• আইন ও আদালত

    সুজানগরে গ্রাহকদের ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা জেকা বাজার

      প্রতিনিধি ১৩ জুন ২০২২ , ৪:০৩:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    শিহাব আহম্মেদ-ক্রাইম রিপোর্টার:

    সুজানগরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে হাজারো গ্রাহকের প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছেন অবৈধ এমএলএম কোম্পানি জেকা বাজার লিমিটেড এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টর সাইদুল বাশার ও এজেন্ট আনিসুর রহমান ।

    কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে এই প্রতারক চক্রের হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবীতে গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে প্রতারণার শিকার ক্ষতিগ্রস্থ’ গ্রাহকেরা। উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের খলিলপুর জেকা বাজার লিমিটেড স্থানীয় শাখার সামনে সুজানগর-কাজিরহাট রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

    প্রতারণার শিকার গ্রাহকেরা জানান, উচ্চ মুনাফার লোভে অনেকেই নিজেদের পেনশনের টাকা, জমি বিক্রির টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকা উত্তোলন করে, বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন করে,বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে বিনোয়োগ করেন।

    খলিলপুর গ্রামের মঞ্জিল হাসান নামে এক ব্যক্তি বলেন আমি অনেক কষ্ট করে ৩২ লাখ টাকা রেখেছিলাম কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল মনে হয়। আমার মতো স্থানীয় ১ হাজারের অধিক গ্রাহকের মাথায় হাত দিশেহারা প্রায় সবাই। মো.মোজ্জামেল হোসেন

    নামে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিমাসে এক লাখ টায় ৩০ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে ৪১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কি হবে জানিনা। মনসুর রহমান নামে ক্ষতিগ্রস্থ অপর গ্রাহক বলেন, বেশি লাভের আশায় স্থানীয় গ্রামের বাশার ও আনিস মাষ্টারের মাধ্যমে আমি ৭১ লাখ টাকা এমএলএম কোম্পানি জেকা বাজারে বিনিয়োগ করেছি। যে কোন মূল্যে টাকা ফেরত পেতে চাই।

    জাহাঙ্গীর আলম ও নূর আলী নামে খলিলুপর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক জানান, এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা করে লাভ হবে এই প্রলোভনে পড়ে শিক্ষক আনিসের মাধ্যমে আমরা এমএলএম কোম্পানি জেকা বাজারে কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্ত অবৈধ এই কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় গ্রাহকদের চাপে শিক্ষক আনিস মাষ্টার ও বাশার কয়েক মাস আগে এলাকা থেকে উধাও হয়েছেন।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে জেকা বাজার লিমিটেড নামে অবৈধ একটি এমএলএম কোম্পানির পাবনা জেলার ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে সাইদুল বাশার ও এজেন্ট হিসেবে খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক আনিসুর রহমান যুক্ত হন। এবং সুজানগর উপজেলা সাগরকান্দি ইউনিয়নের খলিলপুরে কোম্পানিটির পাবনা জেলা শাখার প্রধান কার্যালয় করা হয়। ওই শাখার মাধ্যমে তাঁরা দুইজন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছ থেকে গত দেড় বছরে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

    পরবর্তীতে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ওই কোম্পানির প্রতারণার বিষয়টি ধরা পরার পর গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য চাপ দিলে কোম্পানির স্থানীয় খলিলপুর শাখাটি বন্ধ করে কোম্পানির ফাইন্যান্স ডিরেক্টর সাইদুল বাশার ও এজেন্ট আনিস মাষ্টার এলাকা থেকে উধাও হন।

    এদিকে, গত প্রায় ৬ মাসেও গ্রাহকেরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও প্রায় ৪ মাস ধরে বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে।

    বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিনুজ্জামান জানান, গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ৩দিনের ছুটির দরখাস্ত দিয়ে প্রায় ৪ মাস ধরে বিদ্যালয়ে না এসেও নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করছেন শিক্ষক আনিসুর রহমান। একাধিকবার ওই শিক্ষককে মোবাইলে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসার জন্য বলা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন না।

    এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই কোম্পানির এজেন্ট আনিসুর রহমান মোবাইল ফোনকলে জানান, আমি নিজে সহ আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রায় ২ কোটি টাকা অবৈধ জেকা বাজারে বিনিয়োগ করে এখন দিশেহারা। গ্রাহকদের চাপে আমি গত কয়েক মাস ধরে খলিলপুর নিজ এলাকায় যেতে পারছিনা।

    এজন্য কোম্পানি থেকে টাকা ফেরত পেতে গত ফেব্রয়ারী মাসের ২০ তারিখে পাবনা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে কোম্পানির ফাইন্যান্স ডিরেক্টর খলিলপুর গ্রামের সাইদুল বাশারের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

    আমিনপুর থানার ওসি রওশন আলী জানান, বিষয়টি তিনি স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে মৌখিকভাবে অবগত হয়েছেন। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পরপরই অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রওশন আলী জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম, খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ