• রাজশাহী বিভাগ

    পাবনার কাশিনাথপুরে সাড়া ফেলেছে তিন বন্ধুর ‘পথ পাঠাগার’

      প্রতিনিধি ১৯ মার্চ ২০২২ , ৭:২০:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

    পাবনার কাশীনাথপুরে স্থাপিত ‘পথ পাঠাগার’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিষ্ঠার ১৫ দিনেই প্রায় হাজারটি বই জমা হয়েছে এ পাঠাগারে। এখান থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাদের পছন্দের বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আশপাশের দোকান মালিকরাও অবসরে পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়ছেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করে পথচারী নিজেদের পছন্দের বই পাঠাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং পড়া শেষে আবার ফেরত দিয়েও যাচ্ছেন।

    ব্যতিক্রমধর্মী এ পাঠাগারের মূল উদ্যোক্তা কবি ও প্রভাষক আলাউল হোসেন। তার দুই সহযোগী বন্ধু হলেন- প্রভাষক সালাউদ্দিন আহমেদ এবং শিক্ষক ফজলুর রহমান। মূলত বই পাড়ায় অভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই তাদের এ চেষ্টা।
    গত ২৩ জানুয়ারি থেকে এ পথ পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়। ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে রাস্তার পাশে একটি ভবনের দেওয়ালে শেল্ফ তৈরি করা হয়। ঝড়-বৃষ্টি হলে যাতে পানি না ঢোকে এজন্য মোটা থাইগ্লাস দেওয়া হয়েছে সামনের দিকে। এর অর্থায়ন করেছে কাশীনাথপুর এলাকার স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

    স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পথ পাঠাগারটি সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন পার্শ্ববর্তী একটি দোকানের মালিক সুরুজ আলী ও একটি দোকানের ম্যানেজার আবির মাহমুদ। এছাড়া আশপাশে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে যাচ্ছেন।প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাঠাগারটি সবার জন্য খোলা থাকে। সকালে খোলা ও সন্ধ্যার পর পাঠাগার বন্ধ করে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

    কবি আলাউল হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক বই দিয়ে পাঠাগারটির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর কলি প্রকাশনী ও প্রয়াস পাবলিক লাইব্রেরি থেকে দেওয়া হয় দু’শতাধিক বই। এরপর থেকে প্রায় দিনই এলাকার অনেক মানুষ বই উপহার দিয়ে পাঠাগারটিকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন। প্রতিষ্ঠার ১৫ দিনেই প্রায় এক হাজার বই জমা হয়েছে এ পথ পাঠাগারে। তিনি আরও বলেন, বইপড়া ছাড়া মানব জীবনের ব্যর্থতা, শূন্যতা ও হতাশা থেকে পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় নেই।

    আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল বই (গল্পের বই) পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটাতো অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এখন সে জায়গা দখল করেছে ফেসবুক, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউব ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীদের মননশীল চর্চা একেবারেই কমে গেছে। ফেসবুক, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউবসহ অন্য সব সামাজিক মাধ্যমগুলোর অবাধ অপব্যবহার এ প্রজন্মকে অসহনশীল, অশালীন, অমার্জিত এমনকি অসামাজিক ও হিংস্র করে তুলছে। নতুন প্রজন্মকে এ পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায় হলো হাতে বই তুলে দেওয়া।

    পঠন-পাঠন ছাড়া তরুণদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করানো যাবে না। এ দিক বিবেচনায় আমি পথ পাঠাগারের উদ্যোগ নিয়েছি।’‘পাঠাগারটি শুরুর পরে এ পর্যন্ত কয়েকশ’ পাঠক বই নিয়ে গেছেন এবং ফেরত দিয়েও যাচ্ছেন। পাঠকদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এখানে অনেক শিশুতোষ বই থাকায় কিছু শিশু পাঠকও তৈরি হয়েছে। পাবনার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পথপাঠাগার গড়ে তুলতে চাই।

    পাঠাগারের পাশেই অবস্থিত দোকান মালিক মীর আব্দুল বারেক বলেন, ‘পাঠাগার মানেই কিছু নিয়ম কানুন থাকে, কিন্তু এই পাঠাগারটি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বই নিতে বা ফেরত দিতে কারও শরণাপন্ন হতে হচ্ছে না। নেই কোনো সময়ের সীমাবদ্ধতা। এরকম একটি আয়োজন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই, ভাবতেই ভালো লাগছে। অবসরে দোকানে বসে পছন্দের বই পড়তে পারছি।’

    পাঠাগারটি গড়ার অন্যতম এক সহযোগী শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘স্কাইলার্ক পথ পাঠাগার এ এলাকার বেশকিছু তরুণের মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই সব বয়সী পাঠকের আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত।
    পথ পাঠাগারের আরেক সহযোগী স্কাইলার্ক স্কুলের সভাপতি প্রভাষক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষকে আলোকিত করার স্বপ্ন দেখাতেই পথ পাঠাগারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

    একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে বইপড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সহজেই সমাজ পরিবর্তন সম্ভব।’পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ও কাশীনাথপুর এলাকার বাসিন্দা ড. আমিন উদ্দিন মৃধা বলেন, আমি পাঠাগারটি পরিদর্শন করেছি। এর কার্যক্রম দেখে অভিভূত। এটি আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করছি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ