• বরিশাল বিভাগ

    কি দরকার গরীব-অসহায়দের পেটে লাত্থি মারার!

      প্রতিনিধি ২৩ জানুয়ারি ২০২২ , ২:১৬:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    আরিফুল ইসলাম কারীমীঃ

    নিজের বসতভিটার বাইরে এক ইঞ্চি জমিও নেই দেলোয়ার খলিফার। সংসারে স্বচ্ছলতার আশায় কুয়াকাটায় পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ঢালে গত কয়েক বছর চাষ করেছিলেন তরমুজ। ফলনও ভালো ।তাই এবার একটু বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন দুই লাখ টাকা। রোপন করেছিলেন ১৫ হাজার তরমুজ গাছ। মৌখিক অনুমতিও নিয়েছিলেন পাউবো এবং বন কর্মকর্তাদের থেকে।
    তাগড়া হয়ে উঠেছিল গাছগুলো।

    মাসখানেক পরেই বিক্রি উপযোগী হবে তরমুজ। উচ্চফলন প্রত্যাশায় দিনরাত যত্নআত্তিতে সময় ব্যয় করছিলেন স্বামী-স্ত্রী। যদি একটু সুখ মেলে। স্বচ্ছলতা আসে সংসারে। তরমুজ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের স্বপ্নও বড় করছিলেন দেলোয়ার খলিফা। ঋণের টাকা পরিশোধের পর যে টাকা থাকবে কতো স্বপ্ন। নি:স্ব মানুষ অল্পতেই স্বপ্ন দেখে। কিন্তু গরীবের সুখ যে সহজে আসেনা। পদে পদে সৃষ্টিকর্তাও পরীক্ষায় ফেলেন। আর সমাজতো ওৎ পেতে থাকে অসহায়ের পথ রুখে দিতে।

    রোববার হঠাৎ পাউবোর প্রকৌশলী মনির এবং তার সহযোগী সার্ভেয়ার হাসানসহ ৬-৭ জন এসে দেলোয়ার খলিফার প্রায় ১০ হাজার গাছ একযোগে উপড়ে ফেলেন। কর্মকর্তাদের হাতে-পায়ে ধরে কেঁদেছেন দেলোয়ার খলিফা ও তার স্ত্রী সালমা বেগম। মাত্র একটা মাস, এরপরেই বিক্রি করা যেত তরমুজগুলো। কিন্তু মন গলেনি ওই কর্মকর্তার। এমন নৃশংস কাণ্ড থামাতে ছুটে এসেছিলেন গ্রামের সাধারণ মানুষও।

    অসহায় দেলোয়ারের এমন সর্বনাশ ঠেকাতে সবাই অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তাদের। কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের অনুরোধও গ্রাহ্য করেননি তারা। সবার সামনেই গাছগুলো নিজের হাতেই উপরে ফেলেছেন। পাশে দাঁড়িয়েই অঝোরে চোখের জল ফেলেছেন দেলোয়ার খলিফা আর সালমা বেগম। নিজেদের শ্রম আর ঘামে বোনা স্বপ্নগুলোর মৃত্যু দেখছিলেন নিজ চোখে। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা। ক্ষমতার কাছে চোখের জল নস্যি।

    সারা দেশে পাউবোর সাড়ে সাত হাজার একর জমি বেদখলে। যার আনুমানিক মূল্যে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা। হোমরা-চোমরা আর প্রভাবশালীরা এসব জমি দখল করেছেন। যাদের একটা চুল ছেড়ার ক্ষমতাও ওই কর্মকর্তাদের নেই। ভূমিহীন দেলোয়ার খলিফা পাউবোর জমি দখল করেননি। রাস্তার ঢালে তরমুজ চাষ করে স্বচ্ছলতা আনতে চেয়েছিলেন। এটাই অপরাধ। মাত্র একটা মাস সময়ও জোটেনি তার। দুই লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথা নিয়ে এখন অশ্রু ঝড়াতে হচ্ছে তাকে।
    বিচার দাবি করছিনা। খামখেয়ালিপনার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ