• কৃষি

    পটুয়াখালীতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় পর কোটি টাকার অবৈধ লেন দেন সমুদ্রে মাছ ধরছে জেলে

      প্রতিনিধি ১৪ জুলাই ২০২৩ , ৮:২৮:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু,হেলাল আহম্মেদ রিপন-স্টাফ রিপোর্টার:

    পটুয়াখালীতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় পরতে পরতে কোটি টাকার অবৈধ লেন দেনের পর সমুদ্রে মাছ ধরছে জেলেরা। দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকার আরোপিত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন নেই কলাপাড়া-কুয়াকাটা উপকূলে। ইলিশ প্রজনন মৌসুমে কর্মবিমূখ হয়ে পড়া জেলেদের সরকার বিশেষ সহায়তার চাল দেয়ার পরও উপকূলের অসংখ্য ছোট ইঞ্জিন নৌকা, ফাইবার ট্রলার এবং গভীর সমুদ্র গামী মাঝারি ও বড় সাইজের মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্রে মাছ শিকার করছে। একশ্রেনীর অসাধু মৎস্য আড়ৎ মালিকরা সিন্ডিকেট করে কোটি টাকার লেনদেনে তাদের আড়তে মাছ সরবরাহকারী জেলেদের অবৈধ এ সুযোগ করে দিয়ে অভিযুক্ত জেলেদের সাথে আহরিত মাছ দিয়ে সমন্বয় করছেন। এতে দেশের মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন অসাধু আড়ৎ মালিকসহ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা। যেসব জেলে আড়ৎ মালিকের সুবিধাভোগী তালিকায় নেই তারা কেউ মাছ ধরলে কেবল তাদের উপরই প্রয়োগ হচ্ছে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ আইনের খড়গ, এমন অভিযোগ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

    সূত্র জানায়, সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এসময় কর্মবিমূখ হয়ে পড়া জেলেদের প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি করে মানবিক সহায়তার চাল দিলেও নিষেধাজ্ঞা উপে¶া করে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার যেন কিছুতেই থামছেনা। চালু রয়েছে কলাপাড়া, কুয়াকাটা উপকূলের বেশ কিছু বরফকল। যারা ম্যানেজ করে চলছে তারা আইনের খড়গের কবলে পড়ছেনা, তাদের কাছে অভিযানের তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে অভিযানের আগে। অসাধু জেলেদের সাথে নৌ-পুলিশের এমন গোপনসখ্যতার অভিযোগে বদলী করা হয় কুয়াকাটা নৌ-পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদকে।

    এছাড়া কুয়াকাটা উপকূলের ধোলাই মার্কেটে মৎস্য বিভাগের মেরিন কর্মকর্তা আশিকুর রহমান কোষ্ট গার্ড সদস্যদের নিয়ে তার গুডবুকে না থাকায় একটি বন্ধ মাছের আড়তের শাটার ভেঙ্গে অভিযান চালালে প্রতিবাদ করেন মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি হারুন তালুকদার। যা বাক-বিতন্ডায় রূপ নিলে দফারফা শেষে জনতার চোখ এড়াতে নামমাত্র জব্দকৃত মাছ ১ হাজার টাকা নিলামে বিক্রী করে টাকা জমা দেয়া হয় সরকারী কোষাগারে। এভাবেই বাবলাতলা, চাপলি, ধোলাইমার্কেট, গঙ্গামতি, ঢোস, বালিয়াতলী, আশাখালী, কুয়াকাটা, মহিপুর-আলীপুর মৎস্যবন্দর থেকে আহরিত মাছ প্রকাশ্যে নৌ ও সড়ক পথে বিক্রীর জন্য চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

    জেলেদের দাবি, ৫-৭ সদস্যের পরিবারে সরকারের দেয়া চাল দিয়ে তাদের কিছুই হয়না। চাল বাদে অন্য নিত্য পণ্যগুলো কিনতে টাকার প্রয়োজন। এজন্য আড়তদারদের কাছ থেকে তাদের দাদন নিতে হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার এসময় বরগুনা, লক্ষিপুর, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম ও ভোলার জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরছে। বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে ভারতের জেলেরাও প্রতিনিয়ত মাছ ধরছে।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা উপকূলের ইঞ্জিননৌকা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা, ফাইবার ও ছোট ট্রলার প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা এবং মাঝারি ও বড় সাইজের ট্রলার প্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সমুদ্রে নির্বিঘ্নে মাছ শিকারের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছেন আড়ৎ মালিক সিন্ডিকেট। যাতে নদী, সমুদ্র ও সমুদ্র মোহনায় দেড় বাই দুই ইি ফাঁসের ডান্ডি মাছের জাল, তিন ইি বাই সাড়ে তিনইি ফাঁসের ইলিশ জাল ও হাফ ইি বাই হাফ ইি চিংড়ি মাছ শিকারের জাল

    ব্যবহার করে নির্বিঘেœ মাছ শিকার করতে পারে জেলেরা। আর এসব তথ্য যাতে গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে না পড়ে এজন্য প্রভাবশালী কিছু সাংবাদিক ও তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন আড়ৎ মালিক সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মৎস্য বিভাগের মেরিন ফিশারী কর্মকর্তা আশিকুর রহমানের সাথে মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হারুন তালুকদারের বাক-বিতন্ডার বিষয়টি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তার অফিসে হারুন তালুকদারের সাথে সমš^য় করে দেন। এছাড়া সমুদ্র উপকূলে নৌ-পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে মৎস্য আড়ৎ সিন্ডিকেটের তদ্বিরে।

    এবিষয়ে ধোলাই মার্কেটের আড়ৎদার মো: ওবায়ুদল্লাহ দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, অভিযানের তথ্য আমরা আগেই পাই। ওই দিন মৎস্য অফিসার আশিক কোষ্ট গার্ড, নিজামপুর ষ্টেশনের সিসিকে নিয়ে মার্কেটের বন্ধ থাকা রাসেল ফিস আড়তের শাটারের তালা ভেঙ্গে মাছ জব্দ করে। এসময় হারুন তালুকদারের সাথে তার বাক-বিতন্ডা হয় এবং হারুন তালুকদারের মুখে শুনেছি আশিক জিএসএম মেশিন দেয়ার জন্যও ২-৩ হাজার টাকা করে এক এক ট্রলারের জেলেদের কাছ থেকে নিয়েছেন।

    আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়ম হলেও সবাই দোষী নন। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞাআমাদের জেলেরা মানলেও ভারতের জেলেরা মানছেন না। এ কারণে নিষেধাজ্ঞার সুফলআসছে না।

    মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো: আশিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ধোলাই মার্কেটে ১৯ জুন কোষ্টগার্ড, নিজামপুর ষ্টেশনের সিসি মতিউররহমানকে নিয়ে অভিযানের সময় রাসেল ফিস আড়তের শাটারের তালা ভাঙ্গা হয়নি। এর এক পাশ খোলা ছিল। ওই সময় হার“ন তালুকদার নামের এক লোকের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল, যা পরে মিটে গেছে। ওইদিনের অভিযানে ১ হাজার টাকার মাছ নিলামে বিক্রী করা সহ ১ হাজার টাকা জরিমান করার কথা বলেন তিনি।

    কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ পরিদর্শক সেকান্দার মিয়া দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কুয়াকাটা উপকূলে নৌ-পুলিশ সতর্ক ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। তবে তাদের অভিযানে কোন আটক কিংবা জব্দনেই। নৌ-পুলিশ বরিশাল জোনের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন কুয়াকাটানৌ-পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদের বদলী নিয়ে ডিপার্টমেন্টর প্রশাসনিক কিছু বিষয় আছে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ