• স্বাস্থ্য

    দেশে ১৯ হাজার কোটি টাকার টিকা কেনা হয়েছে: স্বাস্থ্য সচিব

      প্রতিনিধি ২৪ নভেম্বর ২০২১ , ৪:০০:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ
    দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য টিকা কিনতে সরকার এ পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। এ অর্থে ইতোমধ্যে ২১ কোটি ডোজ টিকা কেনা নিশ্চিত হয়েছে। আরও ৮ কোটি ডোজ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ খরচের মধ্যে উড়োজাহাজে ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

    রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব টিকা নিয়ে এসব তথ্য দেন। চিকিৎসা ব্যয় বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু জানানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৯ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ প্রথম ডোজ এবং প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ পূর্ণ ডোজ টিকা পেয়েছেন।

    এ সময় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে কোথায় কী ব্যয় হচ্ছে, মানুষের নিজস্ব ব্যয় কমাতে কী করা উচিত, এ দুই বিষয়ে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ।

    প্রবন্ধ উপস্থাপন করে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে মাত্র ৩ শতাংশ রোগী ওষুধ ও ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকেন। অধিকাংশ রোগীকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় এবং ডায়াগনস্টিক থেকে সেবাগ্রহণ করতে হয়। এতে প্রায়ই আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন রোগীরা।প্রবন্ধে বলা হয়, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তিনটি ডাইমেনশন বা দিক রয়েছে। এর প্রথমটি প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া। এ জন্য দেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতির ফলে সাফল্য ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। দ্বিতীয়ত প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের কারণে সৃষ্ট আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। কিন্তু তৃতীয় ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বাংলাদেশ বহুদূর পিছিয়ে রয়েছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬৪ ভাগ। যা ২০৩২ এর মধ্যে ৩২ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল : ২০১২-২০৩২ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে এ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ভাগ। আর সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ হারে রোগীর পকেট থেকে ব্যয়।

    এ সময় আরও উল্লেখ্য করা হয়, রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয়ে প্রধান উৎস হলো ওষুধ খাতে ব্যয়, যা প্রায় ৬৪ ভাগ। হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেওয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে ১২ ও ১১ ভাগ ব্যয় হয়। এ ছাড়া রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাতে ব্যয় হয় ৮ ভাগ।

    গ্রামপর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায়, শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকায় রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রামে যেতে পর্যায়ে বাধ্য হন। তাছাড়া সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ ওষুধ দেওয়া হয় না। রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগও থাকে না।

    ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ জানান, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধ ক্রয়ের সুযোগ থাকে। কিন্তু ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিপণনের ফলে স্বীকৃত ডাক্তারদের পাশাপাশি পল্লি ও হাতুড়ে ডাক্তাররাও ব্যবস্থাপত্রে অতিমাত্রায় ওষুধ লিখে থাকেন। যার কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করা হয় এবং একজন রোগীর ব্যয় বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাক্রিডিটেশন পদ্ধতি না থাকা এবং সেবা মান ও মূল্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় সেবাগ্রহণকারী জনগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

    সেবা বিষয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টি ও কখনও কখনও আস্থার ঘাটতি তাদের দেশের পরিবর্তে বিদেশ থেকে সেবাগ্রহণে উৎসাহিত করে। এভাবে চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক মানুষ ভিটেজমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এমন প্রেক্ষাপটে জরুরি ওষুধের তালিকা সংশোধন ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবস্থাপত্রে প্রটোকল অনুসরণ করা দরকার। এছাড়া কোম্পানির ওষুধের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের পরিবর্তে জেনেরিক নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে এ ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতের জোগানের দিক শক্তিশালী করার পাশাপাশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) বা সামাজিক স্বাস্থ্যবিমা চালু ও সম্প্রসারণের মাধ্যমেও রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় কমানো সম্ভব হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ