• Uncategorized

    পটুয়াখালীতে অসুস্থ মা’কে ফেলে গেল ছেলে মেয়ে, উদ্ধার করল পুলিশ ও সাংবাদিক।

      প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২:২১:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন)পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ

    বৃদ্ধা জয়নব বিবি, বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বড় করেছেন এক ছেলে ও এক মেয়েকে। স্বপ্ন ছিল সন্তানরা বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে মাকে আরাম আয়েশে রাখবেন। কিন্তু জয়নবের সংসারের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো ছিল না।

    নিজেদের অবস্থান থেকেই সন্তানদের জীবনের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সন্তানদের অসুখ হলে মা রাত জেগে সেবা করতেন ও চোঁখের পানি ফেলতেন। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই এখন বড় হয়েছেন। তাদের  বিয়ে হয়েছে। তাদের এখন সেবা করার অনেকে আছে।

    কিন্তু জয়নবের কান্না এখনও থামেনি। কারণ তিনি অসুস্থ হয়ে সন্তানদের কাছে বোঝায় পরিণত হয়েছেন। ছোট বেলায় মা জয়নবের বুকে সন্তানদের ঠাই হলেও সন্তানের বুকে মায়ের ঠাই হয়নি। বয়স্ক বৃদ্ধা মাকে ছেলে ও ছেলের বউ রাস্তায় ফেলে গেছেন। তাই তিনি অঝোরে চোঁখের পানি ফেলেন। দীর্ঘ দুই মাসের অধিক সময় ধরে রাস্তায় পড়ে থাকলেও খোঁজ নেননি সন্তানরা।

    পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের জয়ঘোড়া গ্রামের আলাউদ্দিন আকনের স্ত্রী জয়নব বিবি। বৃদ্ধা জয়নব বিবি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। বিছানায় বসেই খাবার খান আর বিছানাতেই মল ত্যাগ করেন।

    তাই মায়ের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমিক ছেলে মোঃ আরিফ ও ছেলে বউ মোসাঃ কুলসুম বিবি এক অটো ড্রাইভারের মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েক মাস আগে দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষীপুরের টিটিসি ট্রেনিং সেন্টার এলাকার সড়কে ফেলে যান। উঠতে ও বসতে পারেননা তিনি। বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলেন তিনি। আবার যেখানেই খাচ্ছেন সেখানেই মল ত্যাগ করছেন তিনি। গন্ধে সহজে কেউ কাছে ভিড়তে চাননা তার।

    এ ঘটনাটা নজরে এলে তৎক্ষণাৎ দশমিনা থানার ওসি মোঃ জসিম ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে সাংবাদিকদের সহায়তায় ওসি নিজে উদ্যোগী তার সহকর্মী এস আই মো. ইমানুল ইসলাম ইমন, এসআই মো. মেহেদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজ হাতে গোসল করান। কিনে দেন নতুন কাপড়। খাবারও কিনে দেন। পরে পরম যত্নে ও মমতা দিয়ে পুলিশের ভ্যানে দুপুরের দিকে দশমিনা হাসপাতালে ভর্তি করান তাকে। বর্তমানে দশমিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বৃদ্ধা মা ।

    মোসা. সাথী বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, তিনিসহ এলাকার বেশ কয়েকজন মহিলা দীর্ঘ দুই মাস ওই বৃদ্ধাকে মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যান। কিন্তু মলের গন্ধের কারণে অনেকে কাছে যেতে চাননা। রাস্তার পাশে পড়ে থেকে কান্না করে দিন কাটান।

    বৃদ্ধা জয়নব বিবি জানান, রুনা নামে তার এক মেয়েকে তিনি দশমিনা উপজেলার পশ্চিম আলীপুরা বিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার মেয়ের সাথে থাকতে চান। ছেলের কাছে ফিরতে চাননা তিনি। তবে সেই মেয়েও নাকি খোঁজ খবর নেয়নি। মাটিতে শুয়ে থাকায় পিপড়ের কামড়ে অনেক কষ্ট হত বলে কেঁদে দেন।

    এদিকে ওসির এ মানবিক কর্মকান্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। দশমিনা থানার ওসি মো. জসিম বলেন, স্বাধীনতার প্রথম বুলেট নিক্ষেপ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে দিনরাত অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। মানুষের সেবা করতে পারার মতো আত্মতৃপ্তি আর কিছুতেই হয় না। আমি নিয়মিত ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর রাখছি। তিনি সুস্থ হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

    সুত্রঃ দৈনিক অালোকিত ৭১ সংবাদ প্রত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক দশমিনা থানার ওসি মোঃ জসিম ও এ এস আই সহ সাংবাদিকদের সবাইকে ধন্যবাদ জানায়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ