• ধর্ম

    পবিত্র শবে বরাতে করনীয় ও বর্জনীয়: মুফতী আহমাদুল্লাহ হাবিবী

      প্রতিনিধি ১৭ মার্চ ২০২২ , ১:২২:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    আলোকিত ইসলাম ডেস্কঃ

    আরবি বর্ষপঞ্জির অষ্টম মাস হলো শাবান। সর্বোত্তম মাস রমজানের আগের মাস। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবেবরাত বলা হয়, “শব” ফার্সি শব্দ । অর্থ: রাত । আর বারাআত এটি আরবী শব্দ । براءة অর্থ হলো: “মুক্তি” ৷ লাইলাতুল বারাআত অর্থ হলো:জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত ৷

    শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে:
    ليلة النصف من شعبان

    তথা,, শাবানের মধ্য রাত ।

    অতএব,ফারসীর শবে বারাআত শব্দটি আরবীতে না পেলেই তাকে অস্বীকার করা উচিৎ নয়,
    আরবীতে একে লাইলাতুন মুবারকাতুন বলা হয়েছে,
    # কুরআনে শবে বারাআত:
    ————————————
    কুরআনে কারীমে এই রাতকে ليلة مباركة বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ সূরায়ে দুখানে ২-৩ আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-

    اناانزلناه في ليلةمباركةاناكنامنذرين.فيهايفرق كل امرحكيم.

    “নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি মুবারক রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী ৷ এই রাতে হিকমতপূর্ণ সব বিষয় সিদ্ধান্ত করা হয় ৷”

    তাফসীরে দুররে মনসুর সহ বেশ অনেকগুলো তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শবে বারাআতকে বুঝানো হয়েছে ৷

    # হাদীসে শবে বারাআত
    হাদীস নং-১
    ————————————
    عن معاذبن جبل رض عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:
    يطلع الله تبارك وتعالى الى خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفرلجميع خلقه الا لمشرك اومشاحن.
    হযরত মুআয বিন জাবাল রা: থেকে বর্ণিত রাসূল স: ইরশাদ করেন,আল্লাহ তা’আলা অর্ধ শাবানের রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক -বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে মাফ করে দেন৷”
    (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫
    হাদীসটির মান: সহীহ,

    হাদীস:নং-২
    عن عبدالله بن عمرو رض ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله عزوجل الي خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفرلعباده الالاثنين مشاحن وقاتل نفس.
    “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা: হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স: ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে { ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে } তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখেন ৷ আর হিংসুক ও আত্মহত্যাকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন ।

    ( মুসনাদে আহমাদ ১১/২১৬ হা:৬৬৪২ , হাদীসের মান:সহীহ ৷

    হাদিস নং-৩
    عن علي رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى السماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا من مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر
    হযরত আয়শা রাঃ বলেন- এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম ; দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে তিনি(রাসূল সা)বললেন আয়েশা ! তুমি কি ভয় পাইতেছিলে যে , আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অত্যাচার করেছেন? হযরত আয়শা রা: বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন । রাসূল সা: বললেন- যখন মধ্য শাবানের রাত আসে আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন । আর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন । ( সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯) (ইবনু মাজাহ হাদিস নং১৩৮৯)

    হাদিস নং-৪
    عن عائشةرض : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عزوجل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
    হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুল(সাঃ) বলেছেন শাবানের ১৪ তারিখ রাতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় আসমানে অবতরণ করেন, সে রাতে তিনি মুশরিক ও অন্য ভাইদের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ( মুসনাদু বাজ্জার হাদিস নং ৯২৬৮)

    রাসুল (সাঃ)অন্য মাসের তুলনায় শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন, এ সম্পর্কে কিছু হাদিস রয়েছে।

    ১/হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এত অধিক রোজা রাখতে দেখিনি। ( সহিহ বুখারী ১৯৬৯)
    ২/হযরত আয়েশা রাঃ বলেন নবী করিম ( সাঃ) শাবানের খুব কম দিন ব্যতিত বাকি সব দিন রোজা রাখতেন। ( মুসলিম, ১১৬৫)

    ৩/সুনানু নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়েশা রাঃ বলেন নবী কারীম (,সাঃ) শাবানের মত অধিক রোজা বছরের অন্য কোনো মাসে রাখেননি। তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। (সুনানু নাসায়ী, ২১৮০)

    আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক সহ আলেমগণের একটি দলের মতে, রাসুল( সাঃ) পুরো শাবান মাস রোজা রাখেননি, বরং শাবানের অধিকাংশ দিন রোজা রেখেছেন,।মুসলিম শরিফে বর্ণিত হযরত আয়েশা রাঃ এর হাদিস দ্বারা এমনটিই বোঝা যায়। এছাড়া অনেক রিওয়ায়াত রয়েছে, রাসুল সাঃ রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে লাগাতার রোজা রাখেননি

    এ রাতে করণীয় :
    —————————-
    এ রাতের নির্দিষ্ট কোন আমল নেই ৷

    উল্লেখিত সূরা দুখানের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় এটা ভাগ্যরজনী ৷

    আর হাদীস শরিফের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে নিম্নোক্ত আমলগুলো পাওয়া যায় :

    ১) ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।

    ২)কবর যিয়ারত করা। তবে রাসূল স:গিয়েছেন একাকী ৷ আবার জীবনে এই একবারই ৷ তাই দল ধরে যিয়ারতে যাবে না ৷
    ৩) কিছু নফল ইবাদত করা ।

    ৪) পরদিন রোযা রাখা ।

    ৫)গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্না কাটি করা,

    এ রাতে বর্জনীয়:
    ——————————–

    ১ ) হালুয়া রুটি: এর সাথে শবে বরাতের কোন সম্পর্কই নেই ৷

    ২ ) আতশবাজি-মোমবাতি জ্বালানো ৷ ইত্যাদি
    এগুলো হিন্দু সভ্যতা থেকে এসেছে বলে আমার মনে হয় ৷

    ৩ ) আর এ রাতের কোন আমলকে সম্মিলিত রূপ দেয়া যাবেনা ৷

    এসব কোনভাবেই প্রমাণিত নয় ৷

    আমরা অনেকে আবার এ রাতে মাগরিব থেকে ওয়াজ-নসীহত করে মূল আমলের সময় নষ্ট করে ফেলি ৷

    আবার অনেকে বেশী নফল পড়তে গিয়ে ফজরের জামায়াতও পাইনা ৷ যা মোটেও উচিৎ

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ