• ঐতিহ্য

    ছুটি কাটাতে কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল

      প্রতিনিধি ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ , ৪:০৫:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো আবুবকর মিল্টন-বাউফল পটুয়াখালী:

    সৈকতের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। কেউ সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউবা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, শামুক-ঝিনুকের দোকান, রাখাইন মহিলা মার্কেটসহ সব জায়গায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। আজ শুক্রবার পর্যটকদের হইহুল্লোড়ে সরব সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত।

    স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনা ও আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছর কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক মন্দা চলছিল। এই পর্যটনকেন্দ্রের আবাসকি হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা এত দিন লোকসান গুনেছেন। এ বছর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে আরও দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে দলে দলে ছুটে আসছেন। এখানে এসে সাগরের জলরাশি দেখা ছাড়াও একই স্থান থেকে উপভোগ করছেন সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের লেবুখালী পয়েন্টে সড়ক সেতু চালু হওয়ায় এবার কুয়াকাটায় পর্যটক বেড়েছে। গত ২৪ অক্টোবর এ সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন বাড়তে থাকে। তবে ডিসেম্বর মাস শুরু হওয়ার পর পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।

    স্থানীয় ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. শাহীন আলম ও এইচ এম গাফফার বলেন, মূলত গত বুধবার থেকেই কুয়াকাটায় মানুষজন আসতে থাকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার অনেক বেশি পর্যটক এসেছেন। আজ শুক্রবার সকালে দূর-দূরান্ত থেকে বাস, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পর্যটকেরা আসেন। শনিবার পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকবে। তিনি আরও বলেন, বেশি পর্যটক আসায় তাঁদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তাঁরা গত দুই দিনে চার লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করেছেন।
    সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টের মালিক জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রিসোর্টটি করেছি। গত বছর এটি ভালোভাবে চালু করব বলে সব প্রস্ততি নিয়েছিলাম। আর তখনই করোনা শুরু হলো। গত প্রায় দেড় বছর আমরা লোকসান গুনেছি। দুদিন ধরে পর্যটক বাড়ায় আমরা খুশি হয়েছি। এতে আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’

    কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, বছরের দুটি ঈদ এবং শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমনের ওপর কুয়াকাটার ব্যবসা-বানিজ্য নির্ভর করে। সেসব বিশেষ দিনেও যদি কোনো পর্যটক না আসেন, তখন ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

    কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেছেন, ‘কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এ মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা যে বাড়বে, তা আগে থেকেই ধারণা করছিলাম। যে কারণে পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি হোটেলই প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিল। এসব হোটেলগুলোর ৮০ শতাংশ কক্ষ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। এসব হোটেলে ১২ হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই অনেক হোটেলই চাহিদা অনুযায়ী কক্ষ দিতে পারছে না। যে কারণে অনেকে ফিরেও গেছেন।’

    কুয়াকাটার একাধিক আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক বলেছেন, গত দেড় বছর ধরে কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসায় মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। এ সময় প্রত্যেকটি হোটেলের মালিকপক্ষকে অন্য খাত থেকে টাকা জোগাড় করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। পর্যটকদের আগমন বেশি হলে বিগত দিনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।

    কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবদুল খালেক বলেন, পর্যটকদের ব্যাপক আগমনের কারণে পর্যটন পুলিশের কয়েকটি দল মাঠে কাজ করছে। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে মাইকিং করা হচ্ছে। পর্যটকদের সমাগম বেশি হওয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারেও আমরা সতর্ক রয়েছি।’

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ