• রাজশাহী বিভাগ

    হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধা অঙ্গুলী দেখিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করছেন ইউএনও।

      প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৪:২৪:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    বদলগাছী (নওগাঁ) রিপোর্টার:

    বদলগাছীতে আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাস্টের জমিতে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের সাদিশপুর গ্রামে । হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে বৃদ্ধা অঙ্গুলী দেখিয়ে ঘর নির্মাণ করছে উপজেলা প্রশাসন। ,ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর ট্রাস্টের সভাপতি আবেদন করলেও অজ্ঞাত করেণে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে উপজেলার সাদিশপুর গ্ৰামের শিক্ষা অনুরাগী শ্রী প্রভাস চন্দ্র দাস আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাস্টটি প্রতিষ্ঠা করেন।

    তিনি পৈত্রিক ১৭.২৬ একর জমি এই ট্রাস্টের নামে দানও করেছেন। ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক ৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া ট্রাস্টের অর্থায়নে প্রতি শুক্রবার একজন চিকিৎসক এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন এবং ঐ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয়। জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ৩য় পর্যায়ে উপজেলায় মোট ৪৬ ঘর নির্মাণে বরাদ্দ আসে।

    এরমধ্যে সাদিশপুর মৌজার জেএল নং-১৫০ হাল ১১৫, এস, এ খতিয়ান নং-২২,আর এস খতিয়ান নং ৪৪, সাবেক দাগ ১১২, হাল দাগ ১৭৯ ভিটা ০.৬০ একর অংশে ০.৩০ একর সম্পত্তিতে ১১টি ঘর এবং একই খতিয়ানভুক্ত সাবেক দাগ ১৮৩ ও ৩০৬ নং হাল দাগে ভিটা ০. ৬৬ একর অংশে ০.৩৩ একরে ২টি ঘর ও আর,এস ৪৫ নং খতিয়ানের সাবেক দাগ ১৮৬, হাল ৩২০ নং দাগে ভিটা ০.৫২ একর অংশে ০.৫২ একর সম্পত্তিতে ১৫ টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে।

    মোট ২৮টি ঘর ঐ ট্রাস্টের জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সরেজমিনে দেখা যায়। মোট জমির পরিমাণ ১ একর ১৫ শতাংশ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন উক্ত ঘর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। বিষয়টি জানার পর ট্রাস্টের সভাপতি সুশীল চন্দ্র মন্ডল গত ৬ জানুয়ারি ইউএনওর কাছে ট্রাস্টের জমিতে ঘর নির্মাণের কাজ বন্ধের জন্য আবেদন করলে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ তাদেরকে তাঁর কার্যালয়ে আসতে বলেন। পরে ট্রাস্টের সভাপতি এবং কমিটির অন্য সদস্যরা যাবতীয় কাগজ পত্রসহ ইউএনওর সঙ্গে দেখা করেন।

    ইউএনও কাগজপত্র দেখে ডিসির আদেশে জমিগুলো খাস হয়েছে বলে জানান তাদেরকে। এছাড়া তিনি আরও জানান ডিসির আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ না আনা পর্যন্ত ঘর নির্মাণ চলবে ।ঐট্রাস্টের লোক জন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদিশপুর, উত্রাসন ও চকমোহনপুর মৌজার ১৭.২৬ একর জমির মূল মালিক শ্রী কৃঞ্চ কুমার দাস। তার দুই ছেলে শ্রী গিরিশ চন্দ্র দাস ও জ্যোতীশ চন্দ্র দাস। জ্যোতীশ চন্দ্র দাসের দুই ছেলে শ্রী মনিন্দ্র নাথ দাস ও শ্রী ফনিন্দ্র নাথ দাস। তারা ১৯৭১ সালে ভারতে গিয়ে আর দেশে ফিরেননি।

    ১৯৮৩ সালে জ্যোতীশ চন্দ্রের মৃত্যুর পর গিরিশ চন্দ্র দাস পৈত্রিক শরীক সূত্রে উক্ত জমির মালিক হন। গিরিশ চন্দ্রের মৃত্যুর পর তার ছেলে শ্রী ক্ষিতীশ চন্দ্র দাস পৈত্রিক শরীক সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন। ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি আইন বিলুপ্ত সত্বেও মো. আব্দুল জব্বারসহ কতিপয় ব্যক্তি ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজস করে উক্ত সম্পত্তি শুত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে এক সনা লীজ নেয়। পরে ১৯৮৪ সালে শ্রী ক্ষিতীশ চন্দ্র দাস নওগাঁ সদর মুনসেফ আদালতে নালিশি সম্পত্তিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকর্দ্দমা করেন।

    ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বদলগাছী উপজেলা সহকারী জজ আদালত দুতরফা শুনানী শেষে সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে নালিশী সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব ও নিরঙ্কুশ দখল আছে বলে রায় দেন। অতপর মো. আব্দুল জোব্বার গং ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ১৯৯১ সালে সহকারী জজ আদালত নওগাঁতে সরকারকে বাদী করে বাটোয়ারা মামলা করেন। ২০০৯ সালে সহকারী জজ আদালত নওগাঁ সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন। পরে মো. আব্দুল জোব্বার গং এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ কোর্টে আপিল করে।

    ২০১১ সালে যুগ্ম জেলা জজ কোর্ট-১ নওগাঁ উক্ত আপিল মামলাটি দুতরফা শুনানী শেষে তা না মঞ্জুর করেন। কিন্তু বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ জ্যোতীশ চন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর তদীয় ৩, ৪ নং বিবাদী জীবিত আছে। ফলে ছেলের বর্তমানে ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র ১নং বিবাদী কখনই হিন্দু আইনের বিধান মতে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইতে পারে না। ফলে উক্ত সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯২ ধারা মোতাবেক সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ রায়ের ফলে জেলা প্রশাসক নওগাঁ উক্ত সম্পত্তি খাস হিসেবে রেকর্ড করার আদেশ দেন।

    যুগ্ম জেলা জজের বিতর্কিত রায় ও জেলা প্রশাসকের আদেশের বিরুদ্ধে শ্রী প্রভাশ চন্দ্র দাস হাইকোর্টে সিভিল রিভিউশন ৪০৪৪ অফ ২০১১ দায়ের করলে ২০১১ সালে হাইকোর্ট উক্ত বিতর্কিত মন্তব্য ও জেলা প্রশাসকের আদেশের বিরুদ্ধে রুল জারি করে ছয়মাসের স্থগিতাদেশ দেন। পরে ২০১৩ সালে রুলের নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিতর্কিত মন্তব্য ও জেলা প্রশাসকের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। বর্তমানে বিষয় টি এলাকায় তোলপাড় চলছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ