• Uncategorized

    মুজিব নগর সরকার ও বাংলার স্বাধীনতা

      প্রতিনিধি ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৩:২৮:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মুজিব নগর সরকার ও বাংলার স্বাধীনতা

    ফাহিম হাসান সানি-বিশেষ প্রতিনিধি:

    ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য একদিন।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এ বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।

    ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।

    ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরদিন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যমে সরকারের শপথ গ্রহণের সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়।

    মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে। এই সরকার মুক্তিবাহিনীকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য তাদেরকে একটি সাংগঠনিক কাঠামোতে নিয়ে আসেন। তারপর এ বাহিনীতে পদসোপানিক নেতৃত্ব সুনিদিষ্ট করে দেন। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
    মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দ নানা রকমের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ মাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিচের জীবন বাজি রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এক বেতার ভাষণে বলেন, “আমরা তিতুমীর সূর্যসেনের বংশধর স্বাধীনতার জন্য যেমন জীবন দিতে পারি, তেমনি আমাদের দেশ থেকে বিদেশী শত্রু সেনাদের চিরতরে হটিয়ে দিতে আমরা সক্ষম।” এভাবে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগাত।
    মুজিবনগর সরকার একটি বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তোলে। এ প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্ত অঞ্চলে শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়াও এই প্রশাসন ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখাশোনার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
    মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য “মুজিবনগর সরকার” কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। এছাড়াও মুজিবনগর সরকার এসব প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান নিশ্চিত করে।
    মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করার জন্য ভারতের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে। ভারত সরকার এক্ষেত্রে উদারভাবে সহায়তা করে। ১৯৭১ সালের ৮ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের নিকট অস্ত্র সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন।
    মুজিবনগর সরকার সবসময় বাংলাদেশের জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জনগণের করণীয় সম্পর্কে এ সরকার নির্দেশনা দিত। এছাড়াও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বেতার ভাষণের মাধ্যমে দেশবাসিকে উজ্জীবিত রাখতেন।
    বাংলাদেশের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের নিকট চিঠি লিখে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন কামনা করেন। মুজিবনগর সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্ব ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করে।
    মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে মুজিবনগর সরকার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সরকার পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা, নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরে। এ সরকারের প্রচেষ্টার কারণে বিশ্ব বিবেক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলে।
    বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে মুজিবনগর সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য “মুজিবনগর সরকার” ভারতের উদাত্ত সমর্থন পায়। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের মুক্তিকামি রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন লাভ করে বাংলাদেশ।

    উপরিউক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অনন্য। নানামুখী চাপ ও ঝামেলার মাঝেও “মুজিবনগর সরকার” কাজ করে গেছে বিরামহীনভাবে। যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ