• শিক্ষা

    ৯২% মুসলমানের দেশে পাবলিক পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বাদ কেন? প্রশ্ন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের।

      প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ১২:৩৩:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

    আরিফুল ইসলাম কারীমী-স্টাফ রিপোর্টারঃ

    শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, সভ্যতার মাপকাঠি। সুশিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি সভ্যতার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। ঠকবাজির মাধ্যমে যেমন কোন ব্যবসা টিকে না, তেমনি নীতি, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া কোন জাতি উন্নতির শিখরে উঠতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত জাতীয় শিক্ষানীতির প্রাক-কথনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য, ‘এই শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো-এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে’।

    কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম ২০২১-এ ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বাদ দিয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নামে ইসলাম শিক্ষাকে একপ্রকার উপেক্ষা করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিপরীত। অধিকন্তু ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে, যা এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

    শিক্ষানীতি-২০১০ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা’। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা অংশে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের মনে আল্লাহ, রাসূল সা: ও আখিরাতের প্রতি অটল ঈমান ও বিশ্বাস যাতে গড়ে ওঠে এবং তাদের শিক্ষা যেন আচার সর্বস্ব না হয়ে তাদের মধ্যে ইসলামের মর্মবাণীর যথাযথ উপলব্ধি ঘটে, সেভাবে ইসলাম শিক্ষা দেয়া হবে’।

    আমরা অতীব উদ্বিগ্নতা ও হতাশার সাথে লক্ষ্য করছি যে, নীতিমালার কথার সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বতর্মান শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে শুধু সঙ্কুচিত ও উপেক্ষাই করা হয়নি বরং রীতিমতো ইসলাম শিক্ষার সাথে উপহাস করা হয়েছে। কেননা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা সহ বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান পাঠে ইসলামী আকিদা সংক্রান্ত বিষয় সমূহ যেমন সংকুচিত করা হয়েছে, অপরদিকে ইসলামী আকিদা বিরোধী বিভিন্ন বিষয় ও পরিভাষার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে কৌশলে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা বিরোধী,

    অপ্রমানিত ও ভ্রান্ত ডারউইনের বিবর্তনবাদ (যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে পরিত্যাজ্য) বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা হয়েছে। উপরন্তু বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তিসহ অশালীন-অশ্লীল ছবির সংযোজন ঘটানো হয়েছে মাদরাসাসহ স্কুলের শিক্ষা কারিকুলামে। উপরোক্ত কারণে এদেশের সচেতন ও শিক্ষিত মহল মনে করেন, বতর্মান শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা কারিকুলামে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টির ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বরং এর মাধ্যমে দেশে অশান্তির বীজ বপন করা হয়েছে।

    বতর্মান সময়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রী নির্যাতন একটি আলোচিত ঘটনা। ছাত্র-শিক্ষক কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি মূলত চরম নৈতিক অবক্ষয়ের ফল। নৈতিক শিক্ষা অর্জিত হয় ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে। আমরা মনে করি, বতর্মান শিক্ষাঙ্গন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হওয়ার পিছনে দায়ী সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্রমাগতভাবে ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে পাশ-কাটানো ও উপেক্ষা করার মানসিকতা। ইসলাম শিক্ষা সম্পর্কে সরকারের এহেন পলিসি লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও সংবিধানকে অবজ্ঞার শামিল।

    এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলায় দেশের সর্বস্তরের সুশীল, শিক্ষিত ও আলেম-ওলামাদের জাগ্রত হওয়ার এখনই সময়। একই সাথে সকল স্তরের তৌহিদী জনতাকে নিম্নোক্ত দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

    আমাদের ১০ দফা দাবি:

    ১। শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দ্বীনদার আলেমদের সম্পৃক্ত করা।
    ২। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম, শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার শিক্ষকদের দ্বারা পুণঃমার্জন করা।
    ৩। বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস বই হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদা বিরোধী প্রবন্ধসমুহ বাদ দেওয়া।
    ৪। ডারউইনের অপ্রমাণিত, ভ্রান্ত ও বিতর্কিত বিবর্তনবাদ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কারিকুলাম হতে বাদ দেয়া।
    ৫। নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
    ৬। ইসলাম ধর্ম শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে আল কোরআন শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
    ৭। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও আবশ্যিক করা।
    ৮। শ্রেণীকক্ষে অন্যান্য আবশ্যিক বিষয়ের মতই ইসলাম শিক্ষাকে মূল্যায়ন করা এবং বোর্ড পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
    ৯। স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তক অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা।
    ১০। যেহেতু সাধারণ জনগণ এদেশের মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৭১% বহন করেন, যা ইউনেস্কো জরিপে এসেছে, সেহেতু জোর করে চাপিয়ে দেয়া শিক্ষাব্যবস্থা নয় বরং এদেশবাসীর ধর্মীয় চেতনার অনুকূল শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

    ★ উপরোক্ত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বস্তরে জনমত গড়ে তুলুন।
    ★ নতুন প্রজন্মের শিক্ষা অধিকারকে ষড়যন্ত্র মুক্ত রাখতে ঈমানী দায়িত্ব পালন করুন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ