• আমার দেশ

    জনগণকে সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সংবাদ সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই

      প্রতিনিধি ৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:০৫:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে সর্বশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী অবিলম্বে বিদ্যমান কলঙ্কিত জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দেশবিরোধী প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন। বিরোধীদলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দকে কারাগার থেকে মুক্তি দিন। সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা ঘোষণা দিন। নয়তো সম্ভাব্য বিপর্যয়ের দায় থেকে আপনিও রক্ষা পাবেন না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম থাকে তাহলে আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করুন, প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন, কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন। জনগণের ভোটাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিন।

    রাজনৈতিক কারণে সকল প্রকার জুলুম এবং হয়রানী বন্ধ করুন। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। তিনি দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নিবৃাচন বন্ধ করে অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে পূন”তফসিল ঘোষণা করুন। তিনি জনগণকে সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ, বিদ্যমান পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবী এবং চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।

    ১. ৭ জানুয়ারী একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করতে হবে।
    ২. বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। ৩.নিবন্ধিত এবং আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
    ৪.বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিতে হবে এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূণঃতফসিল ঘোষণা করবে।
    ৫. রাজনৈতিক কারণে বিরোধীদলের কারাবন্দী সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি দিতে হবে।

    লিখিত বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে স্বৈরতন্ত্র এমন “সাংবিধানিক ও আইনসম্মত” রূপ নিয়ে জনতার ওপরে চেপে বসে আছে এবং আরো দীর্ঘায়িত হতে চাচ্ছে দেখে খুবই মর্মাহত ও ব্যথিত না হয়ে পারা যায় না। একটি সভ্য-স্বাধীন দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আমরা সরকারকে বারবার সতর্ক করেছি। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নির্বাচন নামের তামাশা, জুলুম, নির্যাতন, লুটতরাজ ও দুর্নীতি থেকে সরিয়ে রাখার জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ন্ত্রণ, গণ অধিকারসমূহ রক্ষায় সকল পন্থা অবলম্বন করেছি। রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, জনমত গঠন ও জনমতের প্রকাশসহ সম্ভাব্য সব কিছুই আমরা করেছি। প্রত্যাশা ছিলো, সরকারে থাকা ব্যক্তিবর্গের বোধোদয় ঘটবে; তারা দেশকে গৃহযুদ্ধ ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে না। দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে না।

    তিনি বলেন, সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে, অর্থনীতিকে ধ্বংশ করে হলেও ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। রাজনীতিতে হীন থেকে হীনতর সব কৌশল অবলম্বন করে তারা ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। সত্যি বলতে কি; আধুনিককালে কেউ ক্ষমতায় থাকার জন্য এতটা নির্লজ্জ, দেশের প্রতি এতো আত্মঘাতি, এতো হিংস্র ও এতোটা বেপরোয়া হতে পারে, তা আমাদের ভাবনায় ছিলো না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যেভাবে ক্ষমতায় থাকার একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়, তারই একটি বিকৃত ও নোংরা উপস্থাপনা হিসেবে আমরা বর্তমান সমস্যাকে বিবেচনা করছিলাম। কিন্তু বর্তমান সরকারের কার্যক্রম আরো উদ্ধত, বেপরোয়া ও শঠতাপূর্ণ।

    পীর সাহেব বলেন, রাজনীতিকেই ধ্বংস করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ইতিহাসের নিকৃষ্টতম শঠতায় প্রহসনমূলক নির্বাচনের অপচেষ্টা করছে। একই সাথে শিক্ষা সিলেবাসের নামে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে শেষ করার পাঁয়তারা করছে। সরকারের আজ্ঞাবহ দলদাস নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারী প্রহসনমূলক একতরফা নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নির্লজ্জ ও শঠতাপূর্ণ নির্বাচন কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন সরকার ২০১৪ সালে করলো একতরফা প্রহসনের নির্বাচন, ২০১৮ সালে করলো রাতের ভোট আর ২০২৪ সালে এসে করছে ডামি নির্বাচন। নিজ দলের একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন নামে দাড় করানো, জেল থেকে মুক্তি দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে দাড় করানো, কিংস পার্টি গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর অপচেষ্টা করার মতো এই সরকার যা করছে, তাতে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচনের উদাহারণ হয়ে থাকবে এই নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কতবড় নোংরামী হয়েছে তার উদাহারণ হয়ে থাকবে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার শর্তে কারাগারে থাকা সকল বিরোধী নেতাকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, কারাগারে থাকা না থাকার মতো যে বিষয় আদালতের ওপরে নির্ভরশীল তাও এখন এই সরকার কুক্ষিগত করে নিয়েছে।

    ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের এমন নির্লজ্জ ও বেপরোয়া হওয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারি। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা শুধু ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট করেছে। খেলাফি ঋণের নামে যা লুট করা হয়েছে তার হিসাব আলাদা। অবৈধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা কত অবৈধ সম্পদ কামিয়েছে; তার একটা ছোট দৃষ্টান্ত হলো, পাঁতানো এই নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী প্রার্থীদের ৮৭%ই কোটিপতি। ১৮ জনের সম্পদ শতকোটি টাকার ওপরে। এক মন্ত্রীর একারই বিদেশে দুই হাজার তিনশ বারো কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা হলফনামায় গোপন করা হয়েছে। এর আগে এস আলম গ্রুপের এক বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করার কথাও জাতি জেনেছে। ফলে এই নির্বাচন তাদের লুটতরাজ বহাল রাখা এবং আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অবলম্বন হয়ে দাড়িয়েছে।

    পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পাঁতানো নির্বাচনে নৌকা, ঈগল, ট্রাক ইত্যাদি যা আছে সবই শেখ হাসিনার লোক। সবাই আওয়ামী লীগের। এমনকি লাঙ্গল, সোনালী আশ, নোঙ্গরও শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট। তারপরেও এই নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বহু জায়গায়। নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই মর্মে ভোটারগণকে আগাম হুশিয়ারি দেয়ার ঘটনা ঘঠছে অহরহ। এসবই আমাদের দাবীর যথার্থতা প্রমাণ করছে। দলীয় সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না; এমনকি পাঁতানো নির্বাচনও সুষ্ঠু ও অবাধ হয় না। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, রাষ্ট্র নাগরিকদের সেবা দিতে বাধ্য। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সেবা কোন দল বা ব্যক্তি দেয় না বরং রাষ্ট্র দেয়।

    কিন্তু আমরা দেখছি, এই সরকারের লোকজন ভোটারগণকে নৌকায় ভোট না দিলে বা ভোট কেন্দ্রে না গেলে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে প্রদত্ব সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। গরীব-অসহায় মানুষদের তারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া এবং অমানবিক হলে নাগরিককে কেউ এ ধরণের হুমকি দিতে পারে, তা আমরা ভাবতেও পারি না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা এক প্রার্থী নিজেকে ভারতের প্রার্থী দাবী করে দাপট দেখাচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে। সার্বিকভাবে এই পাঁতানো ও শঠতাপূূর্ণ নির্বাচনেও এতো জঘন্যমাত্রায় এতো বেশি অনিয়ম, মাস্তানী ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে যে, এটাকে আর নির্বাচন বলার কোন সুযোগ নাই। এটা মাফিয়া চক্রের প্রধান ঠিক রেখে আঞ্চলিক মাস্তান বাছাইয়ের তামাশায় পরিণত হয়েছে। এই কথিত নির্বাচন বিরোধী দলগুলোর দাবীর যথার্থতা আবারো প্রমান করলো যে, কোন দলীয় সরকারের অধিনে কোন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।
    ৭ জানুয়ারির নির্বাচন আমার আপনার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার নির্বাচন।

    এই নির্বাচন আমার আপনার ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লুটতরাজ, জুলুম, খুন,গুম ও অনিয়ম জারি রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা, ব্যাংকগুলো শূন্য করা, চুরি করে কোটিপতি হওয়ার অবৈধ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন হলো ক্ষমতাসীনদের পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার মানে হলো, ক্ষমতাসীনদের সকল অন্যায়,জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া। যা কোনভাবেই জায়েজ নয়। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন তারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। যারা আল্লাহকে ভয় করেন, যারা মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করেন, তারা কেউ ভোট দেবেন না। যারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মান করেন তারা কেউ ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ