• Uncategorized

    জীবননগরে  তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের প্রতিবাদে এলাকাবাসির মানববন্ধন

      প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২০ , ৫:৩৮:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো, রাশেদুল  ইসলাম (রাশেদ)চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি,

    চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে একটি বিদেশী কোম্পানি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। গ্রামবাসির একমাত্র কৃষি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মানে জোর আপত্তি থাকলেও প্রভাবশালী একটি মহল সেখানে যে কোন মুল্যে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মান করতে কোম্পানির পক্ষে মরিয়া হয়ে উঠেছে।  সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের বিরুদ্ধে শনিবার বিকালে এলাকার কৃষকেরা মানববন্ধন করেছেন।এদিকে একই দদিন বিকালে কেম্পানির একজন প্রতিনিধিসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা শনিবার বিকালে গ্রামবাসির সাথে মতবিনিময় করতে গেলে গ্রামবাসির সাফ জবাব জীবন দিব তবুও তাদের একমাত্র  ফসলি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মান করতে দেয়া হবে না। গ্রামবাসির অভিযোগ প্লান্ট নির্মানে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    এলাকাবাসির অভিযোগ থেকে জানা গেছে,জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে একটি কৃষি সমৃদ্ধ মাঠ। যে মাঠের জমিতে ফলে না এমন কোন ফসল নেই। বর্তমান মাঠ শষ্য শ্যামল সবুজে ভরা একটি ফসলি মাঠ।। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে সাইক্লিট এ্যানার্জি লিমিটেড নামের একটি বিদেশী কোম্পানি এলাকার কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষের সহযোিতায় এলাকার কৃষকদের গোপন করে উপজেলা কৃষি বিভাগ দিয়ে একটি জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন নেয় যে,কৃষ্ণপুর মাঠটি মরুভুমি। সে সময় উপজেলা কৃষি বিভাগের এমন প্রতিবেদনের ফলে কোম্পানির তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে তারা দফায় দফায় মাঠটি পরিদর্শন করতে থাকে। কিন্তু এতে নড়েচড়ে বসে এলাকার কৃষকেরা। তারা তাদের ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন। এতে কোম্পানির তৎপরতা থেমে যায়। কিন্তু এলাকার একটি স্বার্থনন্বেষী মহল কোম্পানির নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার মানসিকতায় এলাকার কৃষকদের ও পরিবেশের ভবিষ্যত  ভারসাম্যের কথা চিন্তা না করে সেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানে তৎপর হয়ে উঠেছেন। কৃষকদের দাবি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মান হলে শুধু কৃষি জমিই কমবে তা নয় এলাকার পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলে এলাকায় একদিকে খাদ্য ঘাটতি পড়বে,অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়বে।

    সাবেক ইউপি সদস্য জেহের আলী,ঠান্ডু,শওকত আলীসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন,এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল তাদের নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে আমাদের একমাত্র ফসলি মাঠ,যেখানে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন করা হয়। সেই মাঠের জমিকে মরুভুমি কিংবা পতিত জমি দেখিয়ে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের পাঁয়তারা করছেন। সেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মান করা হলে এলাকায় কৃষি জমি কমে গিয়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে এবং পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটবে। যুক্তি দেখানো হচ্ছে প্লান্ট নির্মান হলে ১০০-১৫০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাহলে আর ৫-৬ হাজার মানুষের কি হবে? তাই গ্রামবাসির জীবন থাকতে প্লান্ট নির্মান করতে দেয়া হবে না।

    সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের জন্য শনিবার বিকালে কৃষ্ণপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসির সাথে মতবিনিময় করতে আসেন কোম্পানির কান্ট্রি ডিরেক্টর জাকির হোসেন,জীবননগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম মোর্তুজা,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল,আওয়ামীলীগ নেতা শাহিনুর মাস্টার,রাজ্জাক শাহ,রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ,কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ- সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তারা আমাদেরকে বলেন জমি আপনাদের,আপনারা জমি দিলে প্লান্ট নির্মান হবে,না দিলে হবে না। আমরা তাদের বলি আমরা জীবন দেব তো জমি দেব না। কিন্তু এখন শুনছি আমাদের বিরিদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে!

    একই ভাবে কৃষ্ণপুরের মেহেরজান বেগম আঞ্জুরা খাতুন,মাহফুজা খাতুনদের দাবি মাঠের ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মান হলে তারা কি খেয়ে বাঁচবে? আমরা জীবন দিয়ে হলেও প্লান্ট নির্মান প্রতিহত করব। মানবতার মা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গ্রামবাসির দাবি তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মান বন্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

    এ ব্যাপারে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ বলেন,আমি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ছিলাম,আমার বক্তব্যে আমি বলেছি এলাকাবাসী না চাইলে প্লান্ট হবে না। আমি এলাকাবাসির মতামতের বাইরে যেতে পারি না। তবে বিষষটি উভয়পক্ষকে ভেবে চিন্তে দেখা দরকার।

    এদিকে সোমবার সকালে উপ- সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি টিম সরজমিনে মাঠটি পরিদর্শন  করেন। এসময় এলাকার নারী- পুরুষেরা তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ চাই না লেখা ব্যানার,প্লাকার্ড হাতে নিয়ে মানব বন্ধন করেন।

    উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন,কৃষ্ণপুর মাঠের জমি আবাদি। সেখানে ভুট্টা,চিনা বাদামসহ সব ধরনের আবাদ হচ্ছে। সেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট হওয়া না হওয়ার ব্যাপারটা কৃষি বিভাগের নয়। কৃষকরা জমি  দিলে হবে,না দিলে হবে না। তবে আমরা আবারও এলাকাটা জরিপ করব।

    জীবননগর  উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন বলেন,কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর চিন্তার কিছু নেই। কৃষকের ক্ষতি হয় সরকার এমন কিছু করবে না।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ