• জাতীয়

    স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশে ভাত ও ভোটাধিকার নেই

      প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:২৪:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পরও দেশবাসীর স্বপ্ন পুরণ হয়নি। শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হলেও এখন সর্বক্ষেত্রে চরম বৈষম্য চলছে। দেশবাসী একটি লাল-সবুজ পতাকা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। বরং স্বাধীনতাকে ভারতের গোলামীর মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের অতি তাঁবেদারির কারণে ভারত বাংলাদেশকে তাদের অঙ্গরাজ্য মনে করে যাইচ্ছে তাই করছে। স্বাধীনতার পূর্বে ভোটাধিকার কেড়ে নেয় পাক হানাদার বাহিনী, আর এখন ভাত ও ভোটাধিকার কেড়ে নেয়, বতমান সরকার।

    তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে মানুষ ভোট দিতে পারতো, এখন মানুষ ভোটও দিতে পারছে না। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এখন অনেক বেশি। সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবিক মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির লক্ষে যুদ্ধ হয়েছিলে। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন ঘোষিত দেশব্যাপী বিজয় র‌্যালি কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি অনেক জেলায়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি এ ঘটনার ধিক্কার জানান। অধ্যাপক মাহবুবব তামাশার নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো এবং বিতর্কিত সংসদ ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান।

    আজ শনিবার বেলা ১২টা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিজয়ের ৫৩ বছর উদযাপন উপলক্ষে পতাকা র‌্যালি পূর্ব জমায়েতে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখছিলেন। বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল, সকল রাজবন্দিদের মুক্তি, বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ও বিজয়ের ৫৩ বছর উদযাপন উপলক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জমায়েতে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম। সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, মাওলানা নূরুল ইসলাম নাঈম, ডা. শহিদুল ইসলাম, ইঞ্জনিয়ার মুরাদ হোসেন, মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা নাযীর আহমদ শিবলী, মুহাম্মদ ফজলুল হক মৃধা, ডা. মজিবুর রহমান, মুফতী শওকত ওসমান, মুহাম্মদ ইউসুফ পিয়াস, রাকিবুল হাসান, সাইফ মুহা. আলাউদ্দিন।

    মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসা করে দেশকে ধ্বংস করছে। অর্থ পাচার, লুটপাট করছে। ১৬ ডিসেম্বর ইতিহাসের স্মরণীয় দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস পালন করতে পারছে না জনগণ। অনেক জেলা শাখাকে বিজয় র‌্যালি করতে দিচ্ছে না। জনগণ পাতাকা ছাড়া কিছুই পায়নি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবাধিকারসহ রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌলিক শ্লোগান সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় থেকে জাতি বঞ্চিত। দেশে বিচার নেই, সর্বত্র দলীয়করণ চলছে। সর্বত্র সাম্যের বিপরীত বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে সরকার।

    তিনি বলেন, ১৮ জানুয়ারি থেকে সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করে ইসির অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ফরমান জারি করেছে। দেশে সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, ইসি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জরুরি অবস্থা জারি করার এখতিয়ার রাখেন না। এই এখতিয়ার কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির। কাজেই সভাসমাবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত দেশবাসী মানে না।

    তিনি বলেন, বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিলে দেশে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সরকার দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের অনেক মন্ত্রীরাও স্বীকার করেন, দেশ খাদের কিনারায় পৌঁছেছে। তিনি স্বাধীনতার চেতনার ব্যবসা বন্ধ করে দেশকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান। তিনি তামাশার নির্বাচন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো দলবাজ ও পদলেহী ইসি ৭ জানুয়ারি তামাশার নির্বাচনের আয়োজন করছে।

    মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, দলকানা নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দোহাই দিয়ে ধর্মীয় সভা, ওয়াজ মাহফিলও বন্ধের চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, বিজয় মানেই আনন্দ। আজ বিজয়ের আনন্দ জনগণের মাঝে নেই। আগের বছরগুলোতে আমরা দেখতাম প্রতিটি বাড়ী, প্রতিটি ঘরে ঘরে বিজয় পতাকা উড্ডীন হতো। আজ সে অবস্থা নেই। মানুষের মাঝে আনন্দ নয়, শুধু বেদনা ও অশ্রু দেখতে পাওয়া যায়। বাজার করতে গিয়ে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে মানুষ জর্জরিত। বুকফাটা কান্না আর কান্না পরিলক্ষিত হয়। এই কী স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ। এজন্য কী মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে?

    সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধে চেতনার নামে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সর্বত্র দলীয়করণ করেছে। ৫৩ বছরে মানুষ ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরে পায়নি। এখনও রাজপথে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানাতে হচ্ছে। তিনি বিতর্কিত সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশকে মহাসঙ্কট থেকে বাচানোর আহ্বান জানান। তিনি সরকারকে ভোট চুরি, ভোট-ডাকাতির পথ থেকে সরে দাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি মানুষের ভোটাধিকার ও মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সর্বত্র গণআন্দোলণ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

    পরে একটি বিশাল পতাকা র‌্যালি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, কদমফোঁয়ারা ঘুরে পল্টনমোড় হয়ে বিজয় নাইটেঙ্গল হয়ে পুনরায় পল্টন মোড় এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র জাতির অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের যথাযথ প্রতিদানের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ