• রাজশাহী বিভাগ

    পূর্নিমাগাঁতী গয়হাট্টায় বার আউলিয়া মাজার

      প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২১ , ৯:৪৫:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ লুৎফর রহমান লিটন-সলংগা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

    সিরাজগন্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নে গয়হাট্টায় বার আওলিয়া মাজার ও দাখিল মাদ্রাসা তাদের স্মৃতি চিহ্ন বহন করে চলেছে। কেন এই নাম করন, তার অতীত ইতিহাস অনেকে জানেন আবার অনেকেই জানেননা।
    ষোড়শ শতাব্দীতে ইরাকের বাগদাদ ও ইয়েমেন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আউলিয়া পীর দরবেশ, রাজা- বাদশাহ্’ র সন্তানেরা রাজ্য ছেড়ে দেশ ছেড়ে শুধুমাত্র ইসলাম প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তৎকালীন ভারত সাম্রাজ্যকে। এদের অধিকাংশই রাজ পরিবারের সদস্য ছিলেন। দেশের আনাচে কানাচে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত ভাবে আমৃত্যু কাজ করেছেন।

    ভিন্নমতালম্বি শাসক গোষ্ঠীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ইসলামের প্রসার ঘটিয়য়েছেন। ভিন্নমতালম্বি সৈন্যদের হাতে জীবন দিয়েছেন অনেকেই। যারা বেচেঁছিলেন তাদের অনেকেই কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। পীর- আউলিয়া- দরবেশ যারা এ দেশে এসেছিলেন তাদের মধ্যে বার জন ( ১২) জন ইসলাম প্রচারে আমৃত্যু কাজ করায় আজ আমরা মুসলমান জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় বহন করছি। এদের অধিকাংশের স্মৃতিচিহ্ন ও মাজার রয়েছে দেশের আনাচে কানাচে।

    তেমনি ষোড়শ শতাব্দীতে বাগদাদ শহর থেকে প্রাচুর্য আর ধনদৌলত ফেলে দেশ ছেড়েছিলেন ১২ জন আউলিয়া। উদ্দেশ্য ছিল তাদের বাকী জীবন ইসলামের জন্য উৎসর্গ করা। এই ১২ জন আউলিয়া উপস্হিত হন রাজা পৃথিরাজ এর রাজ্ত্বের এলাকা আজমীর শরীফে। আজমীর শরীফ এলাকায় এরা আস্তানা গড়ে তোলেন।এদের পরশে, সাহচর্যে ও গুনে মুগ্ধ হয়ে ব্যাপকহারে ইসলাম ধর্মে দীঘিত হবার সংবাদ পেয়ে রাজা পৃথিরাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রাজা তাদেরকে এক ঘইরা করার ঘোষনা দেন।

    যারা এই আদেশ অমান্য করে আউলিয়া দরবেশদের সাথে যোগাযোগ করবে বা এই আদেশ অমান্য করবে তাদেরকে কঠোর সাজা দেয়া হবে। রাজা পৃথিরাজ আরো কঠোর হয়ে ঘোষনা দেন এই আউলিয়া দরবেশদেরকে যদি কোন বাড়ী হতে খাবার সরবরাহ করা এবং তাদের সাথে কথা বলা যাবেনা। এই ঘোষনার পরও দলে দলে ইসলাম গ্রহন করায় রাজা পৃথিরাজ আবারও ঘোষনা দেন এই আউলিয়াগন যদি এই এলাকা ত্যাগ না করে তাহলে কোন পুকুর বা ডোবা থেকে এমনকি কোন কূপ হতে তারা পানি নিতে পারবেনা।

    এই নির্দেশ অমান্যকারীদের কঠোরতম সাজা প্রদান করার ঘোষনা দেন।অবস্হা বেগতিক দেখে ১২ জন আউলিয়া দরবেশ কোন উপায়ন্তর না দেখে এক সাথে তারা আজমীর শরীফ এলাকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা নৌকা পথে ঘুরতে ঘুরতে বর্তমান সিরাজগন্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নের গয়হাট্টা গ্রামে এসে থামেন। এই এলাকায় আশ্রয়ের ব্যবস্হা করে ফেলেন। বর্তমান গয়হাট্টা হাট- বাজার সংলগ্ন একটি ঘরে ১২ জন আউলিয়া শলা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন আশপাশ এলাকায় যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে তারা অবস্হান নেবেন এবং সেই উদ্দেশ্যেই পথে বের হন। যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে একে অপরকে সহযোগীতার জন্য সকলেই কাছাকাছি থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

    বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত শাহ সুফি সৈয়দ কুতুবুদ্দিন বাগদাদী (রহঃ) গয়হাট্টায় থেকে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি উল্লাপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার করেছেন তার মাজার গয়হাট্টা হাট- বাজারের প্রবেশের পূর্বেই। মাজার সংলগ্ন একটি মসজিদ ও বার আউলিয়া দাখিল মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়েছে তার স্মৃতি রক্ষার্থে।১২ জন আউলিয়ার অধিকাংশই শাহজাদপুর এলাকায়। একজন উল্লাপাড়া, একজন বনওয়ারীনগর ফরিদপুর ও একজন তাড়াশের নওগাঁতে।

    নওগাঁয়– মামা হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) ও ভাগনে হযরত শাহ শরীফ খান্দানী (রহঃ), শাহজাদপুর পৌর শহরের ছয়আনীপাড়ায় করতোয়া নদীর পশ্চিম পার ঘেষে অবস্হান নেন হযরত শাহ মখদুম শাহ দ্দৌলা (রহঃ), হযরত খাজা দানেশ মন্দ (রহঃ), হযরত খাজা নূর (রহঃ), হযরত খাজা আনোয়ার (রহঃ), ও হজরত ওস্তাদ শামসুদ্দিন আরজীন (রহঃ)। এদের মধ্যে খাজা নূর ব্যতীত আর সবাই পর্বতীতে শহীদ হয়েছিলেন।

    হযরত শাহ কালু( রহঃ) ও হযরত শাহ আফজাল বোখারী (রহঃ) শাহজাদপুরের নরিনা গ্রামে অবস্হান নিয়েছিলেন।
    হযরত শাহ হাবিবিল্লাহ (রহঃ) খুবই কামেল পীর আউলিয়া ছিলেন কিন্তু তার রাগ বেশী ছিল জন্যে হযরত শাহ মখদুম (রহঃ) তাকে করতোয়া নদীর পূর্ব পাড়ে বাদলবাড়ী এলাকায় থাকতে বলেন। বাদলবাড়ীতে কোন খর ছিলনা। গাছের নীচে হযরত শাহ হাবিবুল্লাহ (রহঃ) বাস করতেন। আমৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।হযরত শাহ ফরিদপুরী (রহঃ) বর্তমান পাবনা জেলার বনওয়ারী নগর ফরিদপুর অবস্হান নিয়েছিলেন। উল্লাপাড়ার গয়হাট্টায় হযরত শাহ সুফি সৈয়দ কুতুবুদ্দিন আস্তানা গড়েছিলেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ