• বরিশাল বিভাগ

    পটুয়াখালীতে মামলার বাদীকে জেল হাজতে, পুলিশসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

      প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২৩ , ১:২৬:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

    পটুয়াখালীতে মামলার বাদীর কাছে চাঁদা দাবি, অভিযোগ তুলে নিতে মারধর করে স্বীকারোক্তি মূলক মিথ্যা জবানবন্দী গ্রহণ ও জোড় করে পূর্ববর্তী পুরাতন মামলায় বেআইনি ভাবে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলা হাজতে প্রেরণের অভিযোগ এনে দুই পুলিশসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক ভুক্তভোগী। গত রোববার (১৩ আগস্ট) পটুয়াখালী সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট ১ম আমলী আদালতে মামলা দায়ে করেন রেজাউল করিম (ওরফে) রাসেল হাওলাদার (৩৮) নামের এক ব্যক্তি। রেজাউল দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউপির উত্তর মুরাদিয়া গ্রামের মৃত্যু রুহুল আমিন হাওলাদারের ছেলে।

    উক্ত মামলায় আসামিরা হলেন, পটুয়াখালী সদর থানায় কর্মরত এসআই মোঃ কামরুল ইসলাম (৪০), এএসআই বিএমআর লিমন (৪২) ও মৌকরণ ইউপির সদস্য ছাইদুল চৌকিদার (৩৮) কে মামলায় আসামী করা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

    মামলা সূত্রে ও বাদীর বক্তব্য জানা যায়, গত ১৮ জুলাই ২৩ ইং তারিখে আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর মিয়া বাড়ীর সামনে জোরা কবর এর সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে দুটি মটর সাইকেলে আসিয়া অস্ত্র ঠেকাইয়া আমাকে মোটরসাইকেলে অপহরন করিয়া জোর পূর্বক একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমার হাত পা বাধিয়া আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করে। আমার নিকট চাঁদা দাবী করিয়া চাঁদার দাবিতে আমার প্যান্টের বাম পকেট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়া যায়।

    সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যার ভয় দেখাইয়া আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়া টাকা দাবি করিয়া ০১৭১৯- ৫৯৭৯৬১ মোবাইল নম্বরে মোট পঁচিশ হাজার টাকা, আমার চাচা শশুড় এর নিকট হইতে ০১৭১৪-১৪৬৩৯৬ মোবাইল নম্বরে সতের হাজার টাকা, আমার বন্ধুর কাছ থেকে ০১৭৮২- ৬১৬ ৩৪৫ নম্বরে ২২ হাজার ৮৬০ টাকাসহ মোট ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৬০ টাকা মুক্তিপণ নেয়।
    এছাড়াও আমার মাছ ধরার ট্রলার ও জাল সহ রাখিয়া দেয়। পরে ১৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে আমার চোখ বাধিয় শ্রীরামপুর বাজার এর উত্তর পাশে ব্রিটিশ ব্রিজ সংলগ্ন গোরস্থানের পার্শ্বে ছেড়ে দেয়। আমি সন্ত্রাসীদের ভয়ে কিছুদিন চুপচাপ থাকি।

    কয়েকদিন পর আমি মানসিক ভাবে স্বাভাবিক হয়ে ২৯ জুলাই পটুয়াখালী সদর থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি।অভিযোগের পরাপরই বিবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশে থানা পুলিশ আমাকে হয়রানি ও অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিতে থাকে। পরে অভিযোগ না তোলার সিদ্ধান্ত জানাইয়া দেই এবং বিষয়টি সাংবাদিকদের আমি জানাই। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই কামরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে শহরের বিটাইপ এলাকায় আমাকে দেখা করতে বলে।

    গত ৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তাদের কথা মত আমি দেখা করলে, আমাকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত প্রিন্স ও আশিক নামের দুই আসামিকে অভিযোগ থেকে বাদ দিতে চাপ প্রয়োগ করে। এবং তাদের বাদ না দিলে ১০/১৫ টা মামলার আসামি করে হয়রানি করার হুমকি প্রদান করে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা।পরে আমাকে ভেবে চিন্তে জানানোর জন্য বিকেল পাচটা পর্যন্ত সময় বেধে দেয়। পরে আবার একই দিনে ফোন করে আমাকে এসআই কামরুল ইসলাম বনানী হোটেল মোড় এলাকায় দেখা করতে বলে।

    তাদের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারও দেখা হওয়ার পরে আমাকে নিয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার জুবিলী স্কুলের দক্ষিণ পাশে নতুন লেকের বেঞ্চের উপর নিয়া বসায়। সেখানে আগ থেকেই তিন নম্বর আসামি ছাইদুল চৌকিদার ওৎপেতে ছিলো। এসময় আসামীরা আমার কাছে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। না হয় টলার ও জাল কিছুই পাবো না বলে জানায়। এসময় আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা আমার মাথায় কানের পাশে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এসআই কামরুল ইসলাম ও এএসআই লিমন আমার শ্বাসনালী চেপে ধরে। এরপর আমাকে পটুয়াখালী সদর থানায় নিয়ে বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। আবারও গলা চেপে ধরে। আমাকে ভয়ে তাদের শিখিয়ে দেওয়া কথামত মিথ্যা জবানবন্দি রেকর্ড করে এই দুই পুলিশের এস,আই। পরে আমাকে ৮ মাসের পুরোনো একটি মামলায় আমার সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরেও আমাকে বেআইনি ভাবে জেল হাজতে চালান করে।

    গত ৭ আগস্ট আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে, গত ১৩ আগষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করেছি। যার মামলা নং- সিআর ১৩৭৪/২০২৩ ইং।

    এবিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ হুমায়ুন কবির বাদশা দৈনিক বরিশাল সমাচারকে বলেন, বাদীর উপর যে অত্যাচার নির্যাতন, হয়রানি ও বেআইনি ভাবে অপহরণের শিকার হয়েছে ভুক্তভোগী। মিথ্যা মামলা দিয়ে উল্টো জেল হাজতে প্রেরণের বিচার চেয়ে একটি মামলা দায়ে করি আমরা। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং পটুয়াখালী পৌরসভা ও পটুয়াখালী সদর থানার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন।

    এ বিষয় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জসীম উদ্দিন দৈনিক আলোকিত একাত্তর সংবাদকে জানান, আমি এখনও কোন কাগজপত্র হাতে পাইনি। তবে মামলা হয়েছে এ বিষয় অবগত হয়েছি, এখন বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশায় আইন অনুযায়ী তদন্ত চলবে বলে জানান তিনি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ