• Uncategorized

    অভিযান ১০ লঞ্চ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে আমি একজন

      প্রতিনিধি ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১:১৪:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

    অভিযান লঞ্চের অগ্নিকান্ডের ৪১ তম দিন আজ  বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি দু’দিন আগেই নিয়েছিলাম, কেবিন বুকিং করা
    হয়ে ছিলো আমতলী উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে সুন্দরবন ৭ লঞ্চে।
    জ্যাম এর জন্য লঞ্চঘাট পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায়,আমি সে লঞ্চে যাত্রা করতে ব্যার্থ হই।
    মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো, যে
    কোন উপায়ে গ্রামে যেতেই হবে।
    তখন সহজ একমাত্র উপায় ছিলো ঢাকা টু বরগুনা লঞ্চ।
    সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই, লঞ্চে উঠবার পাঁচ মিনিট পরেই লঞ্চ বরগুনা উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
    ক্লান্ত শরীর নিয়ে অভিযান লঞ্চে যাত্রা আরামদায়ক করার জন্য চেয়ার(সোফা)বুকিং করলাম।
    আবহাওয়া শীতল থাকায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় শরীর লাগিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসলাম,এর মধ্যে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যাই।
    হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়,তখন প্রায় রাত ২ঃ ৩০ মিনিট,ক্ষুধার্ত শরীরকে শান্ত করতে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় চলে আসলাম তখন প্রায় ২ঃ৫৫।
    দোকানের কাছাকাছি গিয়ে খাবার পছন্দ করার জন্য খুজতেছিলাম,এর মধ্যে চোখ গেলো লঞ্চের ইঞ্জিলের দিকে কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দ।
    ইঞ্জিল রুম থেকে আগুন দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো চারপাশে।
    কি হচ্ছে বা কি হবে ভাবতে না ভাবতেই আমি লঞ্চের সামনের দিকে চলে আসলাম।
    তখন ও লাইটিং ছিল ১ মিনিট এর মতো, এর পর লাইটিং বন্ধ হয়ে যায়।
    আগুন এতোক্ষণে ভয়াবহ রুপ ধারণ করে । এ অবস্থায় লঞ্চ নদীর মাঝমাঝি দিয়ে চালাচ্ছিল।
    লঞ্চ মাস্টারকে বার বার অনুরোধ করার পরেও লঞ্চ নদীর পাশে নেওয়া আগ্রহ তাদের মধ্যে দেখা যায় নায়, এক সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঝালকাঠির নদীর পারে লঞ্চ চলে যায় সেখানে কয়েক সেকেন্ড সময় পাওয়াতে বেশ কয়েকজন লাফিয়ে পরে, কিন্তু আমি সেখানে নামতে ব্যার্থ হইলাম কারণ আমার সামনেরদিকে প্রায় দু’শতাদিক লোক ছিলো।
    মুহুর্তের মধ্যে নদীর স্রোতে লঞ্চ নদীর মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
    এ অবস্থা দেখে বেঁচে ফিরবার আসা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
    নদীর মধ্যে লাফ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সাহস পাচ্ছিলাম না,কুয়াশার চাদরে বুঝতে পারছিলাম না কি ভাবে নদীর পাশে পৌঁছাবো।
    বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন আগুন সামনের দিকে চলে আসে, তখন আমার পায়ের কাছে একটা কম্বল পাই,কম্বলটা লঞ্চের একটা কিছুর সাথে বেঁধে নেই,
    যাতে আমি ঝুলে ঝুলে নামতে পারি। এর মধ্যে লঞ্চ নদীর পাশে চলে আসে,তখনও আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে আমরা কোন জায়গায়(কুয়াশার জন্য), ঐ গ্রামের মানুষ লঞ্চ লক্ষ করে চিৎকার করায় আমরা বুঝতে পারি।
    তারা টর্চ লাইট দিয়ে আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন এবং চেচিয়ে বলছেন আপনারা পানিতে লাফ দেনন- এখানে মাটি মাটি আপনারা লাফ দেন।
    তখন কোনো কিছু না দেখে টর্চ লাইটের আলো অনুসরণ করে লাফ দেই তিন তলা থেকে।
    তখন সময় প্রায় ৪ঃ০৩ মিনিট। আলহামদুলিল্লাহ ওখানে আমি সহ প্রায় তিন শতাধিক লোক নামতে পারি।
    সেখানে আমরা নামার পরেও অনেক লোক সহ – আবার পিছনে যায় লঞ্চ।
    এর পরে আমাদের স্থানীয় মানুষ তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। এবং শীতের জামা কাপড় দেয়, সেখান থেকে আবার চলে আসি লঞ্চের কাছে । এসে দেখি সম্পুর্ণ লঞ্চে আগুন আর আগুন এতো সময় হয়ে গেলো ৭০ মিনিটের উপরে,
    তারপর ও ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছাতে পারে নাই,
    ভোর ৫টায় ফায়ার সার্ভিস এর দুই জন সদস্য আসে একটি মেশিন + একটি হোজ পাইপ নিয়ে ১ ঘন্টা পরে আরো দুটি ইউনিট যোগ দেয় ফোম লিকুইড নিয়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টার পারে সকাল ৮ঃ০০ টার পারে আগুন নিয়ন্ত্রে আসে। পরে লঞ্চে উঠলাম আমার বন্ধুর পুলিশ কর্মকর্তার মোঃ জাফর কে নিয়ে। ভিতরে যে অবস্থা দেখলাম মানুষ কি ভাবে পুড়ে পুড়ে শুধু মাথায় খুলি আর কয়েকটি হার আছে আর কিছুই নাই।

    লঞ্চ দুর্ঘটনা – ঝালকাঠি
    অভিযান ১০ লঞ্চ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে আমি একজন।
    সময়টা 24 ডিসেম্বর 2021
    শুক্রবার রাত 2:55 AM মিনিট।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ