• কৃষি

    মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার দেশে ৭৯ শতাংশ জমিতে জৈব পদার্থের সংকট

      প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ , ২:৪৫:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ
    মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারসহ নয় কারণে দেশের প্রায় ৭৯ শতাংশ কৃষি জমিতে জৈব পদার্থের সংকট দেখা দিয়েছে। ফসলি জমিতে যেখানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ জৈব পদার্থের মিশ্রণ থাকার কথা, সেখানে ২ শতাংশ পাওয়া গেছে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। সম্প্রতি মাটির উর্বরতা শক্তি ও জৈব পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

    ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মাটি যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস করায় মাটি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।

    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির ওপরের অংশ তুলে নেওয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে মৃত্তিকা হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাটির স্বাস্থ্যহীনতা ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

    দেশে সব ধরনের আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। যা ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ জমি।

    মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভাণ্ডার যুগান্তরকে বলেন, কৃষি জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় উৎপাদনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তাই চাষাবাদে অবশ্যই মাটির জৈবিক উর্বরতার দিকে লক্ষ্য দিতে হবে। আবাদ প্রক্রিয়ায় যাতে কোনোভাবে মাটির ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে চাষাবাদ করতে হবে।

    তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জমির উপরিভাগেই মাটির সব ধরনের জৈব পদার্থ থাকে। তাই জমির উপরের মাটি যেন কোনোভাবে নিচে পড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অপরিকল্পিত রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি কম জমিতে বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা করে চাষাবাদ করতে হবে। এর মধ্যে তিনতলা কৃষি একটি উদাহরণ হতে পারে।

    গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, পৃথিবীর মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে ফসল আবাদ হলেও বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৫৬ শতাংশ জায়গায় ফসল আবাদ হয়। আয়তনের বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪তম হলেও আবাদি জমির হিসাবে ২৯তম। চাষাবাদের হিসাবে বিশ্বে প্রথম তিনটি দেশের একটি বাংলাদেশ। শিল্পের কাঁচামাল আসছে কৃষিজমি থেকেই। জনসংখ্যা ও উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান চাপ সইতে হচ্ছে মাটিকেই।

    গবেষণায় বলা হয়েছে, মাটির প্রাণ হলো জৈব পদার্থ। ফসল ফলানোর জন্য মাটিতে জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন ৫ শতাংশ। এই মাটিকে সবচেয়ে ভালো বলা হয়। কিন্তু দেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ পাওয়া গেছে ২ শতাংশ।

    মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের খুলনা জেলা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, উদ্ভিদ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসাবে খনিজ পদার্থ ও পানি সংগ্রহ করে। এ জন্য ১৬টি পুষ্টি মৌল অপরিহার্য। এর কোনো একটির অভাব হলে ফসল তথা উদ্ভিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে ও ফসলহানি ঘটে।

    তিনি বলেন, অনকে সময় কৃষি কর্মকর্তাদের কথা না শুনে কৃষকরা ফলন ভালো করার জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন; যা মাটির জন্য অনেক ক্ষতিকারক। পাশাপাশি যেখানে যে কীটনাশক ব্যবহার দরকার নেই সেখানে অতিরিক্ত মাত্রায় সেই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব পদার্থ নষ্ট হয়ে যায়। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফসল উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাই এ সব থেকে কৃষকদের বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি জমিতে কি পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে তা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনে ও মেনে ব্যবহার করতে হ

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ