• খুলনা বিভাগ

    কুষ্টিয়ায় মৃত ব্যক্তির মাথা কেটে এনে পূজা

      প্রতিনিধি ২১ এপ্রিল ২০২২ , ৪:০৩:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    তানভীর হোসাইন-সদর কুষ্টিয়া।প্রতিনিধি:

    কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শ্মশ্মান থেকে সোহাদেব মন্ডল (৮৫) নামের এক মৃত ব্যক্তির দেহ তুলে মাথা কেটে এনে পূজা করা হয়েছে। আবার পূজা শেষে সেই মাধা গাছে ঝুলিয়ে রাখার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
    পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে ঘটনার আটদিন পর বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে পুনরায় শ্মশ্মানে মাথাটি পুতে রাখা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি একই গ্রামের মৃত মাধক চন্দ্র মন্ডলের ছেলে।

    এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এক সময় রামনগরে হিন্দুরা মিলেমিশে বসবাস করতেন। কিন্তু জমি সংক্রান্ত শত্রুতার জেরে প্রায় ১২ বছর পূর্বে শিকদার ও পোদ্দার গ্রুপের জন্ম হয়। শিকদার গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় অরুন কুমার শিকদার এবং পোদ্দার গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় চিকিৎসক বাবলু পোদ্দার। সেই সূত্র ধরে পোদ্দার গ্রুপের বিপুল কুমার, বিপ্লব, প্রকাশ, প্রদীপ, বসু, হৃদয়সহ সমর্থকরা চৈত্র পূজা উপলক্ষে গত ১৩ এপ্রিল রাতে রামনগর শ্মশ্মান থেকে মৃত সোহাদেব মন্ডলের মাথা কেটে আনে। পরে সেই মাথা দিয়ে রামনগর হাজরা গাছ তলায় সাতদিন পূজা করে।

    এবং পূজা শেষে মাথাটি লাল গামছা দিয়ে হাজরা গাছে ঝুলিয়ে রাখে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পোদ্দার গ্রুপের হৃদয় ও প্রদীপ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৭ টার দিকে রামনগর শ্মশ্মান মাথাটি পুনরায় পুতে রাখে।মৃত সোহাদেব মন্ডলের দুই ছেলে অশিক মন্ডল ও অশোক মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় এক বছর পূর্বে বার্ধক্যজনিত কারনে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য দাহ না করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শত্রুতা করে পোদ্দার গ্রুপের বিপুল, প্রদীপ, প্রকাশ, হৃদয়সহ অনেকে মিলে গত ১৩ এপ্রিল বুধবার রাতের আধারে শ্মশ্মান থেকে বাবার মাথা কেটে নিয়ে আসে।

    মাথা দিয়ে সাতদিন চৈত্র পূজা করে তারা। পরে হাজরা গাছে গামছা দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে মাথাটি। বিষয়টি জানতে পেরে পোদ্দার গ্রুপের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। শত্রুতা করেই প্রতিপক্ষরা এমন খারাপ কাজ করেছে। আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।এ বিষয়ে পোদ্দার গ্রুপের প্রদীপ বলেন, চৈত্র পূজা করার জন্য শ্মশান থেকে মৃত ব্যক্তির মাথা কেটে আনা হয়েছে। যার মাথা আনা হয়েছিল তিনি আমার মামা হতেন। বিষয়টি নিয়ে নানান কথা হচ্ছিল। তাই সাতদিন পূজা শেষে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে আবার শ্মশ্মানে পুতে রাখা হয়েছে।

    পোদ্দার গ্রুপের আরেক সদস্য বিপুল কুমার বলেন, চৈত্র পূজার জন্য মাথায় লাগে। ইচ্ছে হয়েছে তাই সোহাদেবের মাথা আনা হয়েছিল। পোদ্দার গ্রুপের প্রধান বাবলু পোদ্দার বলেন, পূজাতে আমি যায়নি, কিন্তু মাথা দিয়ে পূজার কথা শুনেছি। তবে আমার জীবনে এমন পূজা দেখিনি। তিনি আরও বলেন, এর সাথে আমি জড়িত না। জমি নিয়ে শিকদারদের সাথে বিরোধ আছে। এবিষয়ে শিকদার গ্রুপের অমল কুমার বলেন, ৫৫ বছর বয়স হলো। পূজা করতে মাথা লাগে একথা কোনো দিন শুনিনি এর একটা শাস্তি হওয়া দরকার।

    শিকদার গ্রুপের প্রধান ও রামনগর শ্মশ্মানের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অরুন শিকদার বলেন, পোদ্দার গ্রুপের লোকজন শ্মশ্মান থেকে মাথা কেটে নিয়ে পূজা করেছে, যা শাস্ত্রে নেই। আবার সেই মাথা হাজরা গাছে ঝুলিয়ে রেখে প্রভাব খাটিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল সকালে পুনরায় মাথা শ্মশ্মানে পুতে রাখে তারা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

    এ ব্যাপারে পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় আমি গিয়ে দেখে এসেছি। কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মাথা কেটে পূজা করার ঘটনাটি সত্য। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, পূজা করতে মাথা লাগে এমন ঘটনা শাস্ত্রে নেই। বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ