• Uncategorized

    যোগ্যতা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ভিসি,রেজিস্টার সহ শিক্ষকদের করছেন ব্লাক মেইল

      প্রতিনিধি ১৪ জুন ২০২৩ , ১০:২৫:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন) পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি

    পটুয়াখালীর দুমকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) এর ল্যাংগুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মোঃ মেহেদী হাসান এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে রিতিমতো ব্লাকমেইল শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

    তবে তিনি নিজেই যোগ্যতা না থাকলেও অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন অবৈধভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা নির্ধারন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল সে অনুযায়ী মেহেদী হাসানের সিজিপিএ অনেক কম। তবে সাম্প্রতিক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের ছবি এবং নাম দিয়ে তাদের গলায় ফাঁসির রশি দিয়ে পোষ্টার ছাপিয়ে রিতি মতো আলোচনায় এসেছেন এই শিক্ষক।অবশ্য এ কারনে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

    এ ব্যপারে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক (নন টেকনিক্যাল) পদে চাকুরী পান মেহেদী হাসান।তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের
    নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অনুষদে ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে। শিক্ষা জীবনে সকল স্তরে প্রথম বিভাগ/শ্রেনী থাকতে হবে। পাশপাশি প্রার্থির জিপিএ/সিজিপিএ ৪ এর জন্য কমপক্ষে ৩.৭৫ হতে হবে। তবে শিক্ষক মেহেদী হাসান এর সিজিপিএ ২.৯৫। এর পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

    এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের তিনি ব্লাকমেইলিং করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি
    বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের ছবি ব্যবহার করে তিনি তাদের ফাঁসির দাবী তুলে পোষ্টার ছাপিয়েছেন। যাতে দাবী করা হয় ‘২০১৮ সালের ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশিষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। এ হত্যাকান্ডে জরিত খুনিদের ফাঁসির দাবী করে তিনজন শিক্ষকের ছবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের ছবি ব্যবহার করে পোষ্টার ছাপানো হয়। পোষ্টারে হত্যাকারীদে আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবী করা হয়।

    অনুসন্ধানে জানাযায়, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলতেই গোপনে এমন একটি পোষ্টার ছাপিয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানোর পরিকল্পনা করছিলেন প্রফেসর মেহেদী হাসান। এ জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোঃ মুকিত কে আগে থেকেই বলেছিলেন তার (মেহেদী হাসান) কিছু পোষ্টার আসবে সেগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দেন।
    এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোঃ মুকিত বলেন, সেদিন রাতে আমাকে মেহেদী স্যার বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ীতে একটি প্যাকেট আসবে আপনি উপজেলার গেট থেকে প্যাকেটটি নামিয়ে নিবেন। আমি ব্যস্ত থাকায় আমার এক নিরাপত্তা কর্মীকে দিয়ে প্যাকেটটি ববিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে রাখি। সকালে যখন প্যাকেটটি খুলি তখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি স্যার এবং রেজিস্ট্রার স্যারের ছবি দিয়ে পাশপাশি তিনজন শিক্ষকের ছবিতে ফাঁসির রশি দিয়ে পোষ্টার করা হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করে এমন একটি পোষ্টার লাগাতে পারি না। তাতক্ষনিক ভাবে আমি রেজিস্ট্রার স্যারকে জানাই। রেজিস্ট্রার স্যার পোষ্টার দেখার পর জানতে চাইলে আমি তাকে পুরো বিষয়টি বলি।

    এ সময় যে নিরাপত্তাকর্মী পোষ্টার গাড়ি থেকে নামিয়েছেন, গাড়ীর চালক এবং বরিশালের যে প্রেস থেকে পোষ্টার ছাপানো হয়েছে তার বিষয় প্রশাসন কথা বলেছে এবং বিষয়টি তখন প্রমান হয় যে মেহেদী স্যার পোষ্টার গুলো আনিয়েছেন।
    এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,২০১৮ সালে যখন দেবাষীশ আত্মহত্যা করে সে সময় আমি কোন দায়িত্বে ছিলাম না এবং আমি দেশের বাহিরে অবস্থান করছিলাম। কি কারনে আমার ছবি ব্যবহার করে পোষ্টার ছাপানো হয়েছে তা হয়তো (মেহেদী হাসান) সে বলতে পারবে। এ ছাড়া প্রফেসর মেহেদী হাসান যে পোষ্টার গুলো ছাপিয়েছেন, তা নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভারকে নির্দেশনা দেয় এবং পোষ্টার নামানো ও লাগানোর জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, এ বিষয় গুলো প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত। এ কারনে গত ২৮ মে ভিসি স্যারের নির্দেশ মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রফেসর মোঃ মেহেদী হাসান কে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২(১) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সাধারণ আচরন ও শৃঙ্খলা বিধিমালা ৯(১) মোতাবেক চাকুরী হতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।

    এদিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে মেহেদী হাসান এর যোগ্যতা না থাকলেও নিয়োগ পাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘তাকে যখন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে এ বিষয় অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

    পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন‘দেবাশীষ আত্মহত্যার বিষয় কারো কোন অভিযোগ নেই। আমি সে সময় (২০১৮ সালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সাথে রেজিস্ট্রার কোন ভাবেই জরিত থাকে না।
    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েের

    অভিযুক্ত শিক্ষক (সাময়িক বরাখাস্ত) প্রফেসর মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি পোষ্টার ছাপানোর সাথে জরিত নই। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সাময়িক বরখাস্তের যে চিঠি দিয়েছে তাতে পোষ্টার ছাপানোর বিষয়টি স্পস্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ