• শিক্ষা

    সাত কলেজের খাতা মূল্যায়নে নানা অনিয়ম, কাঠগড়ায় ঢাবি শিক্ষক!

      প্রতিনিধি ৪ আগস্ট ২০২২ , ১১:৩১:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ গড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত শিক্ষকের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে পরীক্ষার ট্যাবুলেশন তৈরির কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ফলে আটকে আছে পরীক্ষার ফলাফলও।

    জানা যায়, অধিভুক্ত ৭ কলেজের ৪র্থ বর্ষ বি এ (সম্মান) ২০২০ সালের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের ১৫০টি খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পান অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হক। পরে তিনি গত জুন মাসের ১৪ তারিখে এই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও ট্যাবুলেশন ১ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানের নিকট খাতা জমা দেন। কিন্তু সেখানে বাঁধে বিপত্তি! কারণ তার জমাকৃত খাতা ছিল মাত্র ৫৯টি! ১৫০টি খাতার মধ্যে বাকী খাতাগুলো তিনি জমা দেননি। এছাড়া যে খাতাগুলো জমা দিয়েছেন, সেখানেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। ফলে পরীক্ষার ট্যাবুলেশন তৈরির কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পরে এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বরাবর গত ২৭ জুন একটি অভিযোগপত্র জমা দেন তারা। সেই অভিযোগের একটি কপি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

    অধিভুক্ত ৭ কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ বিএ (সম্মান) পরীক্ষা কমিটি ২০২০ এর সভাপতি ও ট্যাবুলেটর-১ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান ও কমিটির সদস্য এবং ট্যাবুলেটর-২ এর দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, কোর্স নং-২৪১৬০৭ এর পরীক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হককে মোট ১৫০টি খাতা মূল্যায়নের জন্য দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৪/৬/২০২২ ইং তারিখে সভাপতির নিকট তার জমা দেয়া নম্বরপত্রের মাত্র ৫৯টি খাতার নম্বর পাওয়া গেছে। বাকি খাতার নম্বর তিনি জমা দেননি। তাছাড়া উক্ত পরীক্ষকের নম্বরপত্রের কয়েকটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়েছে। নম্বরপত্রে বাংলা ও ইংরেজি সংখ্যার মিশ্রণে নম্বর দেয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া নম্বর সনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে। কোর্স নম্বর লেখার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। নম্বরপত্রে ২৪১৬০৭ ও ২৪২৬১৭- এই দুটি কোর্সের উল্লেখ রয়েছে, যা ট্যাবুলেশনের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি করছে।

    অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, উক্ত পরীক্ষকের জমা দেয়া নম্বরপত্রের হাতের লেখাটি তার অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় জমা দেয়া নম্বরপত্রের হাতের লেখার সাথে সঙ্গতিহীন বলে আমাদের মনে হয়েছে। ফলে নম্বরপত্রটি গ্রহণের বিষয়ে আপনার মতামত জরুরী বলে মনে করছি।

    এতে দাবি জানিয়ে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আটকে থাকা ফলাফল প্রকাশের জন্য উত্তরপত্রের নম্বরসমূহ দ্রুত প্রাপ্তির লক্ষ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক এ অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

    এদিকে, অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এম এ (গ শাখা) ১ম সেমিস্টার ২০২১ সালের পরীক্ষার ৫০৪ নং কোর্সের ১ম পরীক্ষকের ভূমিকায় নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেন তিনি। পরে তার এ কাজের প্রতিকার চেয়ে ২য় পরীক্ষক অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তারের নিকট খাতা দেয়া হলে সেখানেও তিনি অনিয়ম করে তার দেখা খাতার সাথে মার্কশিটও ২য় পরীক্ষকের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

    নিয়মের লঙ্ঘন হওয়ায় অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার তার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে গত ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি দেন। চিঠির সাথে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দেন।

    চিঠিতে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ (গ শাখা) ১ম সেমিস্টার ২০২১ সালের পরীক্ষার ৫০৪নং কোর্সের ২য় পরীক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হই। ২য় পরীক্ষক হিসেবে উক্ত পরীক্ষার উত্তরপত্রের একটি প্যাকেট গত ২৩/০৬/২০২২ তারিখে বিভাগ থেকে সংগ্রহ করি। কিন্তু উত্তরপত্রের প্যাকেটটি খোলার পর সেখানে ১ম পরীক্ষকের (অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হক) হাতের লেখা একটি নম্বরপত্র পাই। উক্ত নম্বরপত্রটিতে লেখা পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বর ও কোর্স নম্বর, আমাকে মূল্যায়ন করতে দেয়া খাতায় উল্লেখিত রোল নম্বর ও কোর্স নম্বর অভিন্ন। এমতাবস্থায় এই উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করা নীতি বর্হিভূত বলে আমি মনে করছি এবং তা মূল্যায়নে অপারগতা প্রকাশ করছি।

    চিঠিতে অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার আরো লিখেন, একজন পরীক্ষক কর্তৃক এভাবে নম্বরপত্রসহ ২য় পরীক্ষককে উত্তরপত্র প্রেরণ করা নিয়মবর্হিভূত এবং একটি গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি। কাজেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার বিবার্তাকে বলেন, অধিভুক্ত ৭ কলেজের ৪র্থ বর্ষ বি এ (সম্মান) ২০২০ সালের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের ফলাফল তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়েছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষক ১৫০টি খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পেয়েও জমা দেন মাত্র ৫৯টি। এছাড়া এই ৫৯টি খাতার ফলাফলেও নানা অসঙ্গতি ছিল। তাই আমি ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি স্বাক্ষর করে নানা অনিয়মের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছি।

    তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে এই ফলাফল আটকে আছে আমরাও পড়েছি চরম ভোগান্তিতে।

    ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১ সালের পরীক্ষার ৫০৪নং কোর্সের ২য় পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১ম পরীক্ষকের নিয়ম বহির্ভূত কর্মের প্রতিকার চেয়ে ২য় পরীক্ষক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক ওই খাতাগুলোর সাথে তার দেখা খাতার নম্বরের মার্কশীটও আমাকে সরবরাহ করেছেন। এটা তো

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ