• রাজশাহী বিভাগ

    বদলগাছীতে বাঁশীর সুরে জীবন যাপন-আবদুল গফুর

      প্রতিনিধি ৮ নভেম্বর ২০২১ , ৪:০৭:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    এনামুল কবীর এনাম-নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

    নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় বাঁশীর সুরে জীবন যাপন করে ।পায়না কোন সরকারের সহযোগিতা। বয়স ষাটের কোঠায়। এ বয়সেও স্ত্রীর সাহায্যে তৈরি করেন নানান প্রকারের বাঁশি। এসব বাঁশি বিভিন্ন জেলার হাট-বাজার, ও মেলায় বাজিয়ে বিক্রি করেন। জানা গেছে বদলগাছির উপজেলার দাউদপুর গ্রামের বাঁশিপাগল আবদুল গফুর গাজীর কথা। দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগারে চলে তার পাঁচ সদস্যের সংসার , পায়না কোন সরকারের সহযোগিতা। তাকে সরকারীভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন বলে তিনি জানান।

    বাঁশির সুরে মুগ্ধ করেন মানুষের হ্নদয় কে। নিজের হাতে তৈরি বাঁশি পথে পথে বিক্রি করেন। ৩০ বছর ধরে পথ থেকে পথে ঘুরে ঘুরে বাঁশিতেই জীবিকা খোজেন আবদুল গফুর গাজী। তার বাড়ী নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার দাউদপুর গ্রামে । একসময় যে বাঁশি বাজানো ছিল তার নেশা, ভাগ্যপরিক্রমায় আজ তা হয়েছে পেশা। জীবিকার তাগিদে কখনও রেলস্টেশন, কখনও ফুটপাত কিংবা বাজারে ফেরি করে চলেন বাঁশি। রাতও কাটে সেখানে।

    স্থানীয়রা সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী কে জানান, ছোটবেলা থেকে গফুর কাজীর বাঁশি তারা শুনে শুনে বড় হয়েছেন। এই বাঁশি বাঁশি করে তিনি তার জীবনের পুরোটা সময় পার করেছেন। গফুর কাজীর বাঁশির সুর শুনে ছোট থেকে বড় সবাই-ই ছুটে আসে। তার পাশে বসে বাঁশির সুর শোনে। তাদের খুব ভালো লাগে গফুর কাজীর বাঁশির সুর শুনতে। এ ছাড়া পথে পথে বাঁশি বাজিয়ে নিজের তৈরি করা বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। সেই বাঁশিগুলো ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনে বাড়িতে নিয়ে যান ক্রেতারা। মূলত, ক্রেতারা গফুর কাজীর বাঁশির সুর শুনে কেনেন তার বাঁশি।

    গফুর কাজীর স্ত্রী জমিলা খাতুন সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী কে জানান, সংসারের অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বাঁশি তৈরির কাজে তিনি তার স্বামীকে সহযোগিতা করেন। প্রস্তুতকৃত বাঁশিতে রং বার্নিশ, তা পোড়ানো ও রোদে শুকাতে দেওয়ার কাজ তিনি করেন। সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০টা বাঁশি তৈরি করে তা বিক্রির জন্য তার স্বামী জেলায় জেলায় নিয়ে যান। কোনো দিন ১০ থেকে ১২টা আবার কোন দিন ১৫ থেকে ২০টা বাঁশি বিক্রি করে বাড়ীতে ফিরে আসে।তিনি আরও জানান, তার নিজেরও শুনতে ভালো লাগে, তার স্বামীর বাঁশি বাজানো নানান প্রকারের সুর।

    বাঁশিওয়ালা গফুর কাজী সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী কে জানান, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মেলায় হাটে বাজারে বাঁশি বিক্রি করতেন। তার বাবা বাঁশিতে সুর তুলতে পাড়তেন না বিধায় তিনি নিজে নিজে চর্চা করে বাঁশিতে সুর তুলতেন। সেই সুরে তার এবং তার বাবার বাঁশি বেশি বিক্রি হতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি পৈতৃক এই ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। নিজে তৈরি করেন বাঁশি এবং তাতে সুর তুলে বিক্রি করেন বাজারে। জীবনের শেষ ইচ্ছা, বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান বাঁশি শিল্পী হওয়ার। তাই এখন পর্যন্ত বাজিয়ে চলেছেন আর বিক্রি করে যাচ্ছেন দেশের ঐতিহ্যের প্রতীক বাঁশের বাঁশি।

    এদিকে বাঁশিওয়ালা গফুর কাজী সম্পর্কে বদলগাছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী কে জানান, উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গফুর কাজীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে, তার বাঁশির সুর শোনানোর জন্য। সে খুব ভালো বাঁশি বাজিয়ে থাকেন। এ ছাড়া উপজেলা থেকে তার এবং তার পরিবারের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। এবং সামনের দিনগুলোতে আরও সুবিধা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।

    বদলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মণ্ডল সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী কে বলেন, বিগত দুই বছরে বাঁশিওয়ালা গফুর কাজীকে পরিষদ থেকে ভিজিডি কার্ড প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে পরিষদ থেকে আর কোনো সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে পরিষদ থেকে তাকে আবার সুবিধা প্রদানের সুব‍্যাবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ