প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২০ , ৬:১৪:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেক্সঃ
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে ।তার অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক ) মাধ্যমিকও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক ,পরিদর্শন ও নিরীক্ষার মহাপরিচালক, ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক এবং ঢাকা জেলার শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, নজরুল ইসলাম এই বিদ্যালয়ে ঢোকার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য ও সুনাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
সূত্র আরো বলছে, নজরুল ইসলাম বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসেন না ।অথচ তিনি বিদ্যালয়ে না এসেও প্রতি মাসে বেতন ভাতা গ্রহণ করে।রুটিনে তার বরাদ্দকৃত ক্লাসগুলো অন্য শিক্ষকের দ্বারা পরিচালনা করা হয় । বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়ে তিনি প্রতি মাসে বিজ্ঞানাগারে অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকা গ্রহণ করেন । অথচ বিজ্ঞানাগারে কোন ক্লাসতো নিতেন না বরং কোন খোঁজখবর ও নিতেন না ।
এদিকে তিনি একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন । বিদ্যালয়ের চাকরির পাশাপাশি ঢাকা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকেও চাকরি করেন তিনি । অন্যদিকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তার ব্যাংকের লোকজন নিয়ে ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করলেও তিনি প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় বলে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।
এই প্রতিষ্ঠানে তিনি মাত্র ১০ বছর চাকরি করে তিনি অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ৫১ নং কে পি ঘোষ স্ট্টিটে তার নামে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ রয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল আবাসিক এলাকার পাশে শুভাঢ্যা মৌজায় ৬ শতাংশ জমির উপর মাস্টার ভিলা নামে তার একটি বাড়ি রয়েছে ।
একই মৌজায় ৫ শতাংশ ও ৪শতাংশ করে তার দুটি প্লট রয়েছে। কালিগঞ্জ ব্যবসায়ী এলাকায় তার দুটি দোকান রয়েছে। এছাড়াও তিনি দুই কোটি টাকা দিয়ে কেরানীগঞ্জে আর্মি ক্যাম্পের পূর্বপাশে ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করে একটি মার্কেট করেছেন । ক্রয়ের থেকে কম ক্রয় মূল্য দেখিয়েনিজের নামে, স্ত্রী,শ্যালক ,ও ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রার করে তিনি সরকারের রাজস্ব কর ফাঁকি দিচ্ছেন ।
ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ বেনজীর আহম্মদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের সময়কে বলেন , হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিলো ।
এছাড়াও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কাগজপত্র আমার কাছে পাঠানো হয় ।এরপর গত ৫ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে তাকে গত ৮ অক্টোবর বেলা ১২ টায় আমার কার্যালয় উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলেও উক্ত ভিক্টেম উপস্থিত হননি বলে জানান তিনি ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নজরুল ইসলাম , বলেন সাবেক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে ।আর আমার কাছে 10 লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল ।সেই টাকা না দেওয়ার কারণেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দিয়ে সূত্র মতে জানা যায়।
নিজস্ব প্রধান শিক্ষক ও পকেট কমিটির প্রভাব দেখিয়ে তার আত্নীয় স্বজনদের চাকরি দিয়ে বিদ্যালয়ে তার দল ভারী করেছেন ।অন্যদিকে বিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামত বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন । এদিকে এই বিদ্যালয় যারা প্রায় ২০থেকে ৩০ বছর যাবত সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে চাকরি করে আসছেন তাদের চেয়েও বেতন-ভাতা বেশি নিচ্ছেন এই নজরুল ইসলাম । বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমর্থন না থাকলেও প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে এই ভূয়া শিক্ষক,, শিক্ষক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছে ।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বংশাল থানাধীন উচ্চ বিদ্যালয়ের র গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ২০০৮সালের ২ মার্চ স্কুলে নিয়োগ পেয়ে ১১ মার্চ স্কুলে যোগদান করেন। এরপর গত ২০১০ সালের পহেলা নভেম্বর এমপিওভুক্ত হন ।আর তখনই তিনি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জমা দেন । তার নিবন্ধন নং __০১১৯১৬৭৮/২০০৫ ,যার রোল রোল নং –১১৯১৬৭৮ বিষয় গণিত ।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম এই জাল নিবন্ধন সনদ আড়াল করার চেষ্টা করে ।এজন্য তিনি গত২০০২ সালে নিয়োগ পাওয়া অপর এক শিক্ষক মোঃ আহসান হাবীবের নিয়োগ যোগদান ও রেজুলেশন সহ নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে মোঃ আহসান হাবীবের স্হলে নিজের নাম লিখে চাকরি করে আসছেন ।
তৎকালীন প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল্লাহ আল আমিন তার আত্মীয় হওয়ায় বিষয়টি এতদিন ধাপাচাপা ছিল । কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হওয়ার পর তা প্রকাশ হয় । এছাড়াও তিনি বিভিন্ন অন্যায় অনিয়ম করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করছেন বলে ও অভিযোগে জানা গেছে ।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম গত ২০০৯ সালের পর থেকে তিনি স্কুলের কোন ক্লাসই নিয়মিত না নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । এছাড়াও তিনি এই ওই স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য ,, দায়িত্ব পালনে অবহেলা , ক্ষমতার অপব্যবহার ,, পকেট কমিটির মাধ্যমে সিনিয়র শিক্ষকদের তুলনায় বেশি বেতন গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আহসানুল প্রিন্স জাল সনদ এর অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করে বলেন নজরুল ইসলামের বিষয়টি সহ আরও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় কমিটির প্রতিবেদন পেতে দেরি হচ্ছে ।তবে প্রতিবেদন পেলে এর সুষ্ঠু বিচার হবে ।।