• আমার দেশ

    রেল ভ্রমণে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

      প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২২ , ৩:৩১:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ

    ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনার সংক্রমণ রোধে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলবে।১৫ জানুয়ারি শনিবার থেকেই ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে। এজন্য বুধবার বিকাল থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক সময়ে রেলে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়।

    বুধবার থেকে প্রতিদিন ১ কোটি টাকা কম বিক্রি হবে। এদিকে ২৫৪ যাত্রীবাহী মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন কীভাবে চলবে, এ বিষয়ে আজ-কালের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হবে। এসব ট্রেনও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে-এমন সিদ্ধান্ত দ্রুতসময়ের মধ্যেই আসতে পারে বলে জানা গেছে।

    রেলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, সরকার যাত্রীর সুরক্ষার কথা মাথায় নিয়ে লোকসান দিয়ে ট্রেন চালাবে। সেখানে যাত্রীরা যদি মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে, তবে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে কঠোর হতে। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

    রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা রোধে রেলে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকাল থেকে মোট আসনের অর্ধেক টিকিট অগ্রিম বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি থেকে সবকটি আন্তঃনগর ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। এজন্য যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না। এতে প্রতিদিন কোটি টাকা লোকসান হবে। সরকারি নির্দেশনার পাশাপাশি রেলওয়ের নির্দেশনা শতভাগ মানতে হবে যাত্রীদের। নির্দেশনা না মানলে স্টেশনে প্রবেশ এবং ট্রেনে কাউকে উঠতে দেওয়া হবে না। আমরা ট্রেনের সংখ্যা কমাচ্ছি না। তবে যদি কোনো সেকশনে যাত্রী একেবারেই কম হয়, সেক্ষেত্রে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাত্রীদের কাছে অনুরোধ, সরকার এবং রেলওয়ের নির্দেশনা মেনে ট্রেনে ভ্রমণ করুন। কোনো অবস্থাতেই মাস্ক ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ এবং ট্রেনে উঠবেন না। এর হেরফের হলে প্রয়োজনে আমরা কঠোর হব।

    বুধবার সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশন চত্বর, টিকিট কাউন্টার, প্রবেশ এবং বের হওয়ার গেটসহ প্ল্যাটফরম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে করোনা সুরক্ষায় কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন। মাইকিং করে অনুরোধ করা হচ্ছে প্ল্যাটফরমে নির্ধারিত বসার স্থানে দূরত্ব বজায় রেখে বসার। কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টিকিটপ্রত্যাশীদের বলা হচ্ছে দূরত্ব বজায় রেখে টিকিট সংগ্রহ করতে।

    ঢাকা রেলওয়ে বিভাগের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিদিন ৩৮ জোড়া অর্থাৎ ৭৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে গড়ে প্রায় ৫৮ হাজার যাত্রী চলাচল করেন। এছাড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে আরও প্রায় সমপরিমাণ যাত্রী চলাচল করে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বুধবার বিকাল থেকে আমরা অর্ধেক আসনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করি। কাউন্টার থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ২৮ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। বুধবার থেকে ১৪ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। সমপরিমাণ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হবে। স্বাভাবিক সময়ে অনলাইনেও প্রায় ৫৫ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। তিনি বলেন, পুরো স্টেশনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। করোনা সুরক্ষায় বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যানার ফ্যাস্টুন লাগানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, মাস্ক এবং তাপমাত্রা যথাযথ না থাকলে যাত্রীদের কাছে টিকিট থাকলেও স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বুধবার নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে বার্তা পাঠানো হয়েছে। দূরত্ব বজায় রেখে টিকিট সংগ্রহ এবং মাস্ক পরিধান অবস্থায় যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ও ট্রেনে উঠতে হবে।

    এজন্য রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, বুধবার বিকাল থেকেই অর্ধেক আসনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিক্রীত টিকিট কোনো অবস্থাতেই ফেরত নেওয়া হবে না। স্টেশন ও ট্রেনে কর্মরত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। শুধু যাত্রী নয়, রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদেরও শতভাগ নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক সময়েও ট্রেন পরিচালনায় লোকসান গুনতে হয়। কারণ, ট্রেন সাধারণ মানুষের নিরাপদ গণপরিবহণ। করোনাকালে অর্ধেক আসনে টিকিট বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান হবে। বিগত সময়ে রেলওয়ের বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ পয়েন্টগুলোয় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

    রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার যুগান্তরকে জানান, করোনায় বাস-লঞ্চে আসন সংখ্যার বিপরীতে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। রেলে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার এ সময়েও সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। এখন আবারও অর্ধেক আসনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে না। তবে যাত্রীরা যেন সর্বোচ্চ করোনা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে ট্রেনে ভ্রমণ করেন, আমরা সেটাই চাচ্ছি।

    এর আগে গত দুই বছর করোনার মধ্যে লকডাউনের সময় ট্রেন বন্ধ ছিল। এরপর বিধিনিষেধের সময় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলেছে ট্রেন। এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও লোকসান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ