• রংপুর বিভাগ

    সুফল মিলছে না রংপুরে চার কোটি টাকার ২ ফুটওভার ব্রিজে

      প্রতিনিধি ১৮ আগস্ট ২০২২ , ৩:১১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

    সুফল মিলছে না রসিকের চার কোটি টাকার ২ ফুটওভার ব্রিজে রংপুর নগরীতে যানজট নিরসন ও পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু উদ্বোধনের তিন মাস হলেও এখন পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সুফল দেখছেন না নগরবাসী। বরং ব্রিজের নিচের অংশজুড়ে কিছু ব্যবসায়ীর অবৈধ দখলের কারণে আগের চেয়ে সড়কে বেড়েছে যানজট। রাস্তা পারাপারে বেড়েছে ভোগান্তিও।

    নগরের সচেতন মহল ফুটওভার ব্রিজ দুটি নির্মাণে যথাযথ স্থান নির্ধারণ করতে না পারাসহ সিটি করপোরেশনের সঠিক পরিকল্পনার অভাবকে দুষছেন। তবে সিটি মেয়র বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রোড ডিভাইডারের মাঝে ফেন্সিং দিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা হবে। আর এটা সম্ভব হলে পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য হবেন।

    রংপুরের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়কে এবং সিটি করপোরেশন ভবনের প্রবেশ ফটকের কাছে অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। ব্রিজ দুটির ফাউন্ডেশন কংক্রিট ও পাটাতনসহ অন্যান্য অংশ স্টিলের। মূলত যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে নিজস্ব অর্থায়নে ফুটওভার ব্রিজ দুটি নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন।

    সূত্র আরও জানিয়েছে, ফুটওভার ব্রিজের জন্য কাঙ্ক্ষিত জমি না পাওয়াতে বিকল্প স্থান হিসেবে সিটি কর্পোরেশন ভবনের পাশেই একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড়ে নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঁচ ফুট জমি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বাধ্য হয়ে সিটি কর্পোরেশন ভবনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হতো। কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেতে প্রায় সাত মাস বিলম্ব হওয়ায় ফুটওভার ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়।

    এ বছরের ২৮ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটির উদ্বোধন করেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সম্প্রতি টার্মিনাল এলাকার ব্রিজটিও পথচারীদের পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু উদ্বোধনের গত তিন মাসে ফুটওভার ব্রিজ পারাপারে সাধারণ পথচারীদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রিজ দুটি নির্মাণ করা হলেও সড়কের ডিভাইডার রাখা হয়েছে উন্মুক্ত। কোনো ফেন্সিং না থাকায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে ইচ্ছেমতো রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম সিটি বাজার সংলগ্ন সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীনতার কারণে এই সড়কে থাকা ফুটওভার ব্রিজটি শুধু সৌন্দর্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সিটি বাজার ও সিটি কর্পোরেশনসহ রাস্তার দুপাশ থেকে মানুষজন বেপরোয়াভাবে পারাপার হচ্ছেন। কোনো বাধ্যবাধকতা বা প্রতিবদ্ধকতা না থাকায় কারো মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে নেই তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

    তবে পথচারী বা সাধারণ মানুষ এই ব্রিজের সুবিধা না নিলেও কিছু ব্যবসায়ী ফুটওভার ব্রিজের নিচে গড়ে তুলেছেন ফলসহ বিভিন্ন পসরার দোকান। আর এতে করে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ফুটওভার ব্রিজের দুপাশে যানজট, মানুষের জটলা আর রাস্তা পারাপারে বেড়েছে ভোগান্তি।

    সিটি বাজারের সামনে কথা হয় নুরুল হুদা নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি খরচের ব্যাগ হাতে নিয়ে ডিভাইডারের ফাঁকফোকর হয়ে রাস্তার ওপারে যাচ্ছিলেন। ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করার চেষ্টা করা হলে ক্ষুব্ধ হন তিনি। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে নুরুল হুদা বলেন, আমার ছবি তুলে কী হবে? বরং ফুটওভার ব্রিজের ছবি তোলেন। ওই ব্রিজ দিয়ে তো কেউ পারাপার করে না। সবকিছুর একটা সিস্টেম আছে, এখানে সেটা মানা হয়নি। এ কারণে এটি কাজেও আসছে না।

    প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সিটি বাজারের পাশে জেলা পরিষদ কমিউনিটি সুপার মার্কেট থেকে ফুটওভার ব্রিজে মানুষের পারাপার দেখার চেষ্টা করা হয়। এ সময়ে হাতেগোনা প্রায় ৫০ জনকে ব্রিজের উপরে উঠতে দেখা যায়। যাদের বেশির ভাগই ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারের জন্য নয়, তারা উঠেছিল সেলফি তুলতে। দুই ঘণ্টায় এমন দৃশ্য দেখা গেলেও বর্তমানে এটি সেখানকার নিত্যদিনের চিত্র।

    ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ফাহিম মুরশেদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে সুপার মার্কেটে এসেছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের যানজট ক্যামেরাবন্দি করতে ফুটওভার ব্রিজের উপরে উঠেছি। এখান থেকে সেলফি অনেক সুন্দর হয়। আর শহর দেখতে বেশ ভালো লাগে।

    এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা বেশির ভাগ সময় রাস্তার ওপর দিয়েই পারাপার হয়ে থাকি। এটা যদি ক্যান্ট পাবলিক স্কুল মোড়ের মতো হতো, অর্থাৎ ডিভাইডারে ফেন্সিং থাকত, তাহলে সবাই ব্রিজের উপর দিয়েই পারাপার হতো। আমরা চাই নগরীতে এমন আরও ফুটওভার ব্রিজ হোক, তবে সেটা যেন পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়। নগরীর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিপরীতে টার্মিনাল মৎস্য আড়তের কাছে কথা হয় আহসান হাবিব নামে একজনের সঙ্গে। তিনি উত্তর বাবুখাঁ এলাকায় থাকেন।

    তরুণ এই সমাজ উন্নয়নকর্মী বলেন, টার্মিনালে সব সময় যানজট থাকবেই। ওইখানে ফুটওভার ব্রিজর নিচে বাস থামিয়ে বেশির ভাগ বাসশ্রমিকেরা যাত্রী ওঠা-নামা করে আসছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই মহাসড়ক পারাপারে চরম দুর্ভোগের সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ছে। ফুটওভার ব্রিজ আছে কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় সেটি কোনো কাজে আসছে না। তাছাড়া ওই সড়কের পুরো ডিভাইডার অরক্ষিত এবং রেলিং নেই। যার কারণে জীবনে ঝুঁকি নিয়েই মানুষজন র

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ