• Uncategorized

    প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বাঘাসুরা ইউনিয়নের তালিকায় অনিয়ম মৃত ব্যাক্তির নামসহ একই নাম্বার একাধিকবার ব্যবহার

      প্রতিনিধি ২৯ জুলাই ২০২০ , ৮:৪২:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

    এইচ অার রুবেল-বার্তা সম্পাদকঃ

    প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধনকৃত ২৫ ‘শ টাকার ঈদ উপহার মাধবপুর উপজেলার ১১ নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই ইউনিয়নের উপকারভোগী ৯৩৩ জনের মাস্টার তালিকায় স্বজনপ্রীতি, মৃত ব্যাক্তির নাম ও একই মোবাইল নাম্বার একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে।

     

    অনুসন্ধানের প্রাথমিক তথ্য বাচাইয়ে দেখা যায়, বাঘাসুরা ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে ১নং ওয়ার্ডে। আর এই ১নং ওয়ার্ডেই বর্তমান চার বারের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দীন আহমেদের বাড়ি। এ অনিয়মকে অনেকেই ভুল বশত নয় বলে জানান। ইচ্ছাকৃতভাবে গরিবের জন্য দেয়া প্রাধানমন্ত্রীর এ উপহার আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন ও মেম্বার আমির আলী যাদুর জোগসাজেসে এই তালিকা প্রণয়ন করেন।

     

    প্রাথমিক বাছাইয়ে বেরিয়ে আসে ১নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু অনিয়ম। যেখানে ১ মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন লোকের নামে। শুধু নামের পাশে নয়, পাশপাশি তালিকায় দেখানো হয়েছে ভিন্ন গ্রামও। ১নং ওয়ার্ডে প্রণিত তালিকায় ৮২ নং ক্রমিকে মোঃ শেফু মিয়া, তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার মোবাইল নাম্বার ০১৭৭১৯০০৬৪১ একজন টমটম চালক। এই নাম্বারটি তালিকায় ৬৫, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০, ক্রমিকে মোট দেয়া হয়েছে ৬বার। যা বিভিন্ন নামে ও ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। শিফু মিয়ার সাথে কথা হলে বাকি ব্যক্তি দু’জনকে চিনলেও তাদের নামের পাশে নাম্বার দেয়ার ব্যাপারে জানেন না কিছুই।

    ০১৭০৫৭৬৪২৬০ এই নাম্বারটি রিয়াজনগর গ্রামের আল-আমিন নামের একজন রাজমিস্ত্রীর,  তার নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে দু’বার। এ ব্যাপারে আল-আমিন জানায়, ‘আমার নাম্বার দু’বার কেন ব্যবহার করবে।

     

    ০১৭০৩৪৮০৫১৪ এই নাম্বারটি রাধাপুর গ্রামের দরিদ্র খোদেজা বেগমের। তাজপুর বিলাল মিয়ার নামের পাশেও এই নাম্বার দেয়া হয়েছে। ফোন দিলে কথা হয় খোদেজা বেগমের ছেলের সাথে। সে জানায় তারা ভাই বোন। তবে বিলাল মিয়া স্বচ্ছল ব্যক্তি। টাকা উত্তোলন করার স্বীকারও করেন তিনি।

    ০১৭১৭৯৭১৮৮৫ এই নাম্বারটি তাজপুর গ্রামের রফিক মিয়ার। একই গ্রামের গোলাপ চানের পাশেও নাম্বারটি দেয়া। সম্পর্কে মামাতো ভাই বোন বলে জানান রফিক।

    ০১৭৭১০৬২৯৭৭ এই নাম্বারের মালিক তাজপুরের সাহেদা বেগম। তার নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে ২বার। ফতেহপুরের লিটন মিয়ার নামের পাশেও দেয়া আছে এই নাম্বার। কথা হলে জানান তারা ভাই বোন।

    ০১৭৫৪৩০৭০৩৯ এই নাম্বারের মালিক ফতেহপুরের আনোয়ারা। কিন্তু তাজপুরের খুশনাহারের নামের পাশেও দেয়া আছে একই নাম্বার।

    ০১৭৮১৬৫৬০১৯ নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে ৩বার। তাজপুর, রিয়াজনগর ও ফতেহপুর উল্লেখ করে তিন ব্যক্তির নামের পাশে দেয়া। তবে নাম্বারে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।

    চারবারের খ্যাত চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিনের বসবাসরতরত ওয়ার্ড ১নং ওয়ার্ডে এমন অনিয়ম। শুধু ১নং ওয়ার্ডেই নয় এমন অনিয়ম হয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডেই।

    তালিকার ৩নং ওয়ার্ডেও দেখা যায় একই নিয়ম। ০১৭৫৮৬১৪২০৪ নাম্বারটি ব্যবহার হয়েছে দুইবার। আবার ৩২৬৬৫১১৭১০ ডিজিটের একই এনআইডি ব্যবহার হয়েছে দুইবার। ৪নং ওয়ার্ডেও রয়েছে ০১৭৬৬৭৭৪৯০২ একটি নাম্বার দেয়া হয়েছে দুইবার।

    অনুরূপ ৮নং ওয়ার্ডেও পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি নাম্বার। তালিকায় ০১৭৭৭৫৬২৭১১ নাম্বার ব্যবহার হয়েছে দুইবার। ০১৭৭১২৯৮১৭৪ এই নাম্বারটিও দেয়া হয়েছে দুইবার।

    অনেকওে সাথেই কথা হলে জানান তারা কেউ কেউ ভাই বোন, অথবা মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই বোন। যা পুরো তালিকায় স্বজনপ্রীতি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবী।

    এদিকে তালিকায় ৬৬০ নং ক্রমিকের ব্যক্তি জামাল মিয়া মৃত। কিন্তু তার নামও রয়েছে তালিকায়। মৃত ব্যক্তি কি করে জীবিত হলো এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে ইউনিয়ন জুড়ে। কে পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহারের অর্থ?

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারগণ চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিনের লোক। তিনি যা বলেন তারা তাই করেন। নিজেদের লোকদের তালিকায় স্থান দিয়েছেন বলেও দাবী তাদের। তবে চেয়ারম্যানের আরও অনেক অনিয়মের কথা জানান এই প্রদিবেদকের কাছে। যা পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে পাঠকের সামনে।

    এবিষয়ে চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি আমি জানি না। তবে কিছু ভুলক্রটি হয়েছে এটা সত্য। সরকার কিছু লোকের তালিকা চেয়ে চিঠি দিলে আমি প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদেরকে ভাগ করে দায়িত্ব দেই। তারা ইউনিয়নের উদ্যোক্তাকে নিয়ে তালিকা তৈরী করেছে। পরে জানতে পেরেছি তালিকাটি সংশোধন করা হচ্ছে।

    এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাননূভা নাশতারান এই প্রতিবেদককে জানান, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি জানি না। এখনো সংশোধন করা যাবে। তালিকাটি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ