকার পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে : তা হচ্ছে, صاع (‘সা’) ও نصف صاع (নিসফে সা’)।

    যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’ এবং গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’ প্রযোজ্য হবে।
    عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَالحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ»

    অর্থ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) زَكَاةَ الفِطْرِ সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আবশ্যক করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬।

    শরীয়তের দলীলে একথাও প্রমাণিত যে, উপরোক্ত খাদ্যবস্ত্তর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে উল্লেখিত খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। অর্থাৎ ঐ খাদ্যবস্ত্তর জন্য শরীয়তে যে পরিমাণটি নির্ধারিত-‘সা’ বা ‘নিসফে সা’ সে পরিমাণের বাজারমূল্য আদায় করলেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

    এখানে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, মূল্যের দিক থেকে ঐ খাদ্যবস্ত্তগুলোর মধ্যে তফাৎ আছে, কোনোটির দাম বেশি, কোনোটির কম। তো সবচেয়ে কমদামের বস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে কেউ যদি সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে তাহলেও আদায় হায়ে যাবে। তবে উত্তম হল, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্ত্তকে মাপকাঠি ধরে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।

    যেহেতু সহীহ হাদীসে গমকেও একটি মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আধা সা’ তাই আধা সা গম বা তার মূল্য আদায় করলে নিঃসন্দেহে সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

    দুই,
    হাদীসের মাকসাদ সাহাবাগন সবচেয়ে বেশি বুঝেছেন, সাহাবাগন টাকা দিয়ে ও সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন।
    حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»

    তাবেয়ী ইমাম আবু ইসহাক রহঃ বলেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কে পেয়েছি যে, তারা রমজানের সদকায়ে ফিতির খাদ্যের মূল্য দ্বারা পরিশোধ করতেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭২, ১০৩৭১]
    এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ তথা প্রমাণযোগ্য।

    তিন,
    ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহঃ বলেন,
    لا يشترط إخراج التمر أو الشعير أو البر في زكاة الفطر بل لو أخرج قيمتها مما هو أنفع للفقير جاز لأن المقصد منها إغناء الفقراء عن المسألة وسد حاجتهم في هذا اليوم

    খেজুর, গম বা যব দিয়ে সদকায়ে ফিতির আদায় করা আবশ্যক নয়। বরং যদি এর মূল্য দ্বারা আদায় করা হয়, যা গরীবদের জন্য অধিক উপকারী, তবে তা জায়েজ আছে। কেননা, সদকার দ্বারা মূল মাকসাদ হল, গরীবদের দারিদ্রতা দূর করা এবং তার সেদিনের প্রয়োজন পূর্ণ করা। [মাউসূআতু ফিক্বহি সুফিয়ান সাওরী-৪৭৩]

    চার,
    ইমাম বুখারী রহঃ ও এই মাসআলা গ্ৰহন করেছেন,
    قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ
    ইবনে রশীদ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ এ মাসআলায় [টাকা দিয়ে সদকায়ে ফিতির আদায় করা] হানাফীদের সাথে সহমত পোষণ করেছেন। [ফাতহুল বারী-৩/৪৯৭]

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ