• Uncategorized

    বাউফলে দুর্নীতিবাজ তহশীলদার আশরাফের অবৈধ সম্পদের; তদন্তে ফেসে যেতে পারেন বললেন,ভূমি কমিশনার।

      প্রতিনিধি ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৬:৫৭:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন)পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ

    পটুয়াখালী বাউফলে বর্তমান কর্মরত সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড়সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন।

    জানা গেছে, আশরাফ আলী খান ১৯৯৪ সালে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন। তখন তার সর্বসাকুল্যে বেতন ছিল ৪ হাজার টাকা। পটুয়াখালী জেলার দশমিনা, মির্জাগন্জ, কালাইয়া, গলাচিপা ও কলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ছিলেন।

    তার গ্রামের বাড়ি বাউফল উপজেলার নওমালা ইউপির বটকাজল গ্রামে। বাবা আবদুর রহমান একজন দরিদ্র কৃষকও ছিলেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় তহশীলদার আশ্রাব আলী। আর্থিক অনটনের মধ্যেই পরিবারের হাল ধরেন তিনি। চাকুরীতে যোগদানের ১ বছরের মধ্যেই অবৈধ ভাবে গড়া অর্থের ঝনঝনানি শুরু হয়।

    দরিদ্র পরিবারের থেকে উঠে আসা আশরাফ গড়ে তোলেন কোটি টাকা ব্যায়ে সুরম্য প্রাসাদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসাসহ নামে বেনামে একাধিক বাড়ি। চাকুরীর কিছুদিন পরেই একই এলাকার কাঞ্চন আলী মৃধার মেয়ে মোর্শেদাকে বিয়ে করেন। কৃষক কাঞ্চন আলী এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোন রকমে মেয়েকে বিয়ে দেন।

    বিয়ের পরে স্ত্রী মোর্শেদা বেগমও মালিক হন শত একর জমি ও একাধিক বাড়ির মালিক। জেলা উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে একাধীক বাড়িসহ নামে বেনামে ক্রয় করেছেন এসব সম্পত্তি। এরমধ্যে অভিযোগ উঠে নানা ধরনের অনিয়মের, ভূমি উন্নয়ন কর, দাখিলা, মিউটিশন, কলম দিয়ে লিখে জাল পর্চা ও তদন্তদের নাম করে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে নিতেন মোটা অংকের উৎকোচ

    । আশরাফ আলী চাকুরীর ১ বছরের মধ্যেই বাবার খুরকুটার ঘর ভেঙে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরী করেন বসতবাড়ি। ১৯৯৬ সালে ক্রয় করেন প্রায় নামে বেনামে ৫০ লক্ষ টাকার চাষাবাদি জমি। স্বামীর ঘুষ দুনীতির সুবাদে স্ত্রী মোর্শেদা বেগমেরও ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়, তিনিও রাতারাতি কুটিপতি বনে যান ꫰ যেমন হয়েছেন একাধিক বাড়ির মালিক তেমনি প্রিয় স্ত্রীর নামে ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর স্টান্ডার্ড ব্যাংকে ১০লক্ষ টাকা এফডিআর করা হয়। যার হিসাব নং ০৯৯৪২৮।

    এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড পটুয়াখালী সদর শাখায় ১০ লক্ষ টাকা এফডিআর রয়েছে। সম্প্রতি ছেলেকেও লন্ডনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০০৫ সালে জেলা শহর পটুয়াখালী সদরে ১৫ লক্ষ টাকায় তুষার ভিলা নামক একটি বাড়ি স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন।

    কিন্তু দলিল করার সময় প্রকৃত মূল্য গোপন রেখে ৮লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। আয়কর খোলার সময় সেখানে উল্লেখ করেছেন, শ্বশুর বাড়িতে বসে স্ত্রী হাঁস মুরগি পালন করে অর্থ সংগ্রহ করে সেই টাকা দিয়ে ওই বাড়িটি ক্রয় করেছেন।

    ২০০৬ সালে জেলা শহরের মৃধা ব্রিজ সংলগ্ন রিয়াজুল জান্নাত মসজিদ সংলগ্ন চার শতক জমি ২০লক্ষ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেন। গ্রামের বাড়িতে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আসাদুজ্জামান তুষার নূরানী এবং হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণ করছেন।

    এখনও যার কাজ চলমান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু অংশ সরকারি খাস সম্পত্তি বলে বাউফল উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিস সূত্রে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কোন আয় না থাকলেও প্রতিমাসে ব্যয় করতে হয় ২০ হাজার টাকা।

    ২০১৯ সালে জেলার চৌরাস্তা এলাকায় ৪৫লক্ষ টাকার ৯ শতাংশ জমি করেন আশরাফ আলী খান। যাহার জেএলনং ৩৮, এসএ খতিয়ান নং ২১২৩, দাগ নম্বর ৭৯৬ ৮০৪। সম্প্রতি আউলিয়াপুর এলাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান কবির হোসেনের মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জমির বায়না চুক্তি করেন। তার বর্তমানে বেতন ২৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। এ বেতন দিয়ে কি ভাবে তিনি মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা পরিচালনা করছেন ?

    আবু জাফর নামে একজন অভিযোগ করেন, দিয়ারা জরিপ ৭২৪ ও ৭৬৫ নং দাগের নামজারি জমা খারিজ খতিয়ান নং ১৪৮৩ সঠিক নয় মর্মে তহশীলদার আশ্রাব আলী খান ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ২০ হাজার টাকা দিলে সেটি সঠিক হয়ে যায়।

    কালাইয়া ইউপির আবুবকর জানান, ৪৪ শতাংশ ধানি জমি মিউটিশন করতে ১৪ হাজার টাকা নিলেও এখনও তার অফিস আমাকে মিউটিশন দেই-দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এরকম শত পরিবারের অভিযোগ রয়েছে নামজারি ও জমা খারিজ কেসের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিতেন এই ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আশরাফ আলী খান।

    তহশীলদার আশ্রাব আলী খানের অনিয়মের অভিযোগে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটি এখনও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়নি বলে জানা গেছে।

    এবিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আশরাফ আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার এক স্বজনের সাথে আমার বিরোধ থাকায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এখন কোন সমস্যা নেই, আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়েছে।

    আশরাফ আলী খানের স্ত্রী মোর্শেদা জানান, আমার ভূসা মালের ব্যবসা ছিলো, কর্মচারী রেখে সেই দোকান পরিচালনা করে টাকা জমিয়েছি ও স্বামীর দেওয়া সংসার চালানোর টাকা ব্যাংকে জমিয়ে জমি ক্রয় করেছি।

    এবিষয়ে বাউফল উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি আনিচুর রহমান বালি বরিশাল সমাচার প্রতিবেদককে বলেন, সরকারী সম্পত্তির কিছু অংশে মাদ্রাসা অবস্থিত। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্বল্প সময়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া সহজ না; তবে দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে এমনটাই জানাযায়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ