• রাজশাহী বিভাগ

    তানোরের সরনজাই ইউপিতে সাঈদের পরাজয়ের নেপথ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর নেতারা

      প্রতিনিধি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১১:৪৬:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    তানোর রাজশাহী প্রতিনিধি:

    রাজশাহীর তানোরের সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর দায়িত্বশীল নেতাকর্মীর বিশ্বাসঘাতকতায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব সাইদুর রহমান আবু সাঈদ (মোটরসাইকেল) প্রতিক নিয়ে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মোজাম্মেল হকের (চশমা) কাছে পরাজিত হয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খাঁন (চশমা) প্রতিক নিয়ে ২ হাজার ৩৯৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী অপর বিএনপি নেতা মতিউর রহমান খাঁন (আনারস) প্রতিক নিয়ে ২ হাজার ২৯৯ ভোট এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব সাইদুর রহমান সরকার আবু সাঈদ (মোটরসাইকেল) প্রতিক নিয়ে এক হাজার ৭৪২ ভোট পেয়েছেন।

    অথচ সরনজাই ইউপিতে কাগজ-কলমে আওয়ামী লীগের তিন সহস্রাধিক নেতাকর্মী রয়েছে, তবে সাঈদ যেই পেয়েছে তার সিংহভাগ কৃতিত্ব উপজেলা চেয়ারম্যানের তার একান্ত অনুগত কর্মী-সমর্থকরা এই ভোট দিয়েছে। কারণ ইউপি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একশ্রেণীর নেতা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ভোটের দিনে দেখা গেছে যারা মাসব্যাপী মোটরসাইকেল প্রতিকের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছে তারা আনারস প্রতিকে ভোট দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় ঘটলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে।কারণ সংরক্ষিত সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে বিজয়ীদের রাজনৈতিক পরিচয় ও তাদের প্রাপ্ত ভোটের হিসেব-নিকাশ, বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও ভোট বেড়েছে বলে একাধিক সুুত্র নিশ্চিত করেছে।

    রাজনৈতিক সচেতন মহলের ভাষ্য, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়, স্বাভাবিক ঘটনা এটা আলোচনার বিষয় নয়, কিন্ত্ত অপর প্রার্থী বিএনপি নেতা মতিউর রহমানের বিপুল পরিমান ভোট পাওয়া অস্বাভাবিক ও অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। কারণ গত নির্বাচনে যেখানে মতিউর রহমান জামানত হারিয়েছিল, নাই যার নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক বা কর্মী বাহিনী, নাই আলোচনা এবার সে কিভাবে এতো বিপুল পরিমাণ ভোট পেলো বিএনপি তে দেয়নি,তাহলে কারা তাকে এতো ভোট দিল, আর আওয়ামী লীগের ভোট কোথায় গেলো ?

    সরনজাই ইউপিতে মোট ভোটার ৮ হাজার একশ’ ৬ জন, এর মধ্যে নারী ভোটার ৪ হাজার ৯২ ও পুরুষ ভোটার ৪ হাজার ১৪ জন। ইউপির ৯টি ওয়ার্ডে ২৪টি কক্ষে ভোট গ্রহন করা হয়। চেয়ারম্যান পদে ৫ জনের মধ্য নৌকার প্রার্থী অযোগ্য হওয়ায় ৪ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ১০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

    এদিকে স্থানীয়রা মোটরসাইকেলের পরাজয়ের জন্য মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। যার মধ্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একশ্রেণীর নেতার বিশ্বাসঘাতকতা ও বেইমানী যারা আওয়ামী লীগে থেকে গভীর নলকুপের অপারেটর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি, সার-কীটনাশক ব্যবসা, খাসপুকুর, ফেয়ারপ্রাইস ডিলার, ওএমএস ডিলার ইত্যাদির মাধ্যমে পকেটভারী ও মোটাতাজা হয়েছে তারা দিনে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীর সঙ্গে ফটোশেসন করে, আবার রাঁতের আঁধারে বিরোধীদের পক্ষে ভোট করেছে।

    এসবের পাশাপাশি প্রার্থীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস-দাম্ভিকতা, বহিরাগত নির্ভর প্রচারে বাড়াবাড়ী ও ফটোসেশন অন্যতম। অন্য প্রার্থীর কর্মীরা প্রচন্ড শীতে রাঁতের ঘুম হারাম করে যখন কৌশলে ভোটারদের মন জয় করে ভোট পেতে মরিয়া, তখন মোটরসাইকেলের কর্মীরা হাস্যজ্জ্বোল ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে ব্যস্ত, পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় ছিল আনকোড়া বহিরাগত নির্ভর কিছুটা বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন মানেই বিজয় এমন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সরনজাই ইউপির তাঁতিহাটি-নবনবী, শুকদেবপুর, সরকারপাড়া এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক তার কর্মী বাহিনীসহ মোটরসাইকেল প্রতিকের বিরুদ্ধে ভোট করেছে।

    এছাড়াও শুকদেবপুর গ্রামের জাইদুর ও আকতার মুহুরী, সেলিম মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা পিন্টু, আতাউর রহমান,সিধাইড় বাস্তুল মন্ডল , কেরামত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান,থানা আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ মোটরসাইকেলের লোক দেখানো প্রচারণা করে ভোটের মাঠে আনারস প্রতিকের পক্ষে ভোট করেছে। তারা আবু সাঈদের ওপর প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কাজ করেছে।

    কিন্ত্ত নির্বাচনের একমাস পুর্বে স্থানীয সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিলেন আব্দুল মালেক সাহেব নৌকার প্রার্থী, তবে যদি কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে প্রতিদন্দিতা করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে নৌকা না থাকলেও সাঈদ সাহেব আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অথচ এরা আওয়ামী লীগের খেয়ে মোটাতাজা হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাহলে নেতা যদি দলের কাজে না আসে, সেই নেতা মোটাতাজা করে লাভ কি ? তাই এখানোই তাদের দেয়া সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে তৃণমুলের কর্মী ও সাধারণ মানুষকে দেয়া শ্রেয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ