• গণমাধ্যম

    পাবনার একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীন সাংবাদিক রণেশ মৈত্র আর নেই

      প্রতিনিধি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১:১৭:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    আসাদুজ্জামান বিকাশ:

    পাবনা জেলার সাঁথিয়ার উপজেলার কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রণেশ মৈত্র পরলোক গমন করেছেন। আজ সোমবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২খ্রিঃ ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে ঢাকা পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

    বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুলে থেকে এস এস সি পাস করেন।১৯৫৫ পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। রমেশ মৈত্র জীবন সংগ্রাম তেকে শিক্ষা নিয়েই দেশের অসহায় মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন।

    ১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এর পরে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে।১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজকরেন। ১৯৬১ সালে পাবনায় মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব -পাকিস্তান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়।

    সেই বছরেই পাবনা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রণেশ মৈত্র স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ও ২ ছেলে- ৩ মেয়ে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য রণেশ মৈত্র কে ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

    ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সেই বছরেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৬৭-এর দিকে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপে যোগদান করেন।

    দীর্ঘদিন ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা জেলে বন্দি, রাজশাহী জেল থেকে পরীক্ষা উপলক্ষে রণেশ মৈত্রকে ঢাকা জেলখানায় নেওয়া হয়। জেলখানার ভেতর প্রতিদিন সকাল-বিকালে হাঁটতেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ভালোবেসে তাকে হাঁটার সঙ্গী করে নেন। এরপর থেকে প্রতিদিন তার সঙ্গে হাঁটতেন। হাঁটতে হাঁটতে তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হতো।

    বঙ্গবন্ধু রচিত জেলখানার ডায়েরী বাঙলা একাডেমী প্রকাশিত ‘কারাগারের রোঁজনামচায়’ রণেশ মৈত্রের নাম ছয়বার উল্লেখ আছে (দ্রষ্টব্য উক্ত গ্রন্থের ৮৫, ৯০, ১১৮, ১৩৮, ১৫৭ এবং ১৬১ পৃষ্ঠা)। ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে নানা বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। রণেশ মৈত্র মৃত্যুর খবর শোনার পরে পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু মহোল শোকের মাতন বইছে। পাবনা প্রেস ক্লাব, কাশীনাথপুর প্রেস ক্লাব ৬৬৮২ পাবনা সহ সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক বৃন্দ পরিবারের গভীর শোকহত।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ