• Uncategorized

    বঙ্গবন্ধু নারীর স্বাধীনতা এবং নারীর সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন-দৈনিক অালোকিত ৭১ সংবাদ

      প্রতিনিধি ১৩ আগস্ট ২০২০ , ১২:৪১:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    এস এম কামরুল হক-স্টাফ রিপোর্টারঃ

    “আমার দেখা নয়াচীন” ৪২ পৃষ্ঠায় তৎকালীন সময়ের তরুণ নেতা শেখ মুজিব লিখেছেন,

    আমেরিকা থেকে প্রায় ৩০ জন এসেছিলেন। তাদের নেতা ছিলেন একজন নিগ্রো। কেমন করে সাদা চামড়াওলারা নিগ্রোদের অত্যাচার করে তার কাহিনি প্রকাশ করলেন। তবে একজন সাদা চামড়া আমেরিকান এও বললেন, দেশের লোক আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে যে এটা কত বড় অন্যায়। নিগ্রো ছেলেমেয়েরা সাদা চামড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে মিশতে পারে না, এক স্কুলে পড়তে পারে না, বিবাহ তো দূরের কথা! চিন্তা করুন, স্বাধীন দুনিয়ার নেতার দেশের এই অবস্থা! তিনি দুনিয়ায় গণতন্ত্র কায়েম রাখার জন্য ব্যস্ত হয়ে কোরিয়ায় সৈন্য পাঠান, চিয়াং কাইশেককে সাহায্য দেন। ইরানে ইংরেজকে সাহায্য করেন।

     

    বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে সেই ১৯৫২সাল থেকেই বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। এজন্য কৃষ্ণাঙ্গদের সমস্যা নিয়ে লিখেছেন। কিভাবে শ্বেতাঙ্গরা তাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। গণতন্ত্র আমেরিকা মডেল যে, নিপীড়িত মানুষের জন্য না সেটা তিনি এখানে তুলে ধরেছেন সুস্পষ্টভাবে। যদিও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার তার দেশের সমস্যা ছিল না। তবুও তিনি বিবেকের তাড়ণায় সে ব্যাপারটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি একজন বিশ্ব নেতার মতোই আচরণ করেছেন। বর্ণবাদী আমেরিকায় নিজেদের মধ্যেই কোনও গণতন্ত্র ছিল না। শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সেই সময় গণতন্ত্র তো দূরে থাক মারাত্মক অবিচার ও অমানবিক আচরণ করেছে। বঙ্গবন্ধু বিস্মিত ছিলেন এই ভেবে যে স্বাধীন বিশ্বের একজন নেতার দেশের কি করুণ অবস্থা!

    যুক্তরাষ্ট্র কোনও সময়ই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। রাষ্ট্রটি দুর্নীতি পরায়ন ও সাম্রাজ্যবাদী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার করে তাদের সম্পদ লুটে নেওয়ায় আমেরিকার উদ্দেশ্য। যা এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকার সাধারণ জনগণ যুদ্ধ চায় না। বেশির ভাগ জনগণই শান্তিপ্রিয় কিন্তু সরকার যুদ্ধবাজ সে কথা বঙ্গবন্ধুর লেখায় ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালেও আমরা প্রমাণ পেয়েছি আমেরিকার সাধারণ জনগণ গণহত্যা ও যুদ্ধ চায়নি। তারা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কিন্তু তাদের সরকার অস্ত্র সরবরাহ করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে।

    বর্ণবাদ আমেরিকার দীর্ঘদিনের সমস্যা। বারবার এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে এখনও হচ্ছে। ১৯৯১ সালের মার্চের ৩ তারিখে আমরা দেখেছি রডনি কিংকে বর্ণবাদী পুলিশ দ্বারা নির্যাতিত হতে। আর দেখেছি বর্ণবাদী বিচার ব্যবস্থার নগ্ন বহির্প্রকাশ। রডনি কিংকে নির্যাতনকারী পুলিশরা আদালতে নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছিল। ২৫ মে ২০২০ জর্জ ফ্লয়েডকে রাজপথে পুলিশের নির্যাতনে জীবন দিতে হয়েছে।

    আমেরিকা আজ পর্যন্ত কোন কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি উপহার দিতে পারেনি। যাকে তারা কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রচার করে সেই বারাক হুসেইন ওবামা একজন কৃষ্ণাঙ্গ না, তিনি একজন আফ্রো-আমেরিকান। যার মা শ্বেতাঙ্গ এবং বাবা কৃষ্ণাঙ্গ অতএব তিনি কোন অবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। একজন পূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ বা মুসলিমকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করার মত মানসিকতা বা উদারতা এখনও আমেরিকানদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।

    যতদূর জানি, বারাক হুসেইন ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসেবে কোরআন স্পর্শ করে শপথ নিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সেটা পারেননি। তাকে রীতিমত বিবৃতি দিতে হয়েছে যে, তিনি একজন খৃস্টান ধর্মাবলম্বী, তার স্ত্রীও খ্রিস্টান। আর তিনি ছোট বেলা থেকে বড়দিন আর এসবের সাথে অভ্যস্ত। ওবামার এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট না, তিনি জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় ইন্দোনেশিয়াতে তার সৎপিতার দেশে কাটিয়েছেন। তার পিতাও একজন মুসলিম ছিলেন। অতএব তিনি ইসলামিক আচারের সাথেও পরিচিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবার পর তিনি তার ইসলামিক নামটা ‘হুসেইন’ আর সেইভাবে ব্যবহার করেননি। বারাক ওবামা একজন মানুষ তিনি কোন ধর্মের এটা আমার কাছে কোনও অর্থ বহন করে না। তবে এই আপস তার দুর্বল ব্যক্তিত্বের বহির্প্রকাশ করেছে, অন্তত এক্ষেত্রে।

    আমি হলফ করে বলতে পারি এরকম পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কোন আপস করতেন না। প্রয়োজনে তিনি রাষ্ট্রপতি হতেন না। মহাত্মা গান্ধী যদি আপস না করতেন, তাহলে ভগত সিংসহ কয়েকজন বিপ্লবীর জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি আপস করেছেন আর ভারতীয় এই বীরদের প্রাণ দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কোনদিন তার জীবনে এ জাতীয় কোন আপস করেননি।

    ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এর ৪৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-

    মহিলাদের পক্ষ থেকে বেগম মাজহার এবং শওকত হায়াত খানের বোনও বক্তৃতা করলেন। চমকার বক্তৃতা করেন ভদ্র মহিলা। সকলেই মুগ্ধ হয়ে তার বক্তৃতা শুনলেন।

    বঙ্গবন্ধু পুরোপুরি নারী স্বাধীনতায় এবং নারীর সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন। যার কারণে সংবিধানিকভাবে তিনি নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি নারীকে সম্মানও করতেন। যার কারণে যে দুইজন নারী প্রতিনিধি দলে ছিলেন তাদের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি। শুধু উল্লেখই করেননি, একজন যে চমৎকার বক্তৃতা করেন সে প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি সকলেই তার বক্তব্য মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন সে কথাও উল্লেখ করেছেন।

    অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই একটা প্রবণতা কাজ করে নারীদেরকে হেয় করার। তারা কোনও পাত্তাই দিতে চান না নারীদের। নারীরা যে কিছু করতে পারেন, তাদের মধ্যে এই বোধটা কাজ করে না। এসব পুরুষের মানসিকতা হল, ‘আরে ধুর মেয়ে মানুষ কি করবে।’ অথচ এই পুরুষগুলো একবার চিন্তাও করে না যে, তার মা একজন মহিলা, তার বোন একজন মহিলা, তার কন্যাও একজন মহিলা। বিয়ের আগে এরা হয়তো স্ত্রীর পিছনে কত ঘুর-ঘুর করেছে, প্রেম নিবেদন করেছে। তারপরে যেই বিয়ে হয়ে গেছে, তখন স্ত্রী মেয়ে-মানুষ হয়ে গেছেন।

    শেখ মুজিব একজন মানুষ ছিলেন, একজন নেতা ছিলেন, তিনিও ব্যক্তিগত জীবনে বাবা ছিলেন, স্বামী ছিলেন, সন্তান ছিলেন। এই অধ্যায়গুলো তিনি হৃদয় দিয়ে, মন-প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। যার কারণেই তিনি নারীকে সম্মান করতে

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ