• জনপদ

    “বাবা আমাকে নিয়ে নামাজে যেতে চেয়েছিলেন”

      প্রতিনিধি ২২ জানুয়ারি ২০২৪ , ১০:০২:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    তাহমিদ ফেরদাউস-পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি:

    পদ্মার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিডুবির দুই দিন পরও খোঁজ মেলেনি মাস্টার হুমায়ুন কবিরের। শোকে-দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। হুমায়ুনের পিরোজপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার দুই শিশু ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করছে। যযৃতার ১০ বছর বয়সি ছেলে ইয়াসিন আহাজারি করতে করতে বলে, ‘শুক্রবার সকালে এসে বাড়িতে আমার মার্কশিট দেখার কথা ছিল। মার্কশিট দেখে আমাকে নিয়ে দুপুরে নামাজ পড়তে যাবে মসজিদে—এই ছিল বাবার সাথে আমার শেষ কথা।’

    মেয়ে কামুন্নাহার বলেন, ‘আমার বাবা মঙ্গলবার রাতে মাকে শেষবারের মতো কল দেয়। কল দিয়ে বলে, শীতে যেন কোনো কষ্ট না হয়। এ কথাই যে বাবার শেষ কথা হবে তা বুঝতে পারিনি। বাবা আমাদের প্রতিদিন ১০-১২ বার কল দিত। বিভিন্ন সময় ভিডিও কল দিত। এখন আমাদের খোঁজ নেবে কে। আমাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম হলো আমার বাবা। এখন আমাদের পরিবার কীভাবে চলবে তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের লেখাপড়া কীভাবে চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি।’

    বুধবার সকালে পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি রজনীগন্ধা নয়টি গাড়ি নিয়ে ডুবে যায়। এর সেকেন্ড মাস্টার ছিলেন হুমায়ুন কবির। তিনি ২০১১ সালে বিআইডব্লিউটিএতে যোগ দেন বলে জানায় তার পরিবার। হুমায়ুনের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘আমরা এ দুর্ঘটনার খবর শোনার পরে ঘাটে চলে আসি। এসে আমরা ট্রলার নিয়ে নদীতে খুঁজতেছি কিন্তু সন্ধান পাই নাই। আমরা উদ্ধার-তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন করতে চাই। বৃহস্পতিবার মাত্র একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু আমার ভাইয়ের কোনো হদিস নেই।’

    পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘হুমায়ুন একজন সরকারি চাকরিজীবী। তাই সরকারি বিধিমোতাবেক তার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’বুধবার সকালে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট প্রান্তে রজনীগন্ধা ডুবে যায়। হুমায়ুন কবিরের খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. মহসিন ভূঁইয়া।

    বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন হুমায়ুন সম্পর্কে বলেন, ‘রজনীগন্ধা দুর্ঘটনায় পড়লে ফেরিতে থাকা সবাইকে রক্ষার জন্য হুমায়ুন সজাগ করেন।’ স্থানীয়রা জানায়, হুমায়ুন ফেরির লোকজনকে ট্রলারে তুলে দিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে তিনি নিখোঁজ হন। অনেকের ধারণা, ফেরিটি যখন ডুবছিল তখন হয়তো কোনো কিছুর চাপায় ফেরিতে আটকা পড়েন হুমায়ুন। দুর্ঘটনার সময় ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ফেরি থেকে। হুমায়ুন কবিরসহ অন্য আরও কেউ এখনও নিখোঁজ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।

    ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধারের কাজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে স্থগিত করা হয়। বুধবার দুটি ও বৃহস্পতিবার একটি ট্রাক উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম। ফেরিটি ডুবে যাওয়ার ৩১ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে রুস্তম মালবোঝাই একটি ট্রাক ওপরে তুলে নিয়ে আসে। অন্য গাড়িসহ ফেরিটি উদ্ধারকাজ চলছে।’

    দুর্ঘটনায় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমিনকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ