• সাহিত্যে

    আমার ভাষা আমার অহংকার-সাইফুল ইসলাম রাসেল

      প্রতিনিধি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৬:০১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    ওয়ালিদ হাসান আরমান-সাহিত্য রিপোর্টার:

    আমরা বাঙালী, বীরের জাত। যুদ্ধ, সমর, আহব, রণ ও লড়াই যাই বলুন না কেন, এটা আমাদের কাছে আতঙ্কের কিছু নয়। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকেই আমরা মুক্তি পেয়েছি এই লড়াই করে। আর এই লড়াইয়ের একমাত্র কারণ, “আমরা বাংলায় কথা বলতে চাই, আমরা চাই আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে।” আর এই স্বাধীনতাই খর্ব করতে চেয়েছিল, পাকিস্তানের কুলাঙ্গারেরা। অতঃপর অনেক ত্যাগ স্বীকার করেই আমরা আমাদের স্বাধীন সত্তা ফিরে পেয়েছি। স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। কিন্তু এই স্বাধীনতাটাকে আমরা কোনোভাবেই রক্ষা করতে পারছিনা। না চলনে, না বলনে। আমরা বাঙালী ভাষার মাসখানা এলেই একটু সতর্ক হই,আর পরিপাটি হই ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। খুব করেই সেদিন, সাজ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে খালি পাঁয়ে আমরা যাই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। কিন্তু কতখানি শ্রদ্ধা আমরা করতে জানি? এ শ্রদ্ধা শুধু তা একটা দিবস ঘিরেই। আর সারা বছরই আমরা অসতর্কতার সাথেই চলি।কিভাবে বাংলাকে ধারণ করতে হবে কিংবা লালন করতে হবে আমরা জানিনা।শুধু জানি বাংলা আমার মাতৃভাষা আর শহীদ মিনারে গিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারী ফুল দেওয়া। আমরা চাইলেই আমাদের ভাষাতেই সকল মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। কথার ছন্দে ইংরেজি না আসলে আমাদের এখন বাক্যই পূর্ণ হয় না।বলা চলে রীতিমতো একটা ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে ইংরেজি বলা।আহা কি দম্ভ গো ইংরেজি বুলি ওয়ালার। আর এটাই নাকি হয়েছে ভাব প্রকাশের মাধ্যম।কিন্তু মনের ভাব প্রকাশতো দূরের কথা। এই জন্যই হয়তো মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিঃ–আবদুল হাকিম বলেছেন, “যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
    সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।” কবি তাঁর এই তীব্র শ্লেষ আমাদেরকেই দিয়ে গেছেন সেই মধ্যযুগের প্রান্তে। তিনি বলেছেন কোনো ভাষার প্রতি তাঁর কোনো রাগ,বিদ্বেষ নেই। বিদ্বেষ তাদের প্রতি,যারা আধুনিক হতে গিয়ে আপন ভাষাকে এড়িয়ে চলে অপমান করছে। আবার অনেকেই আঞ্চলিকতাকে অশুদ্ধ মনে করেন। মনে রাখবেন,আঞ্চলিকতা অশুদ্ধ নয়, সেটাও শুদ্ধ এবং সেটাই মাতৃভাষা। আর সর্বজন বিধিত স্বীকৃত আমরা যে মান্যভাষা ব্যাবহার করি,তা প্রমিত বলা চলে। যা নদীয়ার মুখের ভাষার মতই।
    আঞ্চলিকতাকে ভালোবাসতে শিখুন। আর নিজেকে স্মার্ট বানাতে আপনি প্রমিত সঠিক উচ্চারণ করেই বাংলায় কথা বলুন। ইংরেজি মিশ্রণ করে নিজেকে স্মার্ট ভাবা নেহাতই পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। আবার অনেকের মনে হয়তো প্রশ্নও জাগতে পারে, আমরা তো ইংরেজি চাইলেও শতভাগ পরিহার করতে পারবোনা। এই যেমন, ( কলেজ, চেয়ার, টেবিল, কাপ) এমন শব্দগুলা আমরা পরিহার করবো কিভাবে? আসলে এগুলোরও বাংলা আছে। এখন কথা হলো, (মহাবিদ্যালয়, কেদারা, চারপায়া, পেয়ালা) এগুলা কতজনেই জানি? কারণ কিছু ইংরেজি আমাদের মাঝে প্রচলিত হয়ে গেছে। আমরা চাইলেই তা পরিহার করতে পারিনা। শুধু ইংরেজি নয়, যুগে যুগে অনেক শব্দই বাংলা ভাষায় জায়গা করে নিয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, কেননা আমরা দেহে যেমন সংকর, মনেও সংকর এবং জাতেও সংকর। তাই বলে নতুন শব্দ আমদানি বা ধার করে অভিধানটাকে আর ভারি করবেন না দয়া করে।
    আবার একটা আসরে বা আড্ডায় অনেকের মাঝে কেউ একজন সুন্দরভাবে বা পরিশুদ্ধ উচ্চারণে বাংলায় কথা বললে তা লক্ষ্য করে শুনুন-দেখুন পারলে নিজেও শিখুন। অথচ তা না করে আমরা তাকেই এড়িয়ে যাই বা কটাক্ষ করি।এই পঁচা মস্তিষ্ক দিয়ে যে আমরা কি করবো? প্রশ্ন রইলো?

    তাই আসুন, বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা করি, সালাম-রফিকের রক্তকে শ্রদ্ধা করি। পরিপূর্ণ বাংলায় কথা বলি।কারণ আমার ভাষা আমার অহংকার।

    সাইফুল ইসলাম রাসেল
    সরকারি বাঙলা কলেজ,ঢাকা
    বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
    স্নাতক- শেষ বর্ষ

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ