• স্বাস্থ্য

    ওমিক্রন শনাক্ত নিয়ে অন্ধকারে সরকার

      প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২২ , ৪:৪৫:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ

    দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে ফের সংক্রমণ বাড়ছে। এরপরও ওমিক্রন শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে না।
    দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে ফের সংক্রমণ বাড়ছে। এরপরও ওমিক্রন শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে না।

    ব্যাপকভিত্তিক জিনোম সিকোয়েনিসং না হওয়ায় ওমিক্রন নিয়ে সরকার অন্ধকারে আছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রনের দাপট চললেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩০। অনেকে বুস্টার ডোজ নিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন।

    পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নতুন করে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে এরকম ১৫টি সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এসব সুপারিশ বা নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিস্থিতি আঁচ করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

    বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার তিন হাজারের (৩৩৫৯) বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক শনাক্তের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা ১২ দিন আগেও ৩ শতাংশের নিচে ছিল। এদের মধ্যে কতজন ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

    রোগতত্ত্ববিদরা যুগান্তরকে বলেন, দেশে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া নতুন ধরন ওমিক্রন। গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু দেশে ধরনটির জিন বিশ্লেষণ কম হচ্ছে।

    ৫০০ শনাক্ত রোগীর মধ্যে মাত্র ১ জনের নমুনার জিন বিশ্লেষণ হয়েছে। এত কমসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ধরন কী পরিমাণে ছড়াচ্ছে, তা বলা মুশকিল। ফলে এই বৃদ্ধি করোনার অতিসংক্রামক ধরনের কারণে, নাকি অন্য কারণেও হচ্ছে তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।

    আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন যুগান্তরকে বলেন, ওমিক্রনের নতুন ধরন শনাক্তের আগে উপসর্গযুক্তদের এপিডিওমোলজিক্যাল লিংক দেখে রোগী বেছে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কেউ বিদেশ থেকে আসছে কিনা, জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় গেছে কিনা এসব তথ্য যাচাই করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে এখন পর্যন্ত কতটি নমুনা সংগ্রহ ও কতজনের জিন বিশ্লেষণ বা সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে তা জানো হচ্ছে না। অন্তত এক মাস শেষ হওয়ার পর জানানো হবে। ডিসেম্বরের তথ্যও এখনো হাতে আসেনি।

    রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর’বি, আইদেশী, চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সবমিলে প্রায় ১৫ থেকে ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর বাইরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে সিকোয়েন্সিংয়ের কিছু অংশের কাজ করছে।

    এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন এখন দেশে আক্রান্তদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশই ওমিক্রনের রোগী। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের একটি অংশ চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাবে। ফলে এখনই সতর্ক না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে জায়গা দিতে সমস্যা হবে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগী ওমিক্রন আক্রান্ত তা কীভাবে শনাক্ত হল তা বুঝতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

    তারা বলেন, এই হারে তো ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষাই হচ্ছে না। সেখানে সরকার নিশ্চিত হচ্ছে কী করে। তাদের মতে, ওমিক্রনে শনাক্তের বিষয় নিশ্চিত হতে হলে জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়ানোর বিকল্প নেই।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, ওমিক্রন রোগী শনাক্তের সক্ষমতাও কম। কারণ জিনোম সিকোয়েন্স অনেক কম হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারের উচিত হবে উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা। যাতে সামাজিক সংক্রমণ হলে উপজেলা হাসপাতালেগুলোতে চিকিৎসা দিতে পারে। যারা শনাক্ত হচ্ছে তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি গতি বাড়াতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।

    বলা হচ্ছে বেশি সংখ্যাক টিকা দেওয়া দেশে ওমিক্রন হানা দিতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো অর্ধেক মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘যখন আমাদের শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে ছিল তখন যেসব রোগী আক্রান্ত হয়েছে, তাদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। রোগীদের সংস্পর্শে যারা আসছে তাদের সঠিকভাবে আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হয়নি। এটা যদি সম্ভব হতো তাহলে অবশ্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

    করোনার সাম্প্রতিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় দেশে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে গত এক সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ১৬৯ শতাংশ। যেখানে ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৪ হাজার ৫৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

    সেখানে চলতি মাসের ১২ দিনে এই সংখ্যা ১৬ হাজার ২০৯ জনে পৌঁছেছে। ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কয়েকটি জেলায় সংক্রমণের উচ্চঝুঁকি, মধ্যম ঝুঁকি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। সংক্রমণ হারকে উদ্বেগজনক ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।

    রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অবশ্যই ভালো দিক। তবে এটি বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে এই কাজটি বাস্তবায়ন করতে হবে। মূল উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের। একইসঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ