• গণমাধ্যম

    সফলতা কী! সাংবাদিক শিহাব

      প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২২ , ৬:১৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    সফলতার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস আর বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প। একটা জরিপে দেখা গেছে যে শতকরা ৮০-৯০% লোক চাকরি পায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য।আপনার কাছে সুযোগ থাকার পরেও এটার যথার্থভাবে সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে মনে রাখবেন আপনার দৃষ্টিশক্তি বা মনোবল অভাব রয়েছে আপনার ভিতরে।

    অনেক মানুষের কাছে হাতের নাগালে হীরার খনি থাকলে সেটা ব্যবহার করতে পারে না সঠিক দৃষ্টিকোণের জন্য ।লক্ষ্য করলে দেখবেন দূর থেকে সব কিছুই কত সুন্দর দেখায় বাস্তবে তেমনটা হয় না। নদির অপর পাশে ঘাসকে অনেক উজ্জ্বল দেখায়, মনে হয় এটা সবুজের লিলা কিন্তু বাস্তবে এটা অন্য রকমের দূরবর্তী সম্ভবনা মানুষের মনকে উজ্জ্বল করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সুযোগ -সম্ভবনা বোঝার ক্ষমতা যার ভিতরে থাকবে না, তার দরজার পাশে যদি সুযোগ এসে কড়া দিলেও সে টের পাবে না।

    সফলতা কী?
    সত্যি বলতে সফলতার সংজ্ঞা বলতে কোন কিছু নেই। যারা সফলতা শীর্ষ পৌঁছেছে তাদেরকে সফলতা কি তাদের সংজ্ঞা হলে বিষয়বস্তু চয়েন করে তার পিছনে লাগাতার পরিশ্রম করা, যতক্ষণ না সফল হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত লেগে থাকার নামই সফলতা। সাফল্যের কোন রহস্য নেই। সাফল্য হলো মূল আর্দশ্যকে নিয়মিত প্রয়োগ করার ফলশ্রুতি মাত্র।

    “একটি যথার্থ উদেশ্য উওরোওর উপলব্ধি নামই সফলতা “
    সফলতা কোন গন্তব্য পৌছানো নয়, সফলতা একটা সফর বাহির হওয়া মাত্র। বাহিরে কোন শক্তি আপনাকে সাফল্যের অনুভূতি দিতে পারবে না। এই অনুভূতি আপনাকে নিজ থেকেই উপলব্ধি করতে হবে। আত্মিক পূর্ণতা ব্যতীত সমস্ত সাফল্যই শূন্য হয়।কিছু না করলে বিজয়ী ধ্বনি শোনা যায় না, যারা শক্তি রেখে চলে তারা কখনো হারে না ব্যথর্তা একটা পরীক্ষা মাত্র।

    যদি সফল হতে চাও তবে ব্যর্থতার হার কে বাড়িয়ে দাও তাহলে সফলতা আপনার কাছে হানা দিবে। সাফল্য লাভের পর মানুষের মনে শুধু সফলতা চোখে পড়ে এর পিছনের ব্যর্থতা কে কেউ দেখে না। মানুষ সফলতার গল্প শুনতে চাই ব্যথর্তার গল্প কেউ শুনতে চাই না। মানুষ এটাও বলে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ছিলে তাই সাফল্য পেয়েছে। আসলে ঠিক জায়গায় কেউ থাকেনা, সবাই কে ঠিক জায়গা বেচে নিতে হয়, সময় কারও ঠিক থাকে না সময়কে ঠিক করতে হয়।

    কিভাবে সফলতা অর্জন করা যায়?
    জীবনে আসল রহস্য কি, লাইফের একটা করতে চাই লে অন্য আরেকটা হয়ে যায়। ডিসিশন ঠিক ভাবে নিতে পারি না। জীবনে যেমন সুখ আছে ঠিক তার বিপরীতে দুঃখ ও আছে, সুখ সীমিত সময়ের জন্য দুঃখ থাকে অনেক ক্ষন যা মনে থাকে আজীবন।জীবনে অনেক যন্ত্রণা ও হতাশা আছে অনেক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে যায়, যা কোন দিন ও ঘটে যাওয়া কথা না।

    আমাদের জীবনের এ-সব হয়, সব কিছু মিলিয়ে মানুষ ঘটিত হয়। আমরা আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না তবে আমরা আমাদের ডিসিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এটা আমাদের হাতে আছে।শুধু অসফল ব্যক্তিরা কঠিন সমস্যা কিংবা খারাপ সময় পার করে না সফল ব্যক্তিরা ও খারাপ এবং অসময় পার করে থাকে। খারাপ সময়ে ধৈর্য ধারণ করুন একদিন বিজয়ের বাঁশি বাজিয়ে এইগুলোও বিদায় করতে পারবেন।

    একটা গাছের বীজ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে কোন গাছের বীজ হবে সে কি ধানের বীজ হবে নাকি আমের বীজ হবে ঠিক মানুষের ও বেছে নেওয়া ক্ষমতা নেয় সে কোথায় জন্ম গ্রহন করবে।মানুষ তাদের পিতামাতা নির্বাচন করতে পারে না। হতাশ হয়ে বসে থাকার কোন মানে নাই আপনি কে সেটা আপনার কর্মে বলে দিবে আপনি কি তার আগে না

    ১। সিদ্ধান্ত: 
    আপনার সিদ্ধান্ত পারে আপনাকে পরিবর্তন করতে। কোন কাজ শুরু করতে হলে প্রয়োজন একটা সিদ্ধান্ত এর উপর ভিত্তি করে আপনা কাজটা কতটা সফল হবে তা বলে দেয়। আপনার একটা সিদ্ধান্তই পারে সে কাজকে কি করে শেষ করতে হয় তার সঠিক ব্যাখা সাফল্যের চালিকাশক্তি আসে সিদ্ধান্তের উপরে, মানুষের মন যা কল্পনা করে, বিশ্বাস করে মানুষ তা অর্জন করতে পারে। সাফল্য ও সমৃদ্ধি মানুষের চিন্তা ও সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কি চিন্তা শক্তি আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। সাফল্য কোন আশ্চর্যের কোন ঘটনা নই, অনেক দিনের সাধনার ফলশ্রুতি মাত্র।

    ২।দায়িত্ববোধ: সাহসী মানুষরা দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। যাদের মনে ভয় কাজ করে তারা দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। দায়িত্ব নেওয়া মানে হলো ঝুঁকি নেওয়া। বেশিরভাগ লোকই দায়িত্ব না নিয়ে স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে চায় তবে দায়িত্ব হলো এমন একটা জিনিস যা একদিন না একদিন নিতে হবে।দায়িত্ব নিতে হয় বিচার বিবেচনা করে আপনি কি আদৌও পারবেন এই কাজটি সম্পন্ন করতে। যদি আপনার মনে হয় আপনি এইকাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন তাহলে সেই কাজের দায়িত্ব নেওয়া।দায়িত্ব নেওয়া অর্থ হলো সমস্ত খুটিনাটি পযবেক্ষন করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। দায়িত্বশীল হোন দেখবেন সব কাজ খুব সহজে করতে পারবেন। একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির ঘটনা বলি।

    কোন এক কোম্পানীতে তাদের চেয়ারম্যান বিদায় সম্ভবণের সময় নতুন চেয়ারম্যান এর জন্য ২ টি চিঠি লিখেন এবং তা আলাদা আলাদা খামের মধ্যে দিয়ে বলেন যখন পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেবে যা মোকাবিলা করা তুমার পক্ষে সম্ভব হবে না তখন প্রথম খামটি খুলবে, ২য় খামটি তখনই খুলবে যখন এই কোম্পানি দায়িত্ব তুমার পক্ষে আর সম্ভব হবে না তখনই খুলবে।কয়েক বছর পর যখন গুরুতর সংকট পড়লো চেয়ারম্যান তার আলমারি থেকে ওই ১ম খামটি খুলে দেখলো এতে লেখা ছিলো এই সংকট এর জন্য পরবর্তী চেয়ারম্যান এর ঘাড়ে দোষ চাপাও। কয়েক বছর পর আরেকটা সংকট আসলো তখন ২য় খামটি খুলে দেখে এতে লেখা ছিলো তোমার দিন শেষ। এইরকম ২ টি খাম লেখে পরবর্তী চেয়ারম্যান এর জন্য রেখে দাও। দায়িত্ব শীল ব্যক্তিরা তাদের ভুলত্রুটি স্বীকার করে নেন এবং এই ভুল থেকে শিক্ষা নেই।

    ৩।পরিশ্রম: 
    রাতারাতি কোন সাফল্য পাওয়া যায় না। সবাই চাই বিজয়ী হতে কিন্তু কতজন পারে বিজয়ী হতে। বিজয়ী হতে কঠের পরিশ্রম ও আত্নত্যাগের প্রয়োজন হয়। পরিশ্রমের কোন বিকল্প রাস্তা নেই। যত পরিশ্রম করবে তত বেশি সাফল্যের কাছে পৌঁছাতে পারবে। শুধু পরিশ্রম করলে হবে না ঠিক সময়ে ঠিক জায়গার কাজ টা করতে হবে তাহলে পরিশ্রম এর ফল পাওয়া যাবে। আপনি যদি মনে করেন মানুষ কি করে এমন কাজকর্ম করে তাড়াতাড়ি সফলতা পেয়েছে, আপনি শুধু তাদের সফলতা দেখেছন এই সফলতার পিছনে কত পরিশ্রম করেছে তার কোন ঠিকঠিকানা নেই। 

    যারা সফল হয় তারা জিজ্ঞেস করে কতটা বেশি কাজ করতে হবে, তারা এটা জানতে চায় না কত কম কাজ করতে করতে হবে, তারা জানতে চায় কতঘন্টা বেশি সময় লাগবে কত কম সময় নয়। আমরা যা কিছু ব্যবহার বা ভোগ করি এসব জিনিসের কারো না কারোর কঠিন পরিশ্রমের ফল। কিছু কিছু কাজ দৃশ্যমান আর কিছু আগোচরেই থেকে যায়।অনেক মানুষ অলস সময় আর অবসর সময় এগুলোর মধ্যে পার্থক্য জানে না। অলস সময় হলো সময়ের অপচয় করা আর অবসর সময় হলে পরিশ্রম করে উপার্জন করতে হবে। আবার অনেকে আছে এই অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে টাকাতে রূপান্তর করে কারণ তাদের মাথায় একটা জিনিস কাজ করে পরিশ্রম করলে তার ফল পাওয়া যায়।

    দৃঢ় বিশ্বাস থেকে অঙ্গীকারবদ্ধতা জন্মায়।যতই পরিশ্রম করবেন ততই ভালো ফলাফল পাওয়া শুরু করবেন, যখল ফলাফল পাওয়া শুরু করবেন তখনই পরিশ্রম কে আর পরিশ্রম মনে হবে না এটা হবে একটা খেইলের মতো। আমরা চাইলে প্রতিনিয়ত প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারি। দেখুন না হাঁস জলের মধ্যে কত সুন্দর করে চলাচল করে, কিন্তু উপরে সবসময় মসৃণ ও শান্ত তার পরিশ্রম বোঝা যায় না।সত্যি বলতে সাফল্য লাভের কোন জাদু বা মন্ত্র নেই শুধু আছে অকাল্ন পরিশ্রম। যারাই কাজ করে তাদেরই সাফল্য আসে। যারা দেখে তাদের নয়। দেখুন না যে ঘোড়া গাড়ি টানে, সে ঘোড়া লাথি মারতে পারে না। আবার যে ঘোড়া লাথি মারে সে ঘোড়া গাড়ি টানতে পারে না।

    ৪।অধ্যবসায়র: 

    অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। প্রত্যক মানুষের অধ্যবসায়ের প্রয়োজন, যাদের দক্ষ আছে তাদের ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন, এই পৃথিবীতে অনেক মানুষের দক্ষতা আছে কিন্ত তারা সফল হতে পারে না, তাদের মধ্যে অধ্যবসায়ের শক্তি নেই। আপনার ক্ষমতা সর্বোওমরুপে প্রকাশ করা সহজ নয়।পথে অনেক বাধা-বিপত্তি থাকে, বিজয়ীরা এই বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আরও কঠোর প্রতিজ্ঞা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাবতর্নের ক্ষমতা রাখে। নির্ভরশীলতা,দায়িত্বশীলতা এবং চরিত্রের নমনীয়তা ছাড়া কার্যক্ষতা বোঝা সরূপ হয়ে থাকে। বয়স,অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, নিম্নবণিত গুভ-সম্পন্ন ব্যাক্তিদের সর্বদাই চাহিদা আছে।অধ্যবসায় বা হার স্বীকার না করে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প।

    যে কাজ শুরু করা হয়েছে তা শেষ করার অঙ্গীকারই অধ্যবসায়। হয়তো আপনার আশেপাশে অনেক মানুষ দেখে থাকবেন শুরুতে এমন কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু তাদের ক্রমাগত শ্রমসাধ্য অনুশীলন সহনশীলতা নেই বলে শেষ করতে পারে না। লক্ষ্য স্থির থাকলে অধ্যবসায় হওয়া যায়। যে মানুষের জীবনে কোন লক্ষ্য নেই, তিনি কখনো অধ্যবসায় হতে পারে না,এবং জীবনের পূর্ণতা ও লাভ করতে পারে না।

    কলমে-
    লেখক ও সাংবাদিক
    শিহাব আহম্মেদ
    সম্পাদক, আলোকিত ৭১ সংবাদ

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ