• আমার দেশ

    জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৫ দফা দাবি ও ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা।

      প্রতিনিধি ২ জুন ২০২২ , ৯:২৪:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:

    কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে বানোয়াট শ্বেতপত্র এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক ওলামা সম্মেলন আয়োজনে প্রশাসনিক বাঁধার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, উক্ত সংবাদ সম্মেলন হুবহু তুলে ধরা হলো
    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ওলামাদের সম্মিলিত মঞ্চ হিসেবে এই মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে।

    আমরা গত ১৬ মে সংবাদ সম্মেলন করে শ্বেতপত্রের আইনী ও নৈতিক ভিত্তিহীনতা তুলে ধরেছি। গত ২৮ মে নাগরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে নাগরিক বিশ্লেষণ জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সর্র্বশেষ শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা ওলামাদের মুখ থেকে উত্থাপিত মিথ্যাচারের উত্তর জাতির সামনে তুলে ধরতে আজকে ওলামা সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল।

    জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ শ্বেতপত্রে উল্লেখিত আলেমদের মধ্যে যারা কারাবন্দি নয় এমন সকল আলেমের সাথে সমন্বয় করেছে এবং তারা সকলে এই সম্মেলনে উপস্থিত থেকে শ্বেতপত্রের মিথ্যাচারের উত্তর দিতে প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন।
    যেসব মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশের প্রতিনিধিগণ ওলামা সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সামগ্রিকভাবে শ্বেতপত্রে যাদের দিকে অভিযোগের তীর ছোড়া হয়েছিল এমন সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এক অভূতপূর্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
    সংবিধানের ধারা ৭(ক)-এ জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক বলা হয়েছে। ধারা ৩৭ এ প্রত্যেক নাগরিককে সভা সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
    ধারা ৩৯ এ সকল নাগরিককে কথা বলার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এসব সাংবিধানিক অধিকার বলে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের চিরন্তন নীতি অনুসরণে শ্বেতপত্রে যে সব আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হয়েছে তাদের কথা বলা, সম্মেলন করা খুবই যৌক্তিক কর্মসূচি ছিল।
    কিন্তু দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, আমরা সভা-সমাবেশ, সম্মেলন করার সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা সত্ত্বেও একেবারে শেষ মুহূর্তে আমাদের সম্মেলন করার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। আমরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে হল বুকিং দেওয়া সহ যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরন করেছিলাম। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করা হয়। এর পরে আমরা গতকাল তাৎক্ষনিক জাতীয় প্রেসক্লাবেও হল বুকিং করি। কিন্তু ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তা বাতিল করা হয়।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
    আমরা জানি, জাতীয় প্রেসক্লাব মতামত প্রকাশের একটি উন্মুক্ত স্থান। কিন্তু সেখানেও কোন এক অশুভশক্তির কুটচালে আমাদের সম্মেলনকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মত একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এধরণের আচরনে আমরা ব্যাথিত ও বিস্মিত।
    স্বাধীনতার ৫১তম বছরে এসে সংবিধানের এমন লঙ্ঘন ও মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
    সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা মনে করি যে,
    ১) কথিত শ্বেতপত্র বাংলাদেশের গণ-মানুষের হাজার বছরের চর্চিত ধর্ম-বিশ্বাস, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধী একটি অপচেষ্টা।
    ২) শ্বেতপত্রটি বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে। মৌলিক প্রস্তাবনাকে সাম্প্রদায়িকতার সূত্র বলে অপব্যাখা করেছে। ফলে এই শ্বেতপত্র সংবিধান বিরোধী।
    ৩) কথিত শ্বেতপত্র মানব সভ্যতার প্রধান ভিত্তি নাগরিক স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদার নীতি লঙ্ঘন করে নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সার্বজনীন মানবাধিকার লংঘনের অপরাধ করেছে।
    ৪) এই শ্বেতপত্র স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের চেতনাকে আঘাত করেছে।
    ৫) কথিত এই শ্বেতপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ এবং ভিনদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নে একটি অশুভ চেষ্টা।
    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
    আজ যে ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তা ইসলামপন্থার অন্তর্নিহিত এক চিরন্তন চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ হতে যাচ্ছিল। ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বের বিশালতা ও ইসলামী চিন্তার অন্তর্গত স্বাধীনতার কারণে বাহ্যত ইসলামপন্থায় নানা মাসলাক, মাযহাব দেখা যায়। বাহ্যত বিচ্ছিন্ন নানা মত, পথ ও কর্মপন্থা দেখা যায়। কিন্তু দেশ-জাতি-মানবতা ও ইসলামের প্রশ্নে ইসলামপন্থা সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী শক্তি ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।
    আজকের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইসলামপন্থার সেই চিরন্তন চরিত্র ও শক্তির একটি বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপন হতে যাচ্ছিল। কুচক্রীদের অপচেষ্টায় আপাতত তার দৃশ্যায়ন না হলেও আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, ওলামারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাদের স্বার্থ রক্ষায় সদা প্রস্তুত, ইনশাআল্লাহ।
    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
    ঘাদানিক সহ দেশ, জাতি, ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ নিয়মতান্ত্রিক বহুমাত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। আমরা সকল অপশক্তির মোকাবিলায় বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনি লড়াই অব্যাহত রাখব, ইনশাআল্লাহ।
    তারই প্রেক্ষিতে দেশের বৃহত্তর ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা ও নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার নিমিত্তে আমাদের দাবী সমূহ-
    ১) অবিলম্বে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিকে জনতার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে শ্বেতপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
    ২) এই শ্বেতপত্রের সাথে জড়িত সকলের রাজনৈতিক গোপন অভিলাষ প্রকাশ ও ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
    ৩) ঘাদানিকের অর্থের উৎস খুঁজে বের করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
    ৪) এই শ্বেতপত্র স্পষ্টভাবেই সংবিধানের মৌলিক নীতির বিরোধিতা করেছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ