• আইন ও আদালত

    দিনদুপুরে দিনমজুরের ঘরবাড়ি লুট, বাঁধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি

      প্রতিনিধি ১০ মে ২০২৩ , ১১:০৪:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

    নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ

    বুধবার (১০ মে) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারুকের বসতঘর ভেঙে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নস্থ ১ নং ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দেশি অস্ত্র হাতে কয়েকজন ফারুক হোসেনের ঘর ভেঙে ট্রাকে তুলছেন। পার্শ্ব থেকে চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেলেও অস্ত্রের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পুরো ঘর ট্রাকে তোলার পর বাড়ির সব গাছ কেটে বাড়ির চারপাশে তারকাঁটার ব্যারিকেট দিয়ে দেন তারা।

    ঘর ভেঙে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফারুক হোসেন বলেন, দেড় শতাংশ জমিতে ঘর করে ২০ বছর ধরে আমার স্ত্রী পাখি বেগমকে নিয়ে বসবাস করছি। গেলো ২৯ এপ্রিল শনিবার একদল সন্ত্রাসী নোয়ান্নই ইউনিয়নের শিবপুর থেকে এসে আমার ঘর ভেঙে নিয়ে যায়। বসত ঘর হারিয়ে আজ আমরা দিশেহারা। মাথা গোঁজার ঠাঁই না হওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে আমাদের কে।

    তিনি আরও বলেন, বাড়ির জমিটি আমাদের ক্রয় করা সম্পত্তি। আমার বাবা মৃত আবুল হাশেমের সঙ্গে মৃত মোহাম্মদ উল্যাহর জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। আদালতের রায় অনুযায়ী আমরা দেড় শতাংশের মালিক হই। তাই আমরা সেই দেড় শতাংশ জমির ওপর ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। কোনো কথা ছাড়াই মোহাম্মদ উল্যাহর ছেলে মাসুদ, জসিম, জাবেদসহ বেশ কয়েকজন নোয়ান্নই ইউনিয়নের শিবপুর থেকে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের ঘর ভেঙে ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। ঘরে থাকা মালামালও লুট করে নিয়ে যায়।

    ফারুক হোসেন বলেন, আমি একজনের মাছের খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। সেই খামারের মাছের রেণু কেনার সাড়ে ৩ লাখ টাকা আমার ঘরে ছিল। সে টাকাও তারা লুট করে নিয়ে যায়। ফারুক হোসেন আরো বলেন, যখন করোনা মহামারী দেখা দেয়, তারই কিছু দিন পূর্বে নোয়ান্নই ইউপি চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জুনায়েদ আমাদের উভয়পক্ষ কে উপস্থিত করে দুইটি ৫০০ টাকা দামের সাদা স্ট্যাম সাইনসহ তার কাছে জমা দিতে বলেন। আমরা সরলমনে স্ট্যাম জমা দেওয়ার পর ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আর ঐ স্ট্যাম ফিরে পাইনি।

    ২০১২ সালে মাসুদ আমার কাছ থেকে ব্যবসা করার জন্য প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা দিবে এই শর্তে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ধার নেয়। ১১ বছর পার হলেও আমি আমার ধার দেওয়া টাকা আজও ফেরত পাইনি। তারা সুকৌশলে জুনায়েদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমাদের দেওয়া ২০১৮ সালের সাইন করা সাদা স্ট্যাম নিয়ে এখন উল্টো আমাদের কাছে ২ লক্ষ টাকা পাবে বলে দাবি করছে।

    ফারুক হোসেনের স্ত্রী পাখি বেগম বলেন, অস্ত্রের মুখে আমরা এগোতে পারিনি। ঘরের স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু তারা নিয়ে গেছে। আমরা উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করি‌। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা বসত ঘরসহ মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। আজ ১২ দিন হয়ে গেলো আমরা ঘরছাড়া। ছেলেমেয়ে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করে আসছি।

    ৮নং এওজবালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, লুটপাটের ভিডিওটি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। বর্বর যুগের মতো এভাবে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যদি বিষয়টি তখনই আমি জানতাম, তাহলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত।

    অভিযুক্ত জাবেদের সঙ্গে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোয়ান্নই ইউপি চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জুনায়েদ ভাইয়ের নির্দেশে আমরা ঘর ভেঙ্গেছি । জুনায়েদ চেয়ারম্যান ও আমার ভাই মাসুদের অনুমতি ছাড়া আপনাদেরকে কিছুই বলা যাবে না। নিজেদের ঘর দাবি করে জাবেদের বড় ভাই মাসুদ বলেন, ফারুক চোর ও চাঁদাবাজ। ২০১২ সালে আমরা জায়গাটি কিনেছি। যে ঘরটি ভাঙ্গা হয়েছে তা আমাদের ঘর।

    ৩নং নোয়ান্নই ইউপি চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জুনায়েদ বলেন, এ বিষয়ে সালিশী বৈঠক হয়েছে। তখন আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে আমি এদের (জাবেদ গং) কে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করতে বলি নাই। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ