• চট্টগ্রাম বিভাগ

    বিজয়নগরে বিয়ের পিঁরিতে কনে, আসেনি বর!

      প্রতিনিধি ১৫ মার্চ ২০২২ , ১২:৪৯:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    শাহনেওয়াজ শাহ্ -ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিঃ

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ছেলে থাকতো বিদেশ, ছেলে ও মেয়ের পরিবারের সম্মতিতে প্রায় ৮ মাস পূর্বে মুঠোফোনে বিয়েতে আবদ্ধ হয় বর ও কনে। উভয় পরিবারের কথা ছিল ছেলে বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েকে উঠিয়ে নিবে ছেলের পরিবার। ছেলে দেশে আসলে পূর্বের কথা মতো উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিন নির্ধারণ করা হয় ১৪ মার্চ সোমবার। নির্ধারিত দিনকে কেন্দ্র করে কনে পরিবারের আয়োজন ছিল ঝাঁকজমকপূর্ণ। গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বর ও অতিথি আপ্যায়নসহ সবধরনের আয়োজন ছিল কনের বাড়িতে৷ কনের বাড়িতে সব আয়োজন থাকলেও বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়নি বর ও বর পক্ষের লোকজন।
    এমন ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামে। এদিকে বিয়ের পিঁরিতে বসা কনে। বর না আসায় এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ের সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক আয়োজন থাকা স্বত্ত্বেও বর না আসায় কনের বাবা বিজয়নগর থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিচার প্রার্থী হয়ে চেয়েছেন পুলিশের সাহায্য।
    অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ঘণশ্যামপুর গ্রামের জন্টু মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া(২৪) প্রবাসে থাকাকালে পারিবারিক সম্মতিক্রমে একই উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের জাবেদ মিয়ার মেয়ের সঙ্গে প্রায় ৮ মাস পূর্বে মুঠোফোনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই রাসেল মিয়া । মুঠোফোনে বিয়ের পর বর রাসেল মিয়া প্রবাসে থাকার দরুণ বরের বাবা জন্টু মিয়া বর ছাড়াই কনেকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। কনেকে বর ছাড়া বরের বাবা বরের বাড়িতে নেয়ার পর ৮ মাস যাবৎ শ্বশুর বাড়ির বউ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন কনে । উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে কথা থাকে যে পাত্র (বর) প্রবাস থেকে দেশে আসার পর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা করে কনেকে বাড়িতে উঠাবেন বর পক্ষের লোকজন।
    এদিকে চলতি বছরের ৯ মার্চে দেশে আসেন রাসেল মিয়া। রাসেল মিয়া দেশের আসার পর উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ১৪ মার্চ সোমবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিন তারিখ ধার্য করা হয়। এদিকে বিয়ের সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ায় কনের বাবা তার কন্যার সুখের জন্য প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাঠের মালামাল পাঠান বরের বাড়িতে।
    কনের বাবা জাবেদ মিয়া জানান, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ১৪ মার্চ ছিল। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশি অনেকেই দাওয়াতি মেহমান ছিল। দুপুরের ভোজনের জন্য নেয়া হয়েছিলন সব ধরনের ব্যবস্থা। হঠাৎ ছেলে পরিবার থেকে খবর আসে ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক না দিলে এ বিয়েতে অংশ নেবেন না বর পক্ষ। পরবর্তীতে বর পক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ।
    কনের বাবা জাবেদ মিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের আংটি পরানোর দিন দেড় লক্ষ টাকা খরচ করিয়াছি। এত অভাব-অনটনের মাঝেও মেয়ের সুখের জন্য ১৩ মার্চ প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাঠের মালামাল পাত্রের বাড়িতে পাঠায়। ১৪ মার্চ সোমবার অনুষ্ঠানের খাওয়া দাওয়া ও বরের আগমনকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করি। বর পক্ষের লোকজন আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। প্রতারকদের সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
    চান্দুরা ইউপির ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ ফরিদ মিয়া বলেন, কনে পক্ষ আমাকে ও চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বরপক্ষ অনুষ্ঠানের দিন না আসায় কনে পক্ষের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
    এ বিষয়ে অভিযুক্ত বরের পিতা জন্টু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
    উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রৌনক আরা নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে কনে পক্ষের লোকজন যোগাযোগ করলে আমরা তা নিয়ে কাজ করবো।
    এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার সেকেন্ড অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি, এটা একটা প্রতারণা মূলক কর্মকান্ড, পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ