• বরিশাল বিভাগ

    বাউফলের দাখিল মাদ্রাসায় ১৮ বছর ধরে শিক্ষক-কর্মচারী আছে, নেই শিক্ষার্থী!বেতন ভাতাও উত্তোলন করছেন।

      প্রতিনিধি ২৮ মে ২০২২ , ৮:৫১:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

    আরিফুল ইসলাম কারীমী-স্টাফ রিপোর্টারঃ

    বাউফলে সূর্যমনী ইউনিয়নের পূর্ব ইন্দ্রকূল ফিরোজা কামাল বালিকা দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে নেই কোন শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সাল থেকে এমপিও ভুক্ত। ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন প্রতিষ্ঠান টিতে। গত ১৮ বছর যাবৎ বেতনভাতা উত্তলন করছেন তারা সরকারী নিয়ম অনুসারে। কাগজে কলমে ২০০-২৫০ ছাত্রী আছে এখানে। ঘটনা স্থলে গত বুধবার (২৫ মে) বিকাল ৩টায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাউকেই পাওয়া গেল না। ডাকা হল প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে। একটু তারাতারি ছুটি দেয়া হয়েছে তাই কোন শিক্ষার্থী নেই, বললেন সভাপতি।

    প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আসবাবপত্র বলতে একটি টেবিল এবং চারটি চেয়ার। নেই কোন ফাইল, খাতা পত্র কোন আলমিরা। এমনকি তাঁর কক্ষে জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর কোন ছবি নেই। বাঁশের সাথে জাতীয় পতাকা বাঁধা অবস্থায় মাদ্রাসার বারান্দায় আড়াআড়ি ভাবে ঝোলানো। মাদ্রাসার কোন শ্রেণীকক্ষে পাওয়া গেল না কোন ব্লাকবোর্ড। পরের দিন বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সময় ঘড়ির কাটায় ঠিক সারে ১১টা। বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই বিদ্যালয়ে।

    শিক্ষকদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় আবদুল মোতালে নামের এক ব্যাক্তি। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে। ২০০৪ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। ইবতেদায়ি ও দাখিল মাদ্রাসা (১ম-১০ম) মাদ্রসা এটি। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীও পাওয়া গেল না প্রতিষ্ঠানে। এমনকি ইবতেদায়ি ও দাখিলের শিক্ষার্থী হাজিরার খাতাও দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। অথচ প্রতিষ্ঠানের ১৩জন কর্মকর্তা কর্মচারি প্রতিমাসে ২লাখ ৮ হাজার টাকা বেতন উত্তলন করছেন নিয়মিত।

    ইবতেদায়িতে ৪জন, দাখিলে ৫জন শিক্ষক, অফিস সহকারী ১জন, একজন আয়া, একজন নাইট গার্ড ও একজন দপ্তরিসহ মোট ১৩জন কর্মকর্তা কর্মচারী বেতন ভাতা উত্তলনকরছেন যথা নিয়মে। খাতা কলমে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫০ কিন্তু উপস্থিতি ১জনও পাওয়া যায়নি। কাগজে উপস্থিতি গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। শ্রেনী শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যায় দাখিলের ২ জন এবং ইবতেদায়ির ৩জন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসার নামে ছুটি নিয়ে রয়েছেন বাউফলের বাহিরে।

    বিদ্যালয়ের সভাপতির পুত্রবধূ এবং দুই পুত্র চাকরি করছেন এখানে। পুত্রবধূ মাহফুজা সুপার হিসেবে এছাড়া এক ছেলে খাইরুল ইসলাম পিয়ন এবং অন্য ছেলে সিদ্দিকুর রহমান নৈশ প্রহরী পদে কর্মরত। অইরিন বেগম নামের একজন শিক্ষক ২০২১ সালের ৭নভেম্বর শেষ উপস্থিতি স্বাক্ষর করেছেন। এর পর আর গত ৭ মাস শিক্ষক হাজিরায় স্বাক্ষর নেই তার। অথচ বেতন উত্তলন করেছে প্রতি মাসে। মুঠোফোনে কথা হয় আইরিন বেগমের সাথে তিনি জানান, মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান তাকে বলেছেন বিদ্যালয়ের একটি খুঁটি থাকলেও সে নাকি বেতন পাবেন।

    বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (সুপার) মাহফুজা বেগম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আগে অনেক ছাত্রী ছিল। ২০০৯ সালের পর শিক্ষকদের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থী একবারে নেই। দুরের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করে এখান থেকে দাখিল পরিক্ষায় অংশগ্রহন করিয়ে বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখছি।”এ বিষয়ে সূর্যমনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, “তাঁর সম্পর্কে শিক্ষক আইরিন সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। তিনি এ নামের কাউকে চিনেন না।” এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মোঃনাজমুল হোসাইন বলেন, “শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলে কোন প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত থাকতে পারে না। আমরা তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠাবো।”

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ