• আন্তর্জাতিক

    ক্ষুদিরামের ফাঁসি’র ১২৪তম বার্ষিকী আজ

      প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২২ , ২:০১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি/হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী। /কলের বোমা তৈরি করে/দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,/বড়লাটকে মারতে গিয়ে/মারলাম আরেক ইংলন্ডবাসী। /হাতে যদি থাকতো ছোরা/তোর ক্ষুদি কি পড়তো ধরা মাগো/রক্ত-মাংসে এক করিতাম/দেখতো জগতবাসী।

    ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি উপলক্ষকে ঘিরে রচিত গানটি শুনলে মনে হয় ক্ষুদিরাম একাধারে নিজের মা এবং দেশজননীর কাছে বিদায় চাইছেন। গানটি রচনা ও সুর কার এ নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস, কেউ বলেন বরিশালের চারণ কবি মুকুন্দ দাস।
    ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুভাষচন্দ্র’ চলচ্চিত্রে এই গানটি প্রয়োগ করা হয়েছিল।

    সেখানে গানটির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। গানটি আজও ভীষণ জনপ্রিয়। ক্ষুদিরামের ফাঁসি’র ১২৪তম বার্ষিকী আজ। ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন প্রথম বাঙালি বিপ্লবী যাকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দিয়েছিল। ক্ষুদিরাম ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট তার ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর হয়। ফাঁসির সময় তার বয়স ছিল ১৮।

    ‘চিনতে নাকি সোনার ছেলে/ক্ষুদিরামকে চিনতে?/রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিল যে/মুক্ত বাতাস কিনতে’- ক্ষুদিরামকে নিয়ে এই হচ্ছে কবি আল মাহমুদের মূল্যায়ন। ক্ষুদিরামের ফাঁসির পর ১৯০৮ সালের ১২ আগস্ট অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বর্ণনা ছিলো এ রকম:

    ‘মজঃফরপুর, ১১ আগস্ট অদ্য ভোর ছয় ঘটিকার সময় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হইয়া গিয়াছে। ক্ষুদিরাম দৃঢ় পদক্ষেপে প্রফুল্ল চিত্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়। এমন কি তাহার মাথার ওর যখন টুপি টানিয়া দেওয়া হইল, তখনও সে হাসিতে ছিল। স্বদেশের জন্য মৃত্যুকে কিভাবে হাসিমুখে বরণ করতে হয় তা শিখিয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু। আঠারো বছর বয়স যে কি সাহসী হয় তারও প্রমাণ ক্ষুদিরামের দৃঢ় মনোবল। ’

    ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদেনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে। বাবা ত্রৈলক্যনাথ বসু এবং মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিনকন্যা সন্তান জন্মের পর ক্ষুদিরাম ছিলেন চতুর্থ সন্তান। তার আগেই দুই ছেলে জন্মের পর মারা যায়। এ কারণে জন্মের পরই তিন মুঠ ক্ষুদের বিনিময়ে তাকে তার দিদির কাছে দেন বাবা-মা। এর থেকে তার নাম হয় ক্ষুদিরাম।
    ক্ষুদিরাম জীবন বাজি রেখে ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা মেরে ব্রিটিশ শাসক কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়েছিলেন।

    কিন্তু যে গাড়িটিতে তাদের থাকার কথা ছিল তারা ছিলেন না সেদিন। তার বদলে মারা যান দুই ইংরেজ মহিলা। ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম বসু ও আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। প্রফুল্ল নিজের কাছে থাকা রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিচার হয় ক্ষুদিরামের। এতে তাঁর ফাঁসির রায় দেন বিচারক কর্নডফ। তিনি ক্ষুদিরামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ফাঁসিতে যে মরতে হবে সেটা বুঝেছো? জবাবে ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, বুঝেছি। তার মুখের অবিচলিত হাসি হাসি ভাব দেখেই বিচারক প্রশ্নটি করেছিলেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ