• আমার দেশ

    প্রযুক্তির বাহনে এক যুগের দুরন্ত যাত্রা

      প্রতিনিধি ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ , ১২:৩২:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্ক:

    ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস আজ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনি ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসে ঘোষিত সেই ইশতেহার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এছাড়া কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প হিসাবে প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তারও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়। ১২ বছর (এক যুগ) পর আজ শহর থেকে দুর্গম-প্রান্তিক এলাকার পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জীবনেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তথ্যপ্রযুক্তির বাহনে চড়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন দেশ ও মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়া সফল এক অভিযাত্রার নাম। একযুগ পূর্তির এই দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশে যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক। আজ ফাইভ জি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।

    তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প ঘোষণা করেন তখনই সেটা ছিল ঐতিহাসিক ঘোষণা। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার দেওয়া, এটার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প- এটা দেশ ও জাতির সামনে প্রথম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেটা ছিল ২০০৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত একটা রূপকল্প। আর এটা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য যিনি মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়।

    প্রতিমন্ত্রী জানান, এ রূপকল্প বাস্তবায়নে জয় চারটা পিলারকে সামনে রেখে একটা দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। মানবসম্পদ উন্নয়ন, সবার কাছে সুলভমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া, সরকারের সব সেবাকে ডিজিটালে রূপান্তর করা এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশ ঘটানো। এগুলো বাস্তবায়নে তিনি ২০০৯ সালে আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করেন। সেখানে ৩০৬টি করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। সেখানে একটা অ্যাকশন প্ল্যান ছিল। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলেন তা কে বাস্তবায়ন করবে, কিভাবে করবে সজীব ওয়াজেদ জয় তা আইসিটি পলিসিতে নির্ধারণ করে দেন।

    মহান স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিউ) সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য হয় বাংলাদেশ। আগামী দিনের চাহিদা ও সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে উৎক্ষেপণের।

    জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর যুগান্তরকে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্পের চারটি স্তম্ভ রয়েছে, এগুলো হচ্ছে-মানবসম্পদ উন্নয়ন, কানেক্টিভিটি, ই-গভর্ন্যান্স ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পখাত গড়ে তোলা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ যে রোল মডেল স্থাপন করেছে। বিশ্বে তা ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসাবে স্বীকৃত।

    জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি তথ্যপ্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে কম্পিউটারের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়। ফলে দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের যুবকদের দক্ষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

    এ লক্ষ্যে সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। সরকার ‘সেইপ’ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ বেকারকে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে। ডিজিটাল খাতে রপ্তানি এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে ২০১৮ সালেই। এখন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। দেশে উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টেকনোলজিতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে। এছাড়াও লার্নিং-আর্নিং, শি-পাওয়ার, হাইটেক পার্ক, বিসিসি, বিআইটিএম, এলআইসিটির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানবসম্পদে পরিণত করা হচ্ছে।

    নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি নিশ্চিতে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্র্রসারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার লক্ষে ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকার থ্রিজি প্রযুক্তির মোবাইল সেবা চালু করে। এর মাধ্যমে ভিডিও কল, টেলিমেডিসিন, মোবাইলে টিভি দেখাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বা ফোরজি সেবা চালু করে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। আজ ফাইভ জি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।

    ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে সরকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক। মোবাইল প্রযুক্তিকে আরও সুরক্ষিত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধিত হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে ৭ হাজার ৬০০টি ডিজিটাল সেন্টার এবং এবং ৮ হাজার ৫০০ টি ই-পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স সেবাসহ ৩০০টির অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি দপ্তরের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশের সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ ৫১ হাজারেরও বেশি সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটের একটি সমন্বিত রূপ বা ওয়েবপোর্টাল চালু (জাতীয় তথ্য বাতায়ন) করা হয়েছে। যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ওয়েব পোর্টাল। এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে।

    সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে সরকার। ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, করোনাকালীন সময়ে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা চালু এবং স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য জরুরি সেবা দিতে হটলাইন প্রবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে ২৫টি আলাদা আলাদা হটলাইনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত সেবা আধুনিকায়নে ডিজিটাল কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে অনলাইনে জমির খতিয়ান সরবরাহ, ই-নামজারি ও ই-সেটেলমেন্ট কার্যক্রম, ডিজিটাল ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক ও ল্যান্ড জোনিংয়ের কার্যক্রম চলছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ