• আইন ও আদালত

    স্ত্রী হত্যার দায়ে ১৮ বছর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলোনা ঘাতক নিজাম উদ্দিনের

      প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৩ , ৬:০২:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ শাহ আলম-ক্রাইম রিপোর্টার:

    অবশেষে ধরা খেলো ১৮ বছর পালিয়ে থাকা স্ত্রী হত্যার মূল ঘাতক ও পরিকল্পনাকারী স্বামী নিজাম উদ্দিন। গত ১৮-০৭ ২০০৭ ইং তারিখে আনুমানিক সকাল ৮.০০ হতে ৮:১৫ মিনিটের দিকে স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ এক মহিলার লাশ চোখে পড়ে তৎকালীন গোকুল পুর বহলাতলা ফাঁকা জায়গায় (বর্তমানে জায়গাটি শিয়াড়া ব্রিজের কাছে) পত্নীতলা থানায় খবর দিলে তৎকালীন থানার এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করা চোখ মুখ বিকৃত করা মুখের মাংস কেটে অন্যত্র ফেলে দেওয়া বীভৎস এক নারীর লাশ সনাক্ত করে স্থানীয় লোকজন।

    ঘাতক নিজাম উদ্দিন পরিকল্পনা করে এই খুনটি সে করে যাতে সেই নারীকে কেউ চিনতে না পারে। অজ্ঞাতনামা লাশ হিসাবে আঞ্জুমান ও মফিদুল এর মাধ্যমে লাশটি দাফন করা হয়। সেই সূত্র মতে গ্রাম পুলিশ প্রতিনিতলা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। লাশের কাজ হতে উদ্ধার হওয়া কালো ফোনের হিল জুতা লোহার কোপ-দা যাতে রক্তের দাগ লাগানো ছিল। ঘটনার আগের দিন সন্ধা ছয়টা নাগাদ মৃত ফেরদৌসী কে নিয়ে ঘাতক নিজামুদ্দিন গ্রামের বাড়ি ঝগড়ি জামালপুর (শিয়াড়া) আসার জন্য সাপাহার বাজারে কিছু ফলমূল এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত কোপ-দা কিনে নিয়ে ভ্যানে উঠে কিছুদূর আসার পর কাচা রাস্তা পায়ে হেঁটে যাবে বলে তারা রওনা দেয়।

    তারপর সন্ধ্যার পর কোন এক সময় সে পরিকল্পিত ভাবে নৃশংস ভাবে ফেরদৌসী বেগমের মাথা ন্যাড়া করে বাজার হতে ক্রয় করা কোবদা দিয়ে হত্যা করে বসে। এই আলামতের সূত্র ধরে হত্যার পর হতেই ঘাতক নিজামুদ্দিন পলাতক থাকায় সন্দেহজনক ভাবে নিজামুদ্দিনকে ১ নং আসামি করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০০৭ সালে মামলার চার্জশিট প্রদান করেন। তার মামলা নাম্বার ১৫/১৪৩ পত্নীতলা। মূল সূত্র হতে জানা যায় মৃত ব্যক্তিটির নাম ফেরদৌসী বেগম পিতা মোঃ সাইফুদ্দিন গ্রাম কুশমইল, থানা নিয়ামতপুর জেলা নওগাঁ। উক্ত ঘাতক নিজামুদ্দিনের সঙ্গে দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ফেরদৌসী বেগমের তাদের সাংসারিক জীবনে সন্দেহ একটু একটু করে দানা বাঁধতে শুরু করে সন্দেহের তীর তৃতীয় কোন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি যার সঙ্গে ফেরদৌসীর গোপন সম্পর্ক থাকার কথা জানায় নিজাম উদ্দিন।

    সেই সূত্র ধরে ফেরদৌসী বেগম নওগাঁ কোটে অজ্ঞাতনামা সেই ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে এবং শ্বশুর বাড়ি হতে মামলাটি পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সময় নওগাঁ কোর্টে যাতায়াত করত। সে সময় ঘাতক নিজাম উদ্দিন নিজ গ্রাম ছেড়ে নুরপুর গুচ্ছপাড়া মসজিদের ইমামতি করার সুবাদে সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। স্ত্রীকে হত্যার পর ঘাতক নিজামউদ্দিন গত ১৮ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাইয়া থাকতো গত ছয় মাস পূর্বে পত্নীতলা থানার অন্তর্গত মধুইল বাজারে জীবিকা নির্বাহের জন্য বাজার মসজিদে ইমামতির কাজ শুরু করে কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাজারের লোকজনের সঙ্গে তার বাক-বিতণ্ডা হয় সে সময় স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দিলে এসআই রিমন দত্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য পত্নীতলা থানায় নিয়ে আসেন।

    এবং নাম যাচাই-বাছাই করার জন্য তার দেওয়া ঠিকানা মতে শিয়ারা গ্রামে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য গিয়ে আসল তথ্য বের হয়ে আসে। স্থানীয় গ্রামবাসী নিজামুদ্দিনকে স্ত্রী হত্যার পলাতক আসামী সেইসাথে নিজামুদ্দিন কে আটকের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ অফিসার ইনচার্জ পলাশচন্দ্র দেব সহ পত্নীতলা থানার সকল কর্মকর্তাদের ভুয়োসি প্রশংসা করেন। উক্ত বিষয়টি পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র দেবের সঙ্গে আলাপ করলে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই সাথে ওসি পলাশচন্দ্র দেব নিজস্ব মেধা যোগ্যতা দিয়ে সার্বিক ভাবে এস আই রিমন দত্তকে সহযোগিতা করেন এবং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন অফিসার ইনচার্জ পলাশচন্দ্র দেব ও এস আই রিমন দত্ত জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘাতক নিজামউদ্দিন হত্যার পুরো বর্ণনা দেয়।

    সে জানায় ফেরদৌসী কে সংসার জীবনে সন্দেহ থেকে হত্যার পরিকল্পনা মাথায় আসে সেই কাজ বাস্তবায়নের জন্য সে গ্রামের বাড়ি আসার পরিকল্পনা করে এবং গোকুলপুর বহলা তলায় ফাঁকা জায়গা দেখে এখানেই সে ঘটনাটি ঘটে থাকে। উক্ত স্বীকারোক্তির জের ধরেই আসামিকে নওগাঁ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন এবং বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে হত্যা মামলায় আটক দেখানো হয়। মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ